ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নাজনীন বেগম

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ৩০ লাখ গাছের শুভযাত্রা

প্রকাশিত: ০৪:২৯, ২৩ জুলাই ২০১৮

  মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ৩০ লাখ গাছের শুভযাত্রা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও ৩০ লাখ শহীদের মূল্যবান জীবনের বিনিময়ে যে স্বাধীনতা আজ বাঙালীর ঘরে ঘরে তাকে নতুন করে বৃক্ষরোপণ উৎসবের মধ্য দিয়ে স্মরণ করলেন। ২০০৯ থেকে ১৮ উন্নয়ন দশকের ধারাবাহিক যাত্রাপথে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিতে তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয় না। সময়ের নিরন্তর অভিযাত্রায় সামগ্রিক সমৃদ্ধিকে সর্বসাধারণের দ্বারে পৌঁছে দিতে শেখ হাসিনার যুগান্তকারী ভূমিকা অবিস্মরণীয়। বছরটাকে শুধুমাত্র নির্বাচনের আওতাধীন না করে দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণ সাধনের অনিবার্ণ দীপ্তি হিসেবে ভাবলে উন্নয়নের গতিধারাকে সঠিক মূল্যায়ন করা হবে। আর সেই লক্ষ্যে শেখ হাসিনাসহ সারাদেশের বীরদর্পে শুধু সামনের দিকে তাকানো। দেশে প্রবৃদ্ধির জোয়ার অবারিত আর মুক্ত করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সামান্যতম ভূলুণ্ঠিত হতে দেননি। আর সেটাকেই সবচাইতে জোরালোভাবে স্থান দিতে কারোরই কার্পণ্য করা উচিত নয়। নির্বাচনের গতিধারা তার নিজস্ব নিয়মে চলে, বিকাশ লাভ করে শেষ অবধি তার একটি সুনির্দিষ্ট পরিণতিও অর্জিত হয়। তাই ক্ষমতা গ্রহণের পর পরই সময়কে অযথা নষ্ট না করে নির্বাচনী অঙ্গীকার জনগণের কাছে পৌঁছে দেয়ার বিকল্প কোন পথ থাকে না বিজয়ী দলের। ১৯৯৬ সালে শাসকের ভূমিকায় নিজেকে প্রতিষ্ঠা করতে কিছুটা সময় লাগলেও মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক কোন বিষয়ের ব্যাপারে আপোঘমহীনতার যে দৃঢ় পরিচয় জাতির কাছে স্পষ্ট হয়েছিল সেই অবিচলিত ধারায় আজও তিনি দেশের বৃহত্তর স্বার্থে নিজের ঐতিহাসিক ভূমিকাকে সমুন্নত রেখেছেন। হরেক রকম বাধা-বিপত্তি, বিরোধী শক্তির আস্ফালন থেকে শুরু করে জীবন বিপন্ন করার মতো দুঃসময়ও বার বার তাড়িত করেছে। তবে গত দশ বছরের অভাবনীয় সাফল্য তাকে দেশের সীমানা পার করে আন্তর্জাতিক আঙিনায়ও অগ্রগণ্য নেতৃত্বের ভূমিকায় অভিষিক্ত করেছে। দেশকে সমৃদ্ধির দ্বারে পৌঁছে দিতে যা যা করণীয় সবই করতে হয়েছে ব্যক্তিত্বের বলিষ্ঠতায়, দেশাত্মবোধের অবিচল নিষ্ঠায় শুধু নয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকেও প্রত্যাশিত আকাক্সক্ষায় লালন করে তার বার্তায় জনগণকে শামিল করতে বীরদর্পে সামনে এগিয়ে চলাও। এবারের বৃক্ষরোপণ সমারোহ সেই সম্ভাবনাকে আর এক নতুন মাত্রায় মহিমান্বিত করল। ৩০ লাখ শহীদ মানেই স্বাধীনতা যুদ্ধের রক্তাক্ত প্লাবন। যার প্রতিটি রক্তবিন্দু থেকে জন্ম নিয়েছে অজেয় বাঙালীর সময়ের প্রজন্ম। সেই রক্তমাখা ঐতিহ্যিক