ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মাদক অভিযান চালাতে গিয়ে আমরা মানুষ মারছি না ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৩ জুলাই ২০১৮

 মাদক অভিযান চালাতে গিয়ে আমরা মানুষ মারছি না ॥ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যেভাবে সাধারণ মানুষের সম্পৃক্ততায় জঙ্গী দমন করা হয়েছে, সেভাবেই মাদকমুক্ত করা হবে দেশকে। মাদকবিরোধী চলমান অভিযান চলবে যতক্ষণ না পর্যন্ত দেশ থেকে মাদক অভিশাপ দূর হবে। রবিবার রাজধানীর কাওরানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে জঙ্গীবাদবিরোধী সচেতনতামূলক টেলিভিশন বিজ্ঞাপন (টিভিসি) রিলিজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে এমন তথ্য প্রকাশ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মাদক সরবরাহ থেকে শুরু করে মাদকসেবীদের পুনর্বাসন করার জন্য প্রতিটি প্রক্রিয়ায় কাজ করতে হবে। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে এ অুনষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামালউদ্দিন, স্বরাষ্ট্র সচিব ফরিদউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও মাদক মহাপরিচালক জামালউদ্দিন আহমেদ। তারা সবাই মাদকবিরোধী চলমান কার্যক্রম ছাড়াও দীর্ঘমেয়াদী পদক্ষেপ নেয়ার ওপর মতামত ব্যক্ত করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, মাদক অভিযান চালাতে গিয়ে আমরা মানুষ মারছি না। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চ্যালেঞ্জ করতে গিয়েই দু’একটা ঘটনায় মাদক ব্যবসায়ীরা প্রাণ হারাচ্ছে। এ বিষয়ে আজকেই রয়টার্সের এক সাংবাদিক আমাকে বন্দুকযুদ্ধে মাদকব্যবসায়ী মারা যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করলে আমি তাকে উল্টো বলেছি, তোমার দেশেও তো একই কায়দায় মাদক নির্মূল করা হয়েছে। আসাদুজ্জামান বলেন, সারাদেশের কারাগারগুলোতে ধারণ ক্ষমতা ৩৭ হাজার। সেখানে বর্তমানে ৯০ হাজার কারাবন্দী অতিক্রম করে গেছে। তার অর্ধেকই মাদকসংক্রান্ত। এ চিত্র কতটা ভয়াবহ তা সহজেই বোঝা যায়। মাদক এখন সামাজিক সমস্যাÑ সামাজিকভাবেই মোকাবেলা করতে হবে। তিনি মাদকবিরোধী বিজ্ঞাপন তৈরি করায় র‌্যাবের প্রশংসা করে বলেন, র‌্যাব এর আগেও জঙ্গীবাদবিরোধী বিজ্ঞাপন করে দেশবাসীকে সচেতন করেছিল। এখন মাদক বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন করার মতো গুরুদায়িত্ব পালন করছে। মাদক নির্মূলে কলম্বিয়ার উদাহরণ টেনে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এক সময় কলম্বিয়ায় মাদকের স্বর্গরাজ্য ছিল। কিন্তু আজ সেখানে মাদক নেই। আমাদেরও সে পথেই কাজ করতে হচ্ছে। কারণ মাদকের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করেই দেশব্যাপী একযোগে কাজ করতে হচ্ছে। এ নিয়ে বিন্দুুমাত্র ছাড় দেয়া হবে না। দুই স্বরাষ্ট্র সচিব মোস্তফা কামালউদ্দিন ও ফরিদউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী মাদকের করাল গ্রাসে যুুবসমাজ কিভাবে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে চলে গেছে, তার পরিণাম কতটা ভয়াবহ হতে পারে, আগামী প্রজন্ম পর্যন্ত এ জন্য অভিশপ্ত হবে, সেই চিত্র তুলে ধরেন। তারা বলেন, এখনই যদি কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়া হয় তাহলে বড় ধরনের খেসারত দিতে হবে। আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, কষ্ট লাগে, দুঃখ লাগে, অনেক মা-বাবা আমার কাছে এসে অনুরোধ করেন, তাদের মাদকাসক্ত প্রিয় সন্তানটাকে জেলে রাখতে, ছয় মাসের ডিটেনশন দিতে। এটা কতটা কঠিন সঙ্কট হলে একজন মা তার সন্তানকে এভাবে কারাবন্দী করে রাখতে চায়। মাদক সমস্যা আসলেই খুব ভয়ঙ্কর। এটা এখনই মোকাবেলা করতে হবে। র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, গত ১৪ বছরে ৮০ হাজার মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়েছে। গত মে মাস থেকে আজ পর্যন্ত ১০২ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য আটক করা হয়েছে। অর্থাৎ দৈনিক গড়ে ১ কোটি টাকার মাদক বাণিজ্য হয়। এ সময়ে ১০ হাজার লোককে আটক করা হয়েছে। ৫৮৭৭ জনকে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মাদক মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে। র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে প্রাণ হারিয়েছে ৪৭ জন। তিনি চলমান অভিযানের মাঝেও পরিবহনের মাধ্যমে ইয়াবার চালান আসায় বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ভাবতে অবাক লাগে ৪ কোটি টাকার দামী বাসে করেও ইয়াবার চালান আনা হয় কক্সবাজার থেকে। এতে দেখা গেছে মালিক জানেও না। রাস্তায় বাস রেখে চালক যখন হোটেলে ঘুমায় তখন দেখা যায় সামান্য কটা টাকার লোভে পড়ে হেলপার বাসের ভেতর ইয়াবা লুকিয়ে রেখেছে। ঢাকায় আসার পর তার কাছ থেকে ফোন করে আরেকজন নিয়ে গেছে ইয়াবার চালান। এহেন পরিস্থিতিতে আমরা পরিবহন মালিক সমিতির সঙ্গে বসার উদ্যোগ নিয়েছি। বেনজীর আহমেদ ঢাকা থেকে প্রতিদিন বিকেলে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দৈনিক কোটি কোটি টাকা পাঠানো হওয়ার নেপথ্যে মাদককেই দায়ী করছেন। কক্সবাজারে কোন মিল কারখানা না থাকার পরও কেন এই লেনদেন তা অবশ্যই বড় সন্দেহ। এ জন্য আপাতত কক্সবাজারের সঙ্গে মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ রাখার বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
×