ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজশাহীতে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশের চাঞ্চল্যকর তথ্য

বুলবুলের প্রচার সভায় বিস্ফোরণের নেপথ্যে বিএনপি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৩ জুলাই ২০১৮

 বুলবুলের প্রচার সভায় বিস্ফোরণের  নেপথ্যে বিএনপি

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে ভোটারদের সহমর্মিতা পেতে নিজেদের প্রচার সভায় নিজেরা বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে বলে চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস হয়ে গেছে। নির্বাচন ব্যাহত ও প্রশ্নবিদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের অংশ হিসেবে ভোটারদের সহানুভূতি পেতে পরিকল্পিতভাবে বুলবুলের নির্বাচনী পথসভায় নিজেরাই বোমা হামলা চালায় বিএনপি বলে জানিয়েছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এসএম হাফিজ আক্তার। রবিবার দুপুরে মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এ তথ্য জানান তিনি। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির প্রচারে বোমা হামলায় ‘বিএনপি’, ফাঁস হওয়া অডিও সম্পর্কে জানানো হয়। পুলিশ দাবি করছে, হামলা চালানোর পর এই কথোপকথন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও রাজশাহী জেলা সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর মধ্যে হয়েছে। ওই কথোপকথনে যাকে মণ্টু নামে দাবি করা হচ্ছে, তিনি টিপুকে বলেছে, ভাইয়ার (তারেক রহমান) কাছে ক্রেডিট নেয়ার জন্য দুই জনকে দিয়ে এই বোমা হামলা চালানো হয়েছে। এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে টিপু বলেন, এই ধরনের কোন কথা বলেছেন কি না, সেটি তার মনে নেই। আর মণ্টুর সঙ্গে তার কথা হয়েছে কি না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘কত মানুষের সঙ্গেই তো কথা হয়। এদিকে এরই মধ্যে রাজশাহী জেলা বিএনপির নেতা মণ্টুকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আর টিপুকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজশাহী মহানগরীর নিজ বাড়ি থেকেই মন্টুকে গ্রেফতার করে বোয়ালিয়া থানা পুলিশ। রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) মুখপাত্র ইফতেখায়ের আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলছেন, যথেষ্ট তথ্য-প্রমাণ পাওয়ার পরই তাকে ধরা হয়েছে। ইফতেখায়ের বলেন, এ ঘটনায় এর আগে হিমেল নামে এক যুবককে গ্রেফতার করা হয়। আদালতে তার রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। মণ্টুকেও আদালতে হাজির করেও রিমান্ডের আবেদন করা হবে। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় আর কে কে জড়িত তা জানতে আরও জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। ‘আগামীর রাজশাহী’ নামে একটি ফেসবুক পেজে কথোপকথনের রেকর্ডটি প্রকাশ পাওয়ার পর এ নিয়ে রাজশাহীতে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগ অভিযোগ করছে, বিএনপি এই নির্বাচন নিয়ে চক্রান্ত করছে। গত ১৭ জুলাই রাজশাহী নগরীর সাগরপাড়া মোড়ে বিএনপির পথসভায় তিনটি বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। সভা চলাকালে চারটি মোটরসাইকেলে আটজন যুবক ঘটনাস্থলে গিয়ে পরপর তিনটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যান। এতে সেখানে কর্মরত বাংলাভিশনের সাংবাদিক পরিতোষ চৌধুরী আদিত্যসহ দুইজন আহত হন। ওই পথসভায় বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু উপস্থিত ছিলেন। এই হামলার জন্য প্রথমে আওয়ামী লীগকে দায়ী করে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি। যদিও ঘটনার দিনই আওয়ামী লীগের প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, এটি বিএনপিই ঘটিয়েছে। লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানের নির্দেশে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু। এদিকে মণ্টু গ্রেফতার থাকায় তার বক্তব্য জানা যায়নি। তবে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু সাংবাদিকদের বলেন, ‘এই অডিওর ব্যাপারে কিছুই জানি না। এই হামলার বিষয়ে মণ্টুর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না-জানতে চাইলে টিপু বলেন, ‘আমি বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক। কত মানুষের সঙ্গেই তো কত কথা হয়। এখন কারটা কোনটা আর কোনটা কীভাবে কারা সেট করছে সেটা তো জানি না। মানুষের কথা তো একজন আরেকজনের সঙ্গে সেট করছে। এইটা কেমনে আমি বলব? এই রকম কোনো কথা আমি বলছি বলে মনে নাই। আরএমপি কমিশনার বলেন, গত ১৭ জুলাই বোমা হামলার দুইদিন পর ১৯ জুলাই বিষয়টি নিয়ে মোবাইল ফোনে রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে কথা বলেন। যাতে তিনি স্বীকার করেন এবং দুইজন হামলাকারীর নাম উল্লেখ করেন। তাদের কথোপকথন পুলিশের হাতে আসলে মতিউর রহমান মন্টুকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার গভীর রাতে নগরের রামচন্দ্রপুর নিজ বাসা থেকে মন্টুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজেরাই বোমা হামলা কথা স্বীকার করেছে মন্টু। তাকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে ওই বোমা হামলার সঙ্গে আরও কে কে জড়িত তা বের করা হবে বলে জানান পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার।
×