ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাবিতে নয়া পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা ॥ দুশ্চিন্তায় ভর্তিচ্ছুরা

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২৩ জুলাই ২০১৮

 রাবিতে নয়া পদ্ধতিতে  ভর্তি পরীক্ষা ॥ দুশ্চিন্তায় ভর্তিচ্ছুরা

স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষে স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষে ভর্তি পরীক্ষায় আমূল পরিবর্তন আনছে কর্তৃপক্ষ। প্রচলিত বহুনির্বচনীর (এমসিকিউ) বদলে লিখিত পরীক্ষা, ফলের ভিত্তিতে ভর্তিচ্ছু নির্বাচনসহ বেশকিছু গুণগত পরিবর্তন আনা হচ্ছে এই ভর্তি পরীক্ষায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের এমন পদক্ষেপে ক্যাম্পাসে পক্ষে-বিপক্ষে নানা মত উঠেছে। এদিকে দেশব্যাপী এইচএসসির ফল খারাপ হওয়ায় ভর্তি পরীক্ষার যোগ্যতা এবং নতুন পদ্ধতিতে প্রশ্নপত্রের ধরন নিয়েও উদ্বিগ্ন ভর্তিচ্ছু ও তাদের অভিভাবকরা। গত ৬ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে উপাচার্য অধ্যাপক এম. আব্দুস সোবহান বহুনির্বচনী পদ্ধতি বাতিলের ঘোষণা দেন। একইদিন রাবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আনন্দকুমার সাহা জানান, রাবির ভর্তি উপকমিটির সভায় প্রচলিত বহুনির্বচনী (এমসিকিউ) পদ্ধতি বাতিল করে ১০০ নম্বরের লিখিত পরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ভর্তি পরীক্ষা ১ ঘণ্টার পরিবর্তে এ পরীক্ষা হবে ২ ঘণ্টায়। ওই সভায় ভর্তি পরীক্ষার চাপ কমাতে অনুষদ ও ইনস্টিটিউটগুলোকে ৪টি ইউনিটের প্রতিটিতে ফলাফলের ভিত্তিতে ১৬ হাজার ভর্তিচ্ছুর ভর্তিপরীক্ষা নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয় উপকমিটি। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তে পক্ষে-বিপক্ষে ক্যাম্পাসে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নানা মত উঠেছে। লিখিত পরীক্ষায় মূল্যায়নের স্বচ্ছতা বজায় থাকবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন অনেকে। রাবির শিক্ষার্থীরা বলছেন, এ বছর এইচএসসি পরীক্ষার ফল খারাপ হয়েছে। তার ওপর রাবিতে ২য় বার ভর্তিপরীক্ষা দেয়ার সুযোগ বহাল আছে। এ অবস্থায় মাত্র ১৬ হাজারকে ভর্তি পরীক্ষায় বসালে অনেক মেধাবী শিক্ষার্থীই বঞ্চিত হবে। তাছাড়া লিখিতভাবে ভর্তি পরীক্ষা নিলে এখানে দুর্নীতির সুযোগ খুব বেশি থাকে। বিশ্ববিদ্যালয় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করার আগে এসব বিষয় ভেবে দেখবেন বলে আশা তাদের। গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক আব্দুল্লাহ বাকি বলেন, ভর্তি পরীক্ষার চাপ এবং দুর্নীতি কমাতে এবার কম সংখ্যক পরীক্ষার্থী নির্বাচন করে লিখিত পরীক্ষা নিতে যাচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। যদি এক বছর বা নির্দিষ্ট সময় নিয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হতো, তবে পরীক্ষার্থীরা সেভাবে প্রস্তুত হতে পারত। শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইআর) অধ্যাপক আকতার বানু আলপনা বলেন, নতুন পদ্ধতিটির সুবিধা ও অসুবিধা দুটোই আছে। লিখিত পরীক্ষার সবচেয়ে বড় অসুবিধা হলো খাতা দেখায় স্বচ্ছতা বজায় রাখা। কারণ এখানে পক্ষপাতিত্ব বা দুর্নীতির সুযোগ থাকে। তাছাড়া একেকজন শিক্ষক একেক ভাবে খাতা দেখেন। ফলে কোন পরীক্ষকের কাছে ভর্তিচ্ছুরা বেশি নম্বর পেয়ে যেতে পারে, আবার কোন পরীক্ষকের কাছে কম। তিনি আরও বলেন, যারা প্রশ্ন করবেন, তারা সঙ্গে একটি করে নমুনা উত্তর সরবরাহ করলে এই সমস্যা সমাধানযোগ্য। তবে খাতা দেখায় স্বচ্ছতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে পদ্ধতিটি কাজে দেবে। তবে এই পদ্ধতিকে কার্যকর ও সময়োপযোগী মনে করছেন আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসিবুল আলম প্রধান। তিনি বলেন, লিখিত পরীক্ষার মাধ্যমে যেমন সত্যিকার মেধাবীদের মূল্যায়ন করা যায়, তেমনি ডিভাইস ব্যবহার, দেখাদেখি করে উত্তর মিলানো বা পরীক্ষার অন্য অসাদু উপায়গুলো কমে যাবে। ফলে একটা সুষ্ঠু ভর্তি পরীক্ষা নেয়া যাবে। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এমন সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন ভর্তিচ্ছুরা। লিখিত পরীক্ষায় প্রশ্নের ধরন, এইচএসসি ও এসএসসিতে ফলাফলের সর্বনি¤œ সীমা, প্রথমবার ও দ্বিতীয়বার অংশগ্রহণে আলাদা ফলাফল সীমা থাকবে কি না- এসব নিয়ে তারা চিন্তিত। ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী শামিম সাকিব উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, এবার কি ধরনের প্রশ্ন হবে, কিছুই জানি না। এদিকে প্রস্তুতি অনেক দূর এগিয়েছে। তবে আবারও যদি নতুন করে প্রস্তুতি নিতে হয়, তবে রাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দেয়া কঠিন হয়ে যাবে। রাবিতে ভর্তিচ্ছু মোস্তারিন জাহান নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, গতবারের থেকে তুলনায় এবার এইচএসসির রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। এখন আবার যদি রেজাল্টের ভিত্তিতে প্রাথমিক বাছাই করা হয় তাহলে ২য় বারের ভর্তিচ্ছুরাই বেশি সুযোগ পেয়ে যাবে। ভর্তি পরীক্ষায় ২য় বারের অংশগ্রহণের সুযোগ বাতিল করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন তিনি।
×