ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৩ জুলাই ২০১৮

 নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

বরিশাল খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ ও বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের গণসংযোগের দুটি ছবি গত দু’দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ছবি দুটিকে ঘিরে তরুণ ও যুব সমাজ থেকে শুরু করে সচেতন ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। ভাইরাল হওয়া ছবিতে দেখা গেছে, বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার নগরীর বর্ধিত এলাকায় তার ধানের শীষ মার্কার নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে পায়ে কাদা পানি লাগবে এজন্য কর্মীদের দিয়ে ইট বিছিয়ে তার ওপর দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন। অপরদিকে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বর্ধিত এলাকার হাঁটু সমান পানি পেরিয়ে পানিবন্দী বাসিন্দাদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। গত ২০ জুলাই পান্নু মৃধা নামের এক ব্যক্তি প্রথমে ছবি দুটি ফেসবুকে পোস্ট করে লিখেছেন, এবার আপনারা বলুন এই নগরীর নগরপিতা হওয়ার জন্য কাকে বেশি প্রয়োজন? মুহূর্তের মধ্যে দুটি ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হওয়ার পর তরুণ ও যুব সমাজ থেকে শুরু করে সচেতন ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। গত দু’দিনে পুরো নগরীতে ছবি দুটি টক অব দ্য টাউনে পরিণত হয়। নগরীর তরুণ ভোটার তানভীর আহম্মেদ অভি বলেন, সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর মতো একজন হেভিওয়েটের মেয়র প্রার্থী হাঁটু সমান পানির মধ্যেও অবহেলিত বর্ধিত এলাকার বাসিন্দাদের খোঁজখবর নিতে একাধিকবার ছুটে যাওয়ার বিষয়টি ইতিবাচক। যা ইতোমধ্যে সর্বত্র ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। উন্নয়নের স্বার্থে যাকে খুশি ভোট দেবেন ॥ আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ গণসংযোগকালে ভোটারদের উদ্দেশে বলেছেন, ৩০ জুলাই আপনারা নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে যাবেন। সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে আপনারা যাকে খুশি তাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, ডিজিটাল সম্বন্ধে যাদের কোন আইডিয়া নেই, তারাই বলতে পারে ইভিএম পদ্ধতিতে ডিজিটাল কায়দায় ভোট কারচুপি হতে পারে। তিনি আরও বলেন, ইভিএম পদ্ধতিতে একজনের ভোট আরেকজন এসে দেয়া সম্ভব নয়। আর ভোট গণনাটাও তাড়াতাড়ি হয়ে যায়। নৌকার প্রচারে কেন্দ্রীয় নেতা ॥ বরিশাল নগরবাসীর ভাগ্য উন্নয়নে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী করার জন্য গত কয়েকদিন থেকে গণসংযোগ অব্যাহত রেখেছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য মোঃ মিজানুর রহমান। এ্যাডভোকেট বলরাম পোদ্দার জনকণ্ঠকে বলেন, বরিশাল নগরীর উন্নয়ন মানেই সিটি কর্পোরেশনে আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র। প্রয়াত মেয়র শওকত হোসেন হিরণ যার জ্বলন্ত উদাহরণ। হিরণের আগে ও পরে যেসব মেয়র ছিলেন তারা কেউ নগরীতে দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করতে পারেনি। তাই শওকত হোসেন হিরণের উন্নয়নের অসমাপ্ত কাজ সম্পন্নের জন্য ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য তিনি নগরীর সর্বস্তরের ভোটারদের কাছে জোর আহ্বান করেন। ব্যালটের বাক্সটা একটি প্রতিবাদের বাক্স ॥ কেন্দ্রীয় বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান বলেছেন, ব্যালটের বাক্সটা একটি প্রতিবাদের বাক্স। এই প্রতিবাদের বাক্সে জনগণ ভোট দিয়ে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেন। কারণ বুলেটের চাইতেও শক্তিশালী ব্যালট। নগরীর কাশিপুর বাজার এলাকায় বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের ধানের শীষ প্রতীকের পক্ষে গণসংযোগের সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে নোমান আরও বলেন, আমরা চাই একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন হোক। কিন্তু আমাদের প্রার্থীকে সমান সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচন কমিশনার যে কথাগুলো বলেছেন তা সঠিকভাবে পালন করা হলে ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবেন। হুমকি-গুজব ইলেকশনের অংশ ॥ সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাশাপাশি গণসংযোগে নির্বাচনী মাঠ বেশ চাঙ্গা করে রেখেছেন জাতীয় পার্টি মনোনীত লাঙ্গল প্রতীকের মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস। সিটি কর্পোরেশন এলাকার নানান প্রান্তে তিনি (তাপস) দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে গণসংযোগের মাধ্যমে লাঙ্গল প্রতীকের পক্ষে ভোট চাচ্ছেন। প্রচারের মধ্যে জাপা প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস জনকণ্ঠকে বলেন, প্রচারণার মাঠে বিভিন্ন ধরনের হুমকি আসে, গুজবও আছে। এগুলো চলবে, যা ইলেকশনের একটি অংশ। এটি আমরা মোকাবিলা করার চেষ্টা করছি। অর্ধলক্ষ টাকা জরিমানা ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীকে ২৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। শনিবার সন্ধ্যায় নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডস্থ স্টেডিয়াম কলোনিতে মিছিল করা অবস্থায় ঘুরি মার্কার প্রার্থী মজিবুর রহমানকে ১৮ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরবর্তীতে সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে এপিপিএন’র কার্যালয়ের পাশে বিনা অনুমতিতে জনসাধারণের পথরোধ করে পথসভা করার অপরাধে ঠেলাগাড়ি প্রতীকের প্রার্থী মারুফ হোসেন জিয়াকে আট হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। একইসময় নাম্বারবিহীন একটি মোটরসাইকেলে বিভিন্ন প্রার্থীর স্টিকার লাগানোর অপরাধে ৫০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। একইদিন রাত সোয়া ১০টার দিকে নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডে ঘুরি মার্কার সমর্থনে প্রজেক্টরের মাধ্যমে বিভিন্ন দৃশ্য প্রদর্শন ও নির্বাচনী আচারণ বিধিলঙ্ঘনের অভিযোগে কাউন্সিলর মজিবুর রহমানকে ফের ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এ সময় ট্রাকে প্রজেক্টর লাগানোর অপরাধ ও গাড়ির সঙ্গে বৈধ কাগজপত্র না থাকায় চালককে দুই হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। শেবাচিমের অধ্যক্ষকে শোকজ ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সরকারী কর্মকর্তা হয়েও আচরণবিধি লঙ্ঘন করার অভিযোগে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের (শেবাচিম) অধ্যক্ষ ডাঃ ভাস্কর সাহাকে আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় থেকে শোকজ করা হয়েছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং অফিসার হেলাল উদ্দিন জানান, গত ১৯ জুলাই শেবাচিমের অডিটরিয়ামে সরকারী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীর উপস্থিতিতে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। এ বিষয়ে নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের লিখিত অভিযোগ করেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে আইনজীবী নাজিম উদ্দিন পান্না। অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টির সত্যতা যাচাই শেষে শেবাচিমের অধ্যক্ষকে শোকজ করে তিন কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। শোকজ পাওয়ার সত্যতা স্বীকার করে ডাঃ ভাস্কর সাহা বলেন, আইনজীবীর মাধ্যমে শোকজের জবাব দেয়া হবে। ইভিএম প্রশিক্ষণে বাধা ॥ ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের জন্য ভোটারদের প্রশিক্ষণে বাধা দেয়ার ঘটনায় সিটি কর্পোরেশনের ১২ নম্বর ওয়ার্ডের ঠেলাগাড়ি মার্কার কাউন্সিলর প্রার্থী জাকির হোসেনকে ব্যাখ্যা দিতে বলেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। রবিবার সকালে সিটি নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন খান জানান, নির্বাচনে ১২, ২০, ২১ ও ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের ১১টি ভোট কেন্দ্রে ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন। এ লক্ষ্যে ওয়ার্ডগুলোতে ভোটারদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। তিনি আরও জানান, ১২ নম্বর ওয়ার্ডের