ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাকিব-মুস্তাফিজের টেস্ট খেলতে না চাওয়া প্রসঙ্গে আকরাম খান

‘এমনটি হওয়া উচিত নয়’

প্রকাশিত: ০৬:৩১, ২২ জুলাই ২০১৮

‘এমনটি হওয়া উচিত নয়’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট খেলতে চান না সাকিব আল হাসান ও মুস্তাফিজুর রহমান। বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনের এমন বক্তব্যের পরই সবখানে এই একই আলোচনা। কিন্তু সাবেক অধিনায়ক, বিসিবি পরিচালক ও বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছেন। তিনি মনে করছেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজে বাংলাদেশ টেস্ট দলের পারফর্মেন্স খারাপ হওয়াতেই এত আলোচনা হচ্ছে। সঙ্গে এও জানিয়ে দিয়েছেন, যদি কেউ কোন ফরমেটে খেলতে না চায়, এটা হওয়া উচিত নয়। কোনভাবেই তা ঠিক নয়। শনিবার আকরাম জানান, ‘টেস্টের পারফর্মেন্স ভাল হয়নি দেখেই আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। যেহেতু আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আমরা ভাল করতে পারিনি, সেই কারণে আলোচনা হয়েছে। মাঝে মধ্যে খারাপ পারফর্মেন্স হতেই পারে, তবে এত খারাপ হবে সেটি চিন্তা করিনি। এখান থেকে কিভাবে আমরা বের হয়ে আসব সেটি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। সামনে আমাদের ওয়ানডে এবং টি২০ আছে। সেগুলোতে আমরা কিভাবে ভাল করতে পারি সেটি নিয়েই আলাপ হচ্ছে।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘যখনই আপনি খারাপ খেলবেন, তখনই আপনাকে নিয়ে কথা উঠবে। আর সত্যি কথা বলতে কি লঙ্গার ভার্সনে অর্থাৎ টেস্টে ভাল করার ব্যাপারটি নির্ভর করে অনেকটা আপনার বোলারদের ওপর। যেহেতু প্রথম ইনিংসে আমরা ব্যাটিংয়ে অনেক খারাপ করেছি সুতরাং বোলিংয়ে ভাল করার দরকার ছিল। এর আগে কিন্তু একটি দল হিসেবে আমরা টেস্টে ভাল খেলেছি। নিউজিল্যান্ড, ভারত, শ্রীলঙ্কা, শততম টেস্ট যেটি জিতেছি। তো এখন খারাপ সময় যাচ্ছে, তবে এত যে খারাপ সামনেও যাবে এমনটা নয়। ওয়ানডেতে আমরা মোটামুটি একটি ভাল অবস্থানে আছি। তবে আমাদের টেস্ট এবং টি২০তে আরও উন্নতি করতে হবে।’ সাকিবের টেস্ট না খেলতে চাওয়ার প্রসঙ্গ উঠতেই আকরাম খান বলেন, ‘সে তো টেস্ট খেলছে। আর টেস্টের অধিনায়কও সে। সে কিন্তু বলেনি যে সে খেলতে চায় না। বোর্ড প্রেসিডেন্ট যা বলেছে এই ব্যাপারে আমি পুরোপুরি জানি না। সাকিব আমাদের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ একজন ক্রিকেটার। আমাদের ক্রিকেট যে অবস্থায় আছে, আমি মনে করি যে তিনটি ফরমেটই কিন্তু আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।’ কেউ যদি কোন ফরমেটে খেলতে না চায় তা কোনভাবেই ঠিক নয় বলেও জানান আকরাম, ‘এমনটা আসলে হওয়া উচিত না। আমার নিজের কাছে শুনেও ব্যাপারটি খারাপ লাগল।’ মুস্তাফিজকে নিয়ে আকরাম বলেন, ‘সে মাত্র দুইবার বাইরে খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েছে। সবসময় নয়। ইনজুরি তো আর ইচ্ছাকৃতভাবে হয় না। ও’ কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করছে নিজেকে ফিরে পেতে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে চারদিনের ম্যাচও খেলেছে। এবার যাচ্ছে (গেছে) ওয়েস্ট ইন্ডিজে। আমার কাছে মনে হয় পুরোপুরি ফিট আছে বিধায় সে ম্যাচ খেলেছে এবং আগামীতে ভাল করবে বলে আশা করছি।’ ক্রিকেটারদের নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সেই আলোচনার প্রসঙ্গ উঠতেই আকরাম ক্রিকেটারদের পারফর্মেন্স নিয়ে আলোচনা হওয়ার বিষয়টি সামনে তুলে ধরেছেন, ‘ক্রিকেটারদের এখন অনেক ব্যস্ত সময় যাচ্ছে। মূল দল বর্তমানে সবাই ওয়েস্ট ইন্ডিজে রয়েছে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দেশে আমরা (‘এ’ দল) খেলেছি। এরপর আয়ারল্যান্ডে যাব। সবকিছু নিয়ে নির্বাচকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। শ্রীলঙ্কা সিরিজের পরপরই আয়ারল্যান্ডে ২৬ অথবা ২৭ তারিখে যাবে ‘এ’ দল। আলাপ-আলোচনা করা হচ্ছে ক্রিকেটারদের পারফর্মেন্স নিয়ে, যারা এখানে ভাল খেলছে। এরপর আয়ারল্যান্ডে ওয়ানডে এবং টি২০ আছে। এসব বিষয় নিয়েই আলোচনা চলছে।’ টেস্টে আলাদা দল গঠন করার কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি। কিন্তু আকরাম মনে করছেন সেই অবস্থা নেই, ‘টেস্টে আলাদা দল গঠনের মতো অবস্থা আমাদের এখনও হয়নি। যেহেতু আমাদের অপশনটি অনেক কম। হিসেব করলে দেখবেন যে ৮০ ভাগ ক্রিকেটার কিন্তু তিন ফরমেটেই খেলছে। আপনার তো অপশনটি থাকতে হবে, তাহলে আলাদা দল তৈরি করা যাবে।’ পেসাররা প্রচুর পরিমাণে ইনজুরিতে পড়ছেন। সর্বশেষ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে শফিউল ইসলামও ইনজুরিতে পড়েছেন। এ নিয়ে কোন পরিকল্পনা? আকরাম জানান, ‘আমাদের চেষ্টা চলছে। এই মুহূর্তে যারা জাতীয় দলে আছে এবং যাদের আমরা দ্বিতীয় লিস্টে রেখেছি ওদের মধ্যে কিন্তু ছয়জন ইনজুরিতে। ব্যাপারটি হলো শুধু পারফর্মেন্স নয়, ফিটনেস নিয়েও কাজ করতে হবে ওদের। সেদিক দিয়ে অনেক গ্যাপ আছে। সেক্ষেত্রে ব্যাডলাক। এরপরও আমরা চেষ্টা করছি। এই বছরে আমাদের অনেকগুলো সফর হয়েছে। ‘এ’ দলের সফর আছে, হাইপারফর্মেন্সের সফর হবে শ্রীলঙ্কায়। আমার মনে হয় ফিটনেসটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আগের তুলনায় আমাদের ফাস্ট বোলারের লিস্টটা লম্বা হয়েছে, তবে ইনজুরি সমস্যা বেশি রয়েছে।’ দেশের বাইরে খেলতে গেলেই বিপদে পড়ে দল। উইকেটই এর প্রধান কারণ। আকরাম নিজ দেশে পাওয়া সুবিধার কথাও তুলে ধরে বলেছেন, ‘আমরা কিন্তু কক্সবাজার, সিলেটে বাউন্সি উইকেট বানিয়েছি। এ বছর থেকে আমরা সেখানে খেলছি। এটি মানিয়ে নিতে সময় লাগবে। ইংল্যান্ড এখানে এসে আমাদের সঙ্গে হারলো না উইকেটের জন্য? হোম এ্যাডভান্টেজ কিন্তু সবখানেই থাকে। বাইরে গিয়ে এ ধরনের খেলার প্রত্যাশা করাটাও ঠিক হবে না। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। এখন বাউন্সি উইকেট বানানোর চেষ্টা করছি। পাশাপাশি মানসিকতার দিকটিও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। দিন শেষে যতোই সুবিধা দিন, ক্রিকেটারদের কিন্তু মাঠে গিয়ে পারফর্ম করতে হবে। আমরা আমাদের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। বাকিটা ওদের ওপর। ওরাও যদি চেষ্টা করে তাহলে একটা সময় ভাল খেলবে। এই দলটিই কিন্তু গত চার, পাঁচ বছর চমৎকার ক্রিকেট খেলে আসছে। হয়তোবা এই সময়টা খারাপ যাচ্ছে, তবে ইনশাল্লাহ আমরা আবারও তাড়াতাড়ি ফিরে আসব।’
×