ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

আদালত অবমাননার মামলায় হাজিরা থেকে অব্যাহতি চান ডিসিরা

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২৩ জুলাই ২০১৮

 আদালত অবমাননার মামলায় হাজিরা থেকে অব্যাহতি চান ডিসিরা

তপন বিশ্বাস ॥ আদালত অবমাননার মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চান জেলা প্রশাসকগণ (ডিসিরা)। পিতা মাতার ভরণ পোষণ আইনটি মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন তারা। কর্মাশিয়াল ইমপরটেন্ট পার্সনের (সিআইপি) আদলে কৃষি উৎপাদনে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ‘এ্যাগরিকালচার ইমপরটেন্ট পার্সন (এআইপি)’ স্বীকৃতির প্রস্তাব করেছেন জেলা প্রশাসকরা। পদোন্নতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংস্থা থেকে প্রতিবেদন নেয়ার বাধ্যবাধকতা শিথিল করার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। এতে করে অনেক ক্ষেত্রে যোগ্য কর্মকর্তারা যথাযথভাবে মূল্যায়িত হয় বলে মনে করছেন তারা। তারা প্রশাসনের গোপনীয় প্রতিবেদন গ্রহণের পক্ষে মত দিয়েছেন। দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ২৯০ এবং বঙ্গীয় প্রকাশ্য জুয়া আইন ১৯৬৭ এর ৪ ধারায় প্রকাশ্যে জুয়া খেলার অপরাধে জরিমানার পরিমাণ খুবই কম। বর্তমানে জুয়া খেলা গণউপদ্রবে পরিণত হয়েছে। তা বন্ধে ডিসিরা ওই ধারায় জরিমানা পরিমাণ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছেন। এছাড়া বর্তমানে কারাগারে আটক বন্দীদের ৭০ ভাগ বন্দী মাদকের মামলার সঙ্গে সম্পৃক্ত। মামলা নিষ্পত্তি অনেক সময় সাক্ষী হাজির করা সম্ভব হয় না। সেই ক্ষেত্রে মাদকের মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে পৃথক মাদক আদালত গঠন এবং তদন্ত ও নিষ্পত্তির সময়সীমা নির্দিষ্ট করে দেয়ার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। এই ধরনের ৩৩৯টি প্রস্তাব উঠছে ২৪ জুলাই অনুষ্ঠিতব্য ডিসি সম্মেলনে। তিনদিনের এ সম্মেলন শুরু হবে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারী সম্পত্তি রক্ষার স্বার্থে মামলা হলেও অনেক সময় আদালত সরকারী কর্মকর্তাদের আদালতে সশরীরে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা চান। সেই ক্ষেত্রে তারা ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চান। তাদের পরিবর্তে সরকারী কৌশলীরা হাজিরা দিয়ে আদালতে ব্যাখ্যা দেয়ার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। ব্যবসা বাণিজ্য ও শিল্প প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য প্রতিবছর সিআইপি নির্বাচন করা হয়। কৃষির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ খাতে এ ধরনের কোন স্বীকৃতি এখনও চালু হয়নি। এ স্বীকৃতি প্রদান করা হলে কৃষকরা উৎসাহ পাবেন। দেশের তরুণ সমাজও কৃষি খাতে কাজ করতে উৎসাহিত হবে এবং দেশের খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। বৃদ্ধ পিতা-মাতার সেবাযত্ন এবং তাদের অসহায়ত্ব থেকে মুক্ত করার জন্য ছেলে সন্তানদের দায় দায়িত্ব নেয়ার বাধ্যবাধকতায় আনার জন্য প্রণীত পিতা-মাতার ভরণ পোষণ আইন ২০১৩ মোবাইল কোর্ট আইন ২০০৯ এর তফসিলভুক্ত করার প্রস্তাব করেছেন একজন ডিসি। অনুরূপভাবে বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন ২০১৭ মোবাইল কোর্ট আইনের তফসিলভুক্ত না হওয়ায় মাঠপর্যায়ে বাল্যবিবাহ রোধে ভ্রাম্যমাণ আদালত সফলভাবে পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। এতে বাল্যবিবাহের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। সরকারী শিশু পরিবারের সঙ্গে বৃদ্ধাশ্রম প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব এসেছে ডিসিদের কাছ থেকে। এতে শিশু পরিবারের সিনিয়রদের মাধ্যমে বৃদ্ধদের সেবা প্রদান সম্ভব। বাল্য বিবাহরোধে নিকাহ রেজিস্টারদের আইনের আওতায় আনলেও হিন্দু পুরোহিতগণকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। ফলে বাল্য বিবাহরোধে সমন্বয়হীনতা দেখা দিয়েছে। হিন্দু পুরোহিতগণকে আইনী বাধ্যবাধকতায় আনার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। অটিস্টিক শিশু দিন দিন বাড়ছে। সরকারী পর্যায়ে তাদের জন্য বিশেষায়িত কোন স্কুল নেই। তাদের জন্য বিশেষায়িত স্কুল স্থাপনের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। সমুদ্র তীরবর্তী এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় আনার প্রস্তাব দিয়েছেন ডিসিরা। নেটওয়ার্ক না থাকায় সমুদ্রগামী লোকজন পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে পারেন না। প্রাকৃতিক দুর্যোগের সতর্ক বার্তাও অনেক সময় তাদের কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। ফলে জীবণ হানির ঘটনা ঘটে। প্রজনন মৌসুমে হাওড় অঞ্চলের জলাশয়ে মাছ সংগ্রহ নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। গণশুনানিসহ বিভিন্ন ধরনের সভা করে থাকেন ইউএনওরা। কিন্তু তাদের জন্য আপ্যায়ন খাতে কোন বরাদ্দ নেই। তাদের জন্য আপ্যায়ন ভাতার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ডিসি, ইউএনও এবং এসিল্যান্ড অফিসের কর্মচারীদের টিফিন ভাতা মাত্র দুই শ’ টাকা। খাবারের মূল্য বাড়ায় প্রদেয় অর্থে তাদের টিফিন করা সম্ভব হয় না। সেই ক্ষেত্রে তাদের টিফিন ভাতা যৌক্তিকভাবে বাড়ানো যেতে পারে। দুর্গম ভাতার প্রচলনের প্রস্তাব করেছেন ডিসিরা। বিশেষ করে ভোলার মনপুরাসহ অনেক দুর্গম উপজেলায় কর্মকর্তারা কাজ করেন। দুর্গম এলকার কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সরকারী কর্মকর্তার পদ শূন্য থাকে। জনগণ গুরুত্বপূর্ণ সেবা থেকে বঞ্চিত হন। সেই ক্ষেত্রে তাদের জন্য প্রণোদনা হিসেবে দুর্গমভাতা চালু করা যেতে পারে। দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে বিদেশী বিজ্ঞাপন বাংলায় ডাবিং করে প্রচারের ফলে দেশের শিল্পীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। কোমলমতি শিশু এবং তরুণরা ক্ষেত্র বিশেষ বিকৃত উচ্চারণে বাংলা বলার প্রতি আগ্রহী হয়ে পড়ছে। এছাড়া বিদেশী বিজ্ঞাপনে বিদেশেী মডেলদের প্রধান্য থাকায় দেশী পণ্য ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ দরকার বলে মনে করছেন ডিসিরা।
×