ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুক্তিযোদ্ধারা বিনামূল্যে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৩ জুলাই ২০১৮

 মুক্তিযোদ্ধারা বিনামূল্যে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসা পাবেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মুক্তিযোদ্ধাদের দেশের সকল পর্যায়ের সরকারী হাসপাতালে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সুবিধা প্রদানের জন্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী এখন থেকে সরকারী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য কোন খরচ করতে হবে না মুক্তিযোদ্ধাদের। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে সরকারী হাসপাতালে মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা ফ্রি ঘোষণা করেছে। কিন্তু সীমিত সম্পদের কারণে অনেক সময় জটিল রোগে আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসাব্যয় বহন করতে পারে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এই ঘাটতির জায়গাটুকু পূরণে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও বিশেষায়িত সরকারী হাসপাতালে ইতোমধ্যে প্রাথমিক বরাদ্দের টাকা পাঠিয়ে দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। রবিবার সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্বাস্থ্য সচিব(স্বাস্থ্যসেবা) সিরাজুল হক খান ও মুুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পক্ষে সচিব অপরূপ চৌধুরী স্বাক্ষর করেন। এ সময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক উপস্থিত ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবায় এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, এটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মহৎ উদ্যোগ। আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় এলেই মুক্তিযোদ্ধাদের উন্নয়নে একটার পর একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আন্তরিকতায় সম্মান ও গৌরবের সঙ্গে মাথা উঁচু করে পরিচয় দেয়ার সাহস করেন মুক্তিযোদ্ধারা। অথচ বিএনপি-জামায়াতের শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধারা নানাভাবে হয়রানি ও অবহেলার শিকার হয়েছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, দেশে স্বাস্থ্যসেবার মান আজ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে স্বীকৃত ও প্রশংসিত। সরকারী হাসপাতালে অনেক আগেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য চিকিৎসা খরচ ফ্রি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। কিন্তু সীমিত সম্পদের কারণে অনেক সময় জটিলরোগে আক্রান্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যয়বহুল চিকিৎসাব্যয় বহন করতে পারে না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এখন পূর্ণাঙ্গ বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাবে মুক্তিযোদ্ধারা। এটি করুণা নয়, তাদের প্রাপ্য ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জীবন সায়াহ্নে বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে দেশের উপজেলা, জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ে অবস্থিত সকল পর্যায়ের সরকারী হাসপাতালে বা সরকারী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে বা বিশেষায়িত হাসপাতালে বিনামূল্যে বা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদানের নিমিত্তে সরকার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। হাসপাতালে অসুস্থ মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহসহ সর্বোত্তমভাবে সকল চিকিৎসাসেবা প্রদান নিশ্চিত করা হবে। সকল ধরনের চিকিৎসা, পরামর্শ, শল্য চিকিৎসা, হাসপাতাল কর্তৃক সরবরাহযোগ্য ওষুধ, বেড সরবরাহ, পথ্য এবং নার্সিং ইত্যাদি চিকিৎসাসেবা অন্তর্ভুক্ত হবে। তবে হাসপাতালে প্রদত্ত নিয়মিত সরকারী বরাদ্দের অতিরিক্ত চিকিৎসা সেবার প্রয়োজন হলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় কর্তৃক বরাদ্দকৃত অর্থ ব্যবহার করা যাবে। এই সেবামূলক কার্যক্রম বাস্তবায়নে উপজেলা, জেলা, বিভাগীয় ও বিশেষায়িত পর্যায়ে আলাদা আলাদা কমিটি গঠন করা হবে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্তৃক বরাদ্দ অর্থ ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলোতে পাঠানো হয়েছে। আর বরাদ্দকৃত অর্থের ৭০ শতাংশ শেষ হওয়ার আগেই বিষয়টি মন্ত্রণালয়কে জানাতে হবে। মন্ত্রণালয়কে অবহিত করা হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে আবার অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বেসরকারী চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন প্রক্রিয়ায় অটোমেশন চালু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ॥ বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন প্রক্রিয়ায় অটোমেশন চালু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। রবিবার সচিবালয়ের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে এই অটোমেশন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এই কার্যক্রম চালু হলে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠতে পারবে না অবৈধ ও মানহীন বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। মিথ্যা তথ্য দিয়ে লাইসেন্স গ্রহণ বন্ধ হবে। নবায়ন না করে দিন পার করতে পারবে না মালিকপক্ষ। একটি বেসরকারী হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ কোন ডাক্তার ও নার্স অন্য আরেকটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে পারবে না। প্রধান অতিথির বক্তব্যে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, অটোমেশন কার্যক্রমের কারণে দেশ থেকে অবৈধ ক্লিনিক, হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার উচ্ছেদ হবে। চিকিৎসাসেবার ক্ষেত্রে আসবে স্বচ্ছতা। আর অভিযুক্তদের সহজেই চিহ্নিতকরণ এবং শাস্তির আওতায় আনা যাবে বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এ সময় অন্যান্যের মধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সচিব সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ, বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক ডাঃ এম ইকবাল আর্সলান ও মহাসচিব অধ্যাপক এম এ আজিজ উপস্থিত ছিলেন।
×