ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

তামিম-সাকিবের রেকর্ড জুটির পর মুশফিক ঝড়

ওয়েস্ট ইন্ডিজের টার্গেট ২৮০ রান

প্রকাশিত: ০৮:৫৭, ২৩ জুলাই ২০১৮

ওয়েস্ট ইন্ডিজের টার্গেট ২৮০ রান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ওয়ানডে সিরিজ আসতেই যেন বদলে গেল বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। টেস্টে যে হতাশা মিলেছে, সেই স্মৃতি যেন দূর আকাশে পালিয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে উজ্জীবিত এক বাংলাদেশ দলকেই মিলেছে। সেই উজ্জীবনী শক্তি মিলেছে আবার তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানের ২০৭ রানের এক রেকর্ড জুটিতে। শেষপর্যন্ত তামিম সেঞ্চুরির (১৩০*) দেখা পেলেও সাকিবের (৯৭) সেঞ্চুরি না পাওয়ার হতাশাই যেন রয়ে গেল। শেষবেলায় মুশফিকের ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৪ উইকেট হারিয়ে ৫০ ওভারে ২৭৯ রান করে বাংলাদেশ। জবাব দিতে নেমে রাত পৌনে দুইটায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ২২.৩ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। শিমরন হেটমেয়ার ২১ রানে এবং জেসন মোহাম্মদ ১ রানে ব্যাট করছিলেন। ক্রিস গেইল ৪০ রান করে রানআউট হন। এর আগে তামিমের ব্যাট থেকে আসে বাংলাদেশের মন্থরতম সেঞ্চুরি। তবুও ওয়েস্ট ইন্ডিজে স্বাগতিকদের বিপক্ষে নিজেদের সর্বোচ্চ সংগ্রহ পেয়ে গেছে বাংলাদেশ। ১ রানে ১ উইকেট হারানোর পর থেকেই তামিম ও সাকিব মিলে দলকে দ্বিতীয় উইকেটে ২০৭ রানের জুটি উপহার দেন। দ্বিতীয় উইকেটে নিজেদের ইতিহাসে যা সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ড। সেই সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রানের জুটি। ১৬০ বলে ১০ চার ও তিন ছক্কায় ১৩০ রানে অপরাজিত থাকেন তামিম। সাকিব ১২১ বলে ৬ চারে ৯৭ রান করেন। দলীয় ২০৮ রানের সময় সাকিব আউট হওয়ার পর মুশফিক ব্যাট হাতে নেমে ১১ বলে ৩ ছক্কা ও ২ চারে ৩০ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলাতে রানের গতি বাড়ে। শেষ ১৪ বলে ৫১ রান তোলা যায়। না হলে তামিম ও সাকিব যতই ভাল নৈপুণ্য দেখান, তারা একটু স্লো খেলাতে ২৫০ রান হবে কিনা, সেই শঙ্কা জেগেছিল। তা পুষিয়ে দেন মুশফিক। টেস্ট সিরিজে যেভাবে ব্যাটসম্যানরা ব্যর্থ হয়েছেন, তাতে ব্যাটসম্যানদের দিকেই বিশেষ নজর ছিল। দলের সেরা ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তামিম, সাকিব, মুশফিক যেন টেস্ট স্মৃতি থেকে শিক্ষা নিয়ে দ্রুতই নিজেদের পাল্টে ফেলেছেন। বদলে ফেলেছেন। তাতে করে দলের স্কোরও মোটাতাজা হয়েছে। সিনিয়ররা দলের হাল ধরেন না, যে কথা উঠে; সেই কথারও জবাব দেয়া হয়। তবে তামিম যদিও সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছেন, কিন্তু তার মন্থরতম সেঞ্চুরি সবার নজরেই পড়েছে। ক্যারিয়ারের দশম সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন তামিম। সেঞ্চুরি করতে তার লেগেছে ১৪৬ বল। ওয়ানডেতে এটাই বাংলাদেশের মন্থরতম সেঞ্চুরি। তামিম সেঞ্চুরি পাওয়ার কিছুক্ষণ আগেই সাকিব সাজঘরে ফেরেন। তাতে করে তামিম-সাকিবের সুন্দর জুটির ইতি ঘটে। তবে তামিম-সাকিবের জুটিতেই দল একটা অবস্থানে পৌঁছায়। বিপদ মুক্ত হয়। দুইজন দুইশ রানের জুটিও গড়েন। দুইজনের ব্যাটে যে দুইশ রানের জুটি হয়েছে, তা নিজেদের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার হয়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেও এটি সেরা জুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে নিজেদের সেরা জুটি পেয়েছে বাংলাদেশ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে আগের সেরা জুটি ছিল ১৭৪ রানের। ২০১২ সালে খুলনায় তৃতীয় উইকেটে সেই জুটি গড়েছিলেন এনামুল হক বিজয় ও মুশফিকুর রহিম। ৩৯তম ওভারেই ১৮১ রান করে আগের জুটিকে পেছনে ফেলেন তামিম ও সাকিব। ওয়ানডেতে এরআগে গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে পঞ্চম উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে সাকিব গড়েছিলেন ২২৪ রানের জুটি। যা ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জুটি। তামিম-সাকিবের ২০৭ রানের জুটিতে দ্বিতীয় স্থানে আছে। দ্বিতীয় উইকেটে আবার বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটির রেকর্ড গড়েছে এ জুটি। ২০১০ সালে ডাম্বুলায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ইমরুল কায়েস ও জুনায়েদ সিদ্দিকের ১৬০ রান ছিল এতদিন বড় জুটি। এবার সেই জুটিতেই ছাপিয়ে গেছেন তামিম ও সাকিব। দুইজনের জুটির শুরুটা অবশ্য একেবারেই ভিন্ন ছিল। তামিম একটু ধীরে ধীরে এগিয়ে যান। সাকিব নিজেকে সামলে নিয়ে দ্রুত এগিয়ে যেতে থাকেন। তামিম প্রথম ২৪ বলে করেছিলেন মাত্র ৪ রান। দুই ব্যাটসম্যান অবশ্য শুরুর দিকে নতুন জীবনও পেয়েছেন। ৮৭ বলে আসে তামিমের অর্ধশতক। আর সাকিবের লাগে ৬৮ বল। ২৬তম ওভারেই দলের স্কোর ১০০ রানে পৌঁছায়। ১০০ রানের জুটি হওয়ার আগে ১১তম ওভারে আলজারি জোসেফের বলে কাভারে ১৭ রানে থাকা তামিমের কঠিন ক্যাচ মুঠোয় নিতে পারেননি ফিল্ডার। ১৪তম ওভারে অ্যাশলি নার্সের বল তামিমের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উইকেটরক্ষকের ঊরুতে লেগে দিক পাল্টানোয় বেঁচে যান তিনি। একটু জন্য ক্যাচ নাগালে পাননি স্লিপে থাকা ক্রিস গেইল। পরের ওভারেই জীবন পান সাকিব। জোসেফের বলে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। কিন্তু হাতে জমাতে পারেননি গেইল। সে সময় ১৫ রানে ব্যাট করছিলেন সাকিব। ‘নতুন জীবন’ পাওয়া ক্রিকেট খেলারই অংশ। এই জীবন পেয়ে দুইজনই গড়েছেন কীর্তি। জুটিতে রেকর্ড গড়েছেন।
×