নূরিয়া কিন্ডার গার্ডেন এবং কিশোর মজলিশ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও সংলগ্ন এআরএস বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নির্বাচন কর্মকর্তারা ২০ জুলাই বিকেলে ভোটারদের প্রশিক্ষণের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি নিয়ে গেলে কাউন্সিলর প্রার্থী জাকির হোসেন ও তার সহযোগীরা প্রশিক্ষণ কাজে বাধা প্রদান করে বিভিন্ন ধরনের হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন করে। প্রার্থী ও তার সমর্থকদের এমন আচরণ সরকার এবং নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রীয় কাজের বিরোধী ও প্রচলিত আইন ও বিধি-বিধান পরিপন্থী। সেজন্য প্রার্থীকে শাস্তির আওতায় আনাসহ প্রার্থিতা বাতিলের জন্য কেন নির্বাচন কমিশনে সুপারিশ করা হবে না তা জানতে পত্র প্রাপ্তির ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লিখিত জবাবসহ উপস্থিত হয়ে রিটার্নিং অফিসারের কাছে ব্যাখা প্রদানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাউন্সিলর প্রার্থীর নির্বাচনী এজেন্টের ওপর হামলা ॥ জামায়াতে ইসলামীর সমর্থিত ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী ও বর্তমান নির্বাচিত কাউন্সিলর এ্যাডভোকেট সালাউদ্দিন মাসুমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্টসহ চার সমর্থকের ওপর রবিবার সকালে হামলা চালিয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকেরা। আহতদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলার ঘটনায় থানা ও নির্বাচন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। . রাজশাহী মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ বরেন্দ্রনগরী রাজশাহীতে এখন ভোটের উৎসব। আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের প্রচার নিয়ে সরগরম পুরো নগরী। নির্বাচনী প্রচারে নেমে প্রার্থীরা যেমন নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তেমনি ভোটাররাও নিজেদের দাবি ও প্রত্যাশার কথা প্রার্থীদের জানাচ্ছেন। নগরীর নারী ভোটাররা চাইছেন গ্যাস সংযোগ সম্প্রসারণ ও নতুন ভোটাররা চাইছেন কর্মসংস্থানের সুযোগসহ উন্নত নগরী। ভোট গ্রহণের আর এক সপ্তাহ বাকি। প্রার্থীদের প্রচারের শেষদিন ক্রমেই ঘনিয়ে আসছে। রবিবার সকাল থেকেই রাজশাহীতে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। কখনও গুঁড়িগুঁড়ি, কখনও ভারি বৃষ্টির ছটা। তবে বসে নেই কোন প্রার্থী। কালো মেঘে ঢাকা আকাশ আর বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়ি বাড়ি ‘হানা’ দিচ্ছেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। সকাল থেকেই ভোটের মাঠে নেমে প্রতিশ্রুতির কথা জানান দিচ্ছেন তারা। বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ভোটের মাঠে নেমে ভোট প্রার্থনার চেয়ে বার বার টেনে আনছেন জাতীয় ইস্যু। বিশেষ করে কারাবন্দী খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি তুলছেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বরাবরই নগর উন্নয়নে তার পরিকল্পনা ও স্বপ্নের কথা বলছেন ভোটারদের কাছে। পিছিয়ে পড়া রাজশাহী নগরীকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথা শোনাচ্ছেন তিনি। বৃষ্টি উপেক্ষা করে রবিবার সকাল থেকে এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন নগরীর ১১ নম্বর ওয়ার্ডের হেতমখা বড় মসজিদের সামনে থেকে গণসংযোগ শুরু করেন। পরে ১০ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ভোট প্রার্থনা করেন তিনি। বিকেলে নগরীর শাহমখদুম দরগা মসজিদ এলাকা ও সংশ্লিষ্ট ৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি গিয়ে নৌকা প্রতীকে ভোট চান এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ইতিহাস ও ঐতিহ্যসমৃদ্ধ রাজশাহী নগরীকে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনায় মেগাসিটি হিসেবে গড়ে তুলতে চান তিনি। এটি তার স্বপ্ন। অতীতে তার করা রাজশাহীর উন্নয়নের উদাহরণ দিয়ে লিটন বলেন, এবার নগরবাসী সুযোগ দিলে তিনি রাজশাহী নগরীর আমূল পরিবর্তন করবেন। সবদিক থেকে নগরীকে আধুনিকায়ন করা হবে। কর্মসংস্থান ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেন লিটন। এ সময় তিনি নৌকা প্রতীকে ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজশাহীতে উন্নয়নের অনেক কিছু বাকি রয়েছে। অনেক কিছু করার ইচ্ছে তার। লিটন বলেন, বিএনপির গণসংযোগে বোমা হামলার ঘটনার মামলায় জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হামলার ব্যাপারে বিএনপি নেতাদের কথোপকথনের অডিও ক্লিপও পেয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইতোমধ্যে জানতে পেরেছে, নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে, জনগণের সহমর্মিতা অর্জন করতে এবং জনগণকে কাছে টানতে বিএনপি নিজেরাই পরিকল্পিতভাবে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। এর মাধ্যমে প্রমাণিত; বিএনপি নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাচ্ছে। আমাদের (নৌকা) বিজয় বুঝতে পেরে তারা নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বুলবুলের প্রচারে খালেদা ইস্যু ॥ এদিকে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল রবিবার সকাল থেকে নগরীর ২৯নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে বিজয়ের মধ্যে দিয়ে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি নিশ্চিত করা হবে। এর পরই আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। এই আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিতাড়িত করে খালেদা জিয়াকে নিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচন করা হবে। সে নির্বাচনে বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সংসদ গঠন করবে বলেও উল্লেখ করেন বুলবুল। রাজশাহীর উন্নয়নের এখন পর্যন্ত কোন পরিকল্পনা কিংবা ইশতেহার দিতে না পারলেও বুলবুল ভোটের মাঠে মত্ত আছেন প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর বিশোদাগারে। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনে বিএনপির জোয়ার দেখে সরকারদলীয় প্রার্থী ভীত হয়ে পড়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ব্যবহার করে বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করাচ্ছেন। নির্বাচন কমিশনকে ভাল ও শক্তিশালী রেফারির দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানিয়ে বুলবুল বলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেফতার করে ঠেকানো যাবে না। বিএনপি মাঠে থেকে নির্বাচন করবে এবং ৩০ তারিখে ভোট জোয়ারের মাধ্যমে ধানের শীষ বিজয়ী হবে। বুলবুল বলেন, নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ও পুলিশ বাহিনী বেপরোয়া হয়ে উঠছে। বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রতিদিন গ্রেফতার করা হচ্ছে। বিএনপি মাঠে আছে এবং নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে মাঠ ছাড়বে বলেও হুঁশিয়ারি করেন তিনি। একমঞ্চে লিটন-বুলবুলসহ চার মেয়র প্রার্থী ॥ রবিবার একমঞ্চে উঠে পাশাপাশি বসে সমৃদ্ধ রাজশাহী গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন রাসিক নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী চার মেয়র প্রার্থী। এরা হলেন আওয়ামী লীগের এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন, বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, গণসংহতি আন্দোলনের (স্বতন্ত্র) মুরাদ মোর্শেদ ও বাংলদেশ জাতীয় পার্টির (স্বতন্ত্র) প্রার্থী হাবিবুর রহমান। ঢাকার রাজশাহী বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতি আয়োজিত ‘কেমন রাজশাহী চাই’ শীর্ষক সংলাপ অনুষ্ঠানে এ চার মেয়র প্রার্থী একমঞ্চে উঠে মেয়র নির্বাচিত হলে সমৃদ্ধ রাজশাহী নগরী গড়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। সমিতির সভাপতি খায়রুজ্জামান কামালের সভাপতিত্বে সংলাপ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন ঢাকার রাজশাহী বিভাগীয় সাংবাদিক সমিতির সহসভাপতি আনোয়ার হক। সভার শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হোসেন। সংলাপ অনুষ্ঠানে রাজশাহীর বিভিন্ন পেশাজীবী, সাংবাদিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মীরা অংশ নিয়ে সিটির বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন। অনুষ্ঠানে