ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৩ জুলাই ২০১৮

 সৃজনে উন্নয়নে বাংলাদেশ

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশে প্রথমবারের মতো ৬৪ জেলায় দুদিনব্যাপী শুরু হয়েছে নানামুখী সাংস্কৃতিক উৎসব-অনুষ্ঠান। এই আয়োজনে সহযোগিতায় রয়েছে জেলা প্রশাসন, শিল্পকলা একাডেমি ও জেলা তথ্য অফিস। অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে নাচ-গান-আবৃত্তি-অভিনয়- শোভাযাত্রা ইত্যাদি। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদের মধ্যে দেশপ্রেম, মানবতাবোধ, ন্যায়পরায়ণতা, সহমর্মিতাবোধের বিকাশসহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্দীপ্ত করে তোলা। পাশাপাশি জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় নয়, মাদককে কর ঘৃণা, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় গড়ে তোল বাংলাদেশ- এই সুদৃঢ় প্রত্যয় থেকে যেন গড়ে উঠতে পারে শিশু-কিশোর-তরুণ প্রজন্ম- তার সুদৃঢ় ভিত্তি স্থাপন করা তৃণমূলসহ সর্বত্র। তবে এই উদ্যোগ ও প্রচেষ্টা শুধু দুদিন বা সাত দিনব্যাপী সীমাবদ্ধ থাকলে চলবে নাÑ বরং তা অব্যাহত রাখতে হবে বছরব্যাপী। পাঠকের হয়ত মনে আছে যে, ২০১৬ সালে ‘মানবতা ও স্বদেশ ভাবনায় রুখে দাঁড়াও জঙ্গীবাদ’ শীর্ষক ব্যানার ধারণ করে রাজধানীর সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীদের পদযাত্রাটি ছিল সবিশেষ উল্লেখযোগ্য ঘটনা। সাত কিলোমিটার দীর্ঘ পদযাত্রাটি পরিব্যাপ্ত ছিল কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে গুলশান-১ পর্যন্ত। হাজার হাজার সংস্কৃতিকর্মীর ব্যানার ও ফেস্টুন শোভিত বর্ণাঢ্য এই মিছিলের কণ্ঠে ছিল উদ্দীপক গান, অগ্নিঝরা কবিতার পঙ্ক্তিমালা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবিরোধী নাট্যাংশ, সর্বোপরি দেশ সুরক্ষায় মুহুর্মুহু সেøাগান। এর পাশাপাশি মানবতা ও স্বদেশ ভাবনায় উজ্জীবিত বক্তৃতা তো ছিলই। এটা খুবই আশার কথা যে, সংস্কৃতিকর্মীদের সুদীর্ঘ এই র‌্যালি ও পদযাত্রাকে দু’পাশে চলাচলরত সর্বস্তরের সাধারণ মানুষ করতালি দিয়ে স্বাগত জানিয়েছে এবং দু’হাত তুলে প্রকাশ করেছে একাত্মতা। উল্লেখ্য, এই মিছিল ছিল গুলশান ও শোলাকিয়ায় সংঘটিত ভয়াবহ নৃশংস সন্ত্রাসী জঙ্গী হামলা ও অমানবিক হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ এবং ঘৃণার বহির্প্রকাশ। দেশের সংস্কৃতিকর্মীরা জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে সরব কণ্ঠে কবিতা ও গানের মিছিল সহযোগে গান গেয়েছেন মানবতার। অঙ্গীকার করেছেন ভয়কে জয় করার। এটা তো চির সত্য যে, মৃত্যুর কাছে জীবন কখনই পরাজয় মেনে নিতে পারে না। জীবন চিরসত্য ও অপরাজেয়। ৩০ লাখ শহীদের দেশে, তিন লাখ মা-বোনের সম্ভ্রম হারানোর দেশে, সশস্ত্র সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ সর্বোপরি বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের কোন স্থান নেই। এখন সময় এসেছে রুখে দাঁড়ানোর; সময় এসেছে প্রতিবাদের, প্রতিরোধের। আমরা যদি দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কয়েক কোটি শিক্ষার্থীকে পর্যায়ক্রমে সাংস্কৃতিক সপ্তাহ আয়োজনের মাধ্যমে বাঙালীর হাজার বছরের ইতিহাস-ঐতিহ্য-কৃষ্টি-সংস্কৃতি, সুমহান মুক্তিযুদ্ধ এবং এর চেতনার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে পারি জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সঙ্গীতের মাধ্যমে, তাহলে জঙ্গীবাদ কিছুতেই মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না। আর এখানেই নিহিত রয়েছে কবিতার জয়, নাটক ও গানের বিজয় বার্তা। দেশের সর্বত্র সংস্কৃতিকর্মীদের কাজ ও দায়িত্ব হলো, আমাদের সন্তানদের মধ্যে অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপেক্ষ ও মানবিক চেতনার বার্তাটি পৌঁছে দেয়া। মনে রাখতে হবে, সারাবিশ্বে একমাত্র এ দেশের চারণ কবিই উচ্চকণ্ঠে ঘোষণা করেছেন চিরায়ত মানবতার এই সুমহান বিজয়বার্তা- ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই।’ মানুষের মধ্যে সুপ্ত শুভবোধ ও চেতনাকে যদি জাগ্রত করা যায়, মানবিকতা যদি বিকশিত করে তোলা যায় মানুষের মনে, তাহলে জঙ্গীবাদ একেবারে নির্মূল না হোক, অন্তত কমে আসবে অনেকাংশে। এ ক্ষেত্রে সর্বোত্তম হাতিয়ার ও মাধ্যম হতে পারে মানব ধর্ম ও সংস্কৃতি, সর্বোপরি শিক্ষা। বিশ্বের সব ধর্মই মানুষ ও মানবতার কথা বলে। সংস্কৃতি বলে মানবতার বিকাশের কথা। এই কাজটি তৃণমূল থেকে শুরু করতে হবে শিক্ষক, ধার্মিক ও সংস্কৃতিকর্মীদের সম্মিলিতভাবে। আলো দিয়ে আলো জ্বালাতে হবে মানুষের মনে।
×