পথপরিক্রমায় প্রধানমন্ত্রী আরও একবার দৃপ্ত অঙ্গীকারে বৃক্ষরোপণের মতো মহৎ আর যুগান্তকারী কার্যক্রমে ৩০ লাখ শহীদানের বিদেহী আত্মায় শান্তির পরশ বুলিয়ে দিলেন। এই বৃক্ষ শুধু লতায় পাতায়, ফুলে ফলে আচ্ছাদিত হয়ে গণমানুষের প্রয়োজনীয় চাহিদাই মেটাবে না তার চেয়েও বেশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কোন ফলাহারী, পুষ্পপ্রেমিক, ছায়াতলে সুশীতল মানুষকে মুক্তির বারতায় নিরন্তর সিক্তও করবে। নতুন করে মুক্তিযোদ্ধাদের মনে করিয়ে দেবে, নয় মাসের রক্তের সাগরে ভাসিয়ে নেবে এমনকি চেতনাবিরোধী শক্তির বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধে নতুন শপথে অঙ্গীকারাবদ্ধ হবে। শেখ হাসিনা এমন এক সময় এই বর্ণাঢ্য বৃক্ষ শোভাযাত্রা শুরু করলেন যখন দেশের প্রবাহমান সমৃদ্ধি বিশ্ব পরিসরে তার দ্যুতি বিতরণ করছে। অর্ধাংশ নারী জাতির উন্নয়নের প্রতিটি সূচকে ক্রমবর্ধমান সাফল্য বৈশ্বিক সীমানায়ও তার গতিশীলতা অবারিত করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থার বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের দুনিয়াজোড়া খ্যাতি বিস্ময়ের হলেও একেবারে সত্যি। আর শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ এবং সময়োপযোগী নেতৃত্বে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের অবস্থান ঈর্ষণীয়। উন্নয়নের ক্রমবর্ধমান ধারায় বাংলাদেশ আজ সারা বিশ্বের রোল মডেল। শুধু তাই নয় স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল বিশ্বের সীমানাকে স্পর্শ করা বাংলাদেশের অভাবনীয় কৃতিত্ব। এ ছাড়া সমতাভিত্তিক অগ্রযাত্রায় দেশের অবস্থানও সুসংহত এবং মজবুত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না এগিয়ে যাওয়ার প্রবাহমান ধারা প্রধানমন্ত্রীর সফল নেতৃত্ব, আদর্শিক আর দেশাত্মবোধের অনমনীয় চেতনা সর্বোপরি সাধারণ মানুষের প্রতি অকৃত্রিম দায়বদ্ধতা দেশকে বিশ্ব দরবারের বৃহত্তর সীমানায় পৌঁছে দিয়েছে। অর্ধাংশ এবং পিছিয়ে পড়া নারীদের কতখানি দ্রুততার সঙ্গে প্রবৃদ্ধির গুরুত্বপূর্ণ খাতে সম্পৃক্ত করতে পারলে লিঙ্গবৈষম্যের মতো ব্যবধানকে পাশ কাটানো সম্ভব। লিঙ্গ সমতা অর্জনই শুধু নয় এগিয়ে যাওয়ার নির্ধারিত মাপকাঠিতেও দেশ এখন অনন্য ভূমিকায়। দেশের সফলতা, বিপর্যয়, সহিংসতা কিংবা নির্যাতনকে একীভূত করলে বোধহয় অর্জনের পাল্লাটাই ভারি। দুর্ভোগের দায়ভাগ যেমন ক্ষমতাসীনকে নিতে হয় একইভাবে সাফল্য আর কৃতিত্বের ভাগিদারও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। আর তাই দেশ ও জাতি তার অর্জন নিয়ে বিশ্বসভায় যেভাবে নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে সেখানে প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় নেতৃত্ব, আধুনিকতার বিস্তৃত বলয়ে যুগোপযোগী অবদান সঙ্গে সর্বসাধারণের প্রতি তার সীমাহীন দরদই এসবের নিয়ামক শক্তি। বিশ্বের গবেষণা জরিপেও প্রধানমন্ত্রীর এই সাফল্যকে বিশেষ মর্যাদায় জোরালোভাবে স্পষ্ট করা হয়েছে। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম তার এক গবেষণা প্রতিবেদনে উপস্থাপন করে নারী পুরুষের সমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের ৪৭তম। আর দক্ষিণ এশিয়ায় একেবারে শীর্ষে। এখানে প্রধানমন্ত্রীর নিরলস কর্মপ্রেরণা আর প্রণোদনা নারী জাতিকে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল করেছে। তাই সমতাভিক্তিক অভিগামিতায় তারা পুরুষের সহযোগী হতে পেরেছে। আর যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গবেষণা সংস্থা ‘গ্লোবাল সামিট অব উইমেন’-এর বিবেচনায় প্রধামন্ত্রীর অসামান্য নেতৃত্ব শ্রেষ্ঠ পুরস্কারের জন্য নির্বাচিত হয়। অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অনুষ্ঠিত এই বিরাট আয়োজনে শেখ হাসিনাকে ‘গ্লোবাল উইমেন লিডারশিপ এ্যাওয়ার্ডে’ ভূষিত করা হয়। আজীবন সম্মাননা সূচক এই দুর্লভ মর্যাদা তাকে দেয়া হয় মূলত অভাবনীয় নারী জাগরণ, নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন সংশ্লিষ্ট্রদের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ার কারণে। এ ছাড়া নারী শিক্ষা ও ব্যবসায়িক উদ্যোগে জোরালো অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে এই বিরল সম্মানে অলঙ্কৃত করা হয়। তবে এই ধরনের অভাবনীয় সাফল্য প্রধানমন্ত্রীর জীবনে এই প্রথম নয়। রাজনৈতিক ক্ষমতায়নে বিশ্বের ১৫৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের স্থান সপ্তমে। এ ছাড়া বাংলাদেশের ওপর মিয়ানমারের চাপানো রোহিঙ্গা মহাসঙ্কটকে অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে মোকাবেলা করায় ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম তাকে ‘মানবতার জননী’ সম্মানেও অধিষ্ঠিত করে। বর্তমানে বিশ্ব নারী নেতৃত্ব ও ক্ষমতায়ন কোন আনুষ্ঠানিক বিষয় নয় তার চেয়েও বেশি অপেক্ষাকৃত পিছিয়ে পড়া এই গোষ্ঠীর প্রতিদিনের জীবনপ্রবাহে উন্নয়নের সিংহভাগ সূচক সম্পৃক্ত করে তাদের এগিয়ে দেয়াও। যা এখন অবধি নিত্য লড়াইয়ের বেগবান ধারায় আবর্তিত হচ্ছে। বিশ্বের ক্ষমতাধর নারীদের তালিকায় শেখ হাসিনার অবদানও উল্লেখযোগ্য। যোগ্যতার ভিত্তিতে তার অবস্থান ৩০তম। নিজেকে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেই তিনি ক্ষান্ত হননি। তার অতি প্রিয় সাধারণ মানুষদের সঙ্গে নিয়ে আর্থ-সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক গতিপ্রবাহে দৃপ্ত মনোবল আর অবিস্মরণীয় কর্মযজ্ঞে নিয়তই এগিয়ে গেছেন। উন্নয়নের এই সুবর্ণ পথপরিক্রমায় স্বাধীনতা যুদ্ধের রক্তাক্ত ইতিহাসকে সবার উপরে জায়গা দিয়েছেন। ১৯৭৫-এর নৃশংস হত্যাযজ্ঞকে সর্বক্ষণিক স্মরণচেতনায় বিদ্ধ করেছেন। পিতৃহত্যার প্রতিকারে স্বাধীনতা বিরোধীদের ক্ষমার অযোগ্য বিবেচনায় শাস্তি প্রদানে কুণ্ঠিত হননি। নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের ঘাতকদের বিরুদ্ধে বিধিসম্মত বিচারিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে তাদের সর্বোচ্চ দ-ের আওতায় এনেছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে দেশ ও জাতির জীবন কলঙ্কমুক্ত করতে বদ্ধপরিকর হয়েছেন। তাঁর শাসনামলে বিরোধী শক্তি নিধনে কোন বড় ধরনের সশস্ত্র হামলা দেশ দেখেনি। যেমনটি হয়েছিল ’৭৫-এর নারকীয় হত্যাকান্ড, জেল হত্যার মতো জঘন্য দুষ্কর্ম, ২০০৪ সালে ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলা, অর্থমন্ত্রী কিবরিয়াসহ আহসানউল্লাহ মাস্টারের নির্মম মৃত্যু ঘণ্টা বেজে ওঠাও ছিল বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে নির্মমতার রক্তস্নাত দলিল। শেখ হাসিনা বিরোধী শক্তি নির্মূলে কোন ধরনের অপশক্তির আশ্রয় নেননি বরং রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মাধ্যমে দেশ ও জাতির অগ্রগতিতে যতখানি নিবেদিত ছিলেন তার সামান্যতম ভূমিকাও ছিল না অপশক্তির পেছনে দৌড়ানোর মতো হীনম্মন্যতা। দেশাত্মবোধের উদ্দীপ্ত চেতনা, অসম সাহসিকতা এবং দুর্জন মনোবলে শত্রুকে উন্নয়নের গতিধারা আর রাজনীতির আঙ্গিনায় মোকাবেলা করেছেন। উন্নয়নকে নিরন্তর অবারিত করতে গিয়ে সাধারণ জনগণকে নিয়ে ভাবা ছাড়া অন্য কেউ তার পথরোধ করতে পারেনি। যারা দেশ ও জাতির ভাগ্যোন্নয়নে বিচলিত নয় তাদের আমলে আনার প্রয়োজনই মনে করেননি। নির্বাচন সাংবিধানিক প্রক্রিয়া। তাকে অবশ্যই বিধিসম্মত উপায়ে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। সেই বিবেচনায় জনগোষ্ঠীর পাশে থেকে তাদের জীবন-মান উন্নত করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবার সময় হয়নি কখনও। স্বাধীনতার যুদ্ধ আর মুক্তি সৈনিকরা তার কাছে এক মহামূল্যবান সম্পদ। এমন ঐশ্বর্য কোন কিছুর বিনিময়ে তিনি হারাতে চাননি। তাই প্রাণ সংশয়ের মতো অস্বাভাবিক দুর্ঘটনাও মোকাবেলা করতে হয়েছে। অদম্য শক্তি আর অনমনীয় সৎ সাহস সঙ্গে দেশ ও মানুষের প্রতি সীমাহীন ভালবাসায় তিনি নিয়তই সিক্ত হয়েছেন, সামনে এগিয়ে লক্ষ্যকে সমুন্নত রেখেছেন শেষ অবধি সফল হতেও তাঁর সময় লাগেনি। ৩০ লাখ বৃক্ষরোপণের উৎসব যাত্রায় তিনি যে মঙ্গলযোগ জাতিকে উপহার দিলেন আগামী প্রজন্ম তার যথার্থ অনুগামী হয়ে মুক্তিযুদ্ধ আর যোদ্ধাদের কাল থেকে কালান্তরে পৌঁছে দেবে এই বিশ্বাস যেমন প্রধানমন্ত্রীর একইভাবে সাধারণ মানুষেরও। ২০১৮ সালের নির্বাচনই শুধু নয়, ২০২০ সালে জাতির জনকের জন্মশতবর্ষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে আরও একটি মহিমান্বিত শুভ অধ্যায়। ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বহু কাক্সিক্ষত আর প্রত্যাশিত পর্বগুলো যেন সর্ববাঙালী সমৃদ্ধির গতিধারায় যথার্থভাবে উৎসবে, আয়োজনে উপভোগ করতে পারে সেই অপেক্ষায় পুরো জাতি। আর দেশের সফল কর্ণধার শেখ হাসিনা সেই সুবর্ণ অভিযাত্রায় নিরন্তর এগিয়ে যাবেন- এই প্রত্যাশা সবার। লেখক : সাংবাদিক
×