রাজশাহীর সন্তান বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী এন্ড্রুকিশোর, নাট্য অভিনেতা আবদুল আজিজ, বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক খালেদ মাসুদ পাইলট উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা রাজশাহীর উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা তুলে ধরেন। পরে একে একে মেয়র প্রার্থীরা বক্তব্য রাখেন। সভায় মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, এবারের নির্বাচনে তিনি একটি ইশতেহার দিয়েছেন। সেখানে রাজশাহীর উন্নয়নে ও সমৃদ্ধ নগরী গড়ে তোলার কথা স্পষ্ট বলা রয়েছে। সেগুলো তার স্বপ্ন। এগুলো বাস্তবায়ন করা গেলে রাজশাহী হবে এশিয়ার অন্যতম একটি মেগাসিটি। তিনি মেয়র নির্বাচিত হলে তার রূপ দেবেন রাজশাহীতে। তিনি বলেন, সবদিক দিয়ে সমৃদ্ধ নগরী গড়তে চান তিনি। অনুষ্ঠানে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নানা বাধা-বিপত্তির কথা তুলে ধরেন। অন্য প্রার্থীরাও সমৃদ্ধ রাজশাহী নগরী গড়ে তোলার দৃঢ প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। . সিলেট সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ ঘরে ঘরে পৌঁছে গেছে আহ্বান। নৌকা না ধানের শীষ। চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের দিকে এগুচ্ছে ভোটারদের মন। রাত-দিন চলছে আলোচনা। মার্কেট, দোকান, ব্যবসা কেন্দ্র, যানবাহন সব জায়গায় সমানতালে চলছে আলোচনা, বিশ্লেষণ। প্রার্থী হিসেবে কেউ কাউকে পেছনে ফেলতে পারছেন না। আলোচনায় আসছে আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরান ও বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হকের নগর উন্নয়নের কর্ম ফিরিস্তি। এখন সামনে আসছে একটানা ১৮বছর কাউন্সিলর থেকে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালনকালীন কামরানের জনভিত্তি। নগরীর উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও জনপ্রিয়তা নিয়ে তার ঘাটতি নেই। নগরবাসীর কাছে কামরান খুব কাছের মানুষ। কাছে গেলে তার দিকে চেয়ে কেউ তাকে ফিরিয়ে দেবে না। এই প্রত্যাশা থেকেই কামরান মাঠে দাপটের সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছেন। কামরানের মতো দীর্ঘ সময়ের জনপ্রিয়তা নেই আরিফুল হকের। তবে তিনি নগরীর উন্নয়নে কাজ করবেন এমন আস্থা রাখতে দ্বিধা নেই। রাজনৈতিক নেতা হিসেবে কামরানের বিচক্ষণতা, দক্ষতা রয়েছে। নগরবাসীর কাছে দলমত নির্বিশেষে কামরানের একটি গ্রহণযোগ্যতার ক্ষেত্র রয়েছে। সিটি নির্বাচনে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অবস্থান ক্রমশ খোলাসা হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগ যেখানে জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী, বিএনপি সেখানে সুষ্ঠু ভোট নিয়ে আছে সংশয়ে। আওয়ামী লীগ মনে করছে, সিসিক নির্বাচনে তাদের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। দলীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ থাকায় জয় এবার সহজ হবে। অন্যদিকে বিএনপি বারংবার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে আসছে। ভোট যদি সুষ্ঠু হয়, তবে জয় নিশ্চিত বলে মনে করছেন তারা। সিলেট পৌরসভা থেকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত হওয়ার তিন নির্বাচনের দুবারই আওয়ামী লীগ প্রার্থী কামরান জয়ী হয়েছিলেন। সর্বশেষে নির্বাচনে এসে এই পদটি হাত ছাড়া হয়ে যায়। এবার আর হেরে যাওয়ার ইতিহাস তৈরি করতে চায়না আওয়ামী লীগ। তাই নগর ভবনে ফিরতে প্রতীক পাওয়ার পর থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে প্রচারে ব্যস্ত সময় পার করছেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। গত নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরাডুবির পেছনে অনৈক্যকেই দায়ী করা হয়। তবে এবার নির্বাচনকে সামনে রেখে দলীয় ঐক্যের প্রতি জোর দেয়া হয়। আওয়ামী লীগের সভানেত্রী শেখ হাসিনা সিলেটের নেতাদের গণভবনে ডেকে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নির্বাচনে লড়ার নির্দেশ দেন। আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হচ্ছে, এবার নৌকা প্রতীকের পক্ষে গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। যেখানেই প্রচারে চালানো হচ্ছে সেখানেই মিলছে ব্যাপক সাড়া। মানুষ এবার পরিবর্তনের পক্ষে রায় দেবে বলে মনে করছে তারা। দলগত ঐক্য থাকায় জয়ের সম্ভাবনা এবার অনেকটাই বেড়ে গেছে, এমনটাই দাবি আওয়ামী লীগের। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন বলেন, দেশ শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে চলেছে। তাই নৌকা প্রতীকে জোয়ার উঠেছে। কামরান জনতার নেতা। আরিফ হত্যা মামলার আসামি। যারা পেট্রোলবোমার রাজনীতি করে তাদের প্রার্থী আরিফ। চারদিকে যেভাবে নৌকার জোয়ার উঠেছে, তাতে বোঝা যাচ্ছে মানুষ এবার আর ভুল করবে না। তাদের প্রকৃত আপনজন কামরানকেই জয়ী করবে। এদিকে, সিটিতে আবারও জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী বিএনপি। কিন্তু তাদের শঙ্কা সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন নিয়ে। বিএনপি বলছে, খুলনা ও গাজীপুর সিটির মতো সিলেটেও ‘ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং’ করা হতে পারে। যদি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়, তবে আরিফকে কেউ আটকাতে পারবে না বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির নেতারা বলছেন, মেয়র থাকাকালে অধিকাংশ সময়ই কারাগারে ছিলেন আরিফ। বাকি স্বল্প সময়ে তিনি যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে নগরবাসী আবারও তাকেই ভোট দেবে। সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় থাকলেও বসে নেই বিএনপি। দলটির স্থানীয় নেতারা যেমন প্রচারে ব্যস্ত কেন্দ্রীয় নেতারাও তেমনই সক্রিয়। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, ধানের শীষে ভোট দিতে মানুষ আগ্রহী। মেয়র থাকাকালে স্বল্প সময়ে আরিফ যে উন্নয়ন করেছেন, তাতে নগরবাসীর মনে দাগ কাটতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। সিলেটে আবারও জয়ের ব্যাপারে তাই বিএনপি আশাবাদী। আরিফুল হক চৌধুরী ॥ ধানের শীষের সমর্থনে সম্মিলিত ব্যবসায়ী ফোরামের গণসংযোগে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ বলেছেন, সিলেটে ব্যবসায়ীদের জন্য সুন্দর ও উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টিতে কাজ করেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। ব্যবসায়ীদের জন্য তিনি অনেক কষ্ট সহ্য করেছেন। ব্যবসায়ীদের সমস্যাকে দূর করার জন্য আরিফুল হক চৌধুরীর ভূমিকা অসাধারণ। শুধু তাই নয়, আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর উন্নয়নে ব্যবসায়ীদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে একটি আধুনিক ও আদর্শ নগরী গড়ে তুলার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। সিলেটের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসারের স্বার্থেই আরিফুল হক চৌধুরীকে পুনরায় মেয়রপদে বিজয়ী করার জন্য কাজ করতে হবে। রবিবার সিলেট নগরীর আম্বরখানা বাজার, রংমহল টাওয়ার, পৌর বিপণি মার্কেট, হকার্স মার্কেট, সিটি সুপার মার্কেট এবং কুদ্রত উল্লাহ মার্কেটসহ মহাজনপট্টি, কালিঘাট এবং লালদিঘীরপাগ এলাকায় ধানের শীষের সমর্থনে গণসংযোগকালে সম্মিলিত ব্যবসায়ী ফোরামের নেতৃবৃন্দ এ কথা বলেন। সকাল দশটায় আম্বরখানা আবাসিক এলাকায় মণিপুরী সম্প্রদায় এবং কলোনীতে মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ব্যবসায়ীরা আমাকে অত্যন্ত ভালবাসেন। তাদের ভালবাসা দেখে সত্যিই অভিভূত। ব্যবসায়ীরা যেহেতু দেশের উন্নয়নে অন্যতম চাবিকাঠি, সেহেতু সিলেট নগরীর উন্নয়নে তাদের অবদান কোন অংশে কম নয়। তাই মেয়র থাকাবস্থায় সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছি, ব্যবসায়ীদের জন্য একটি সুন্দর ও উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করতে। একটি পরিকল্পিত ও আদর্শ নগরী গড়ে তুলতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছি। আমাকে আবার নির্বাচিত করলে, আগের থেকেও বেশি আপনাদের পাশে থাকবো। সম্মিলিতভাবেই একটি ব্যবসাবান্ধব নগর গড়তে কাজ করব। আপনাদের প্রচন্ড ভালবাসা আমাকে সেই বিশ্বাস দিয়েছে যে, ধানের শীষে ভোট দিয়ে আমাকে আবার জয়যুক্ত করবেন।
×