ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মহিলা হকি লীগ আয়োজনের উদ্যোগ

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২২ জুলাই ২০১৮

মহিলা হকি লীগ আয়োজনের উদ্যোগ

রুমেল খান ॥ পুরুষ হকির বিভিন্ন আসর মোটামুটি নিয়মিতই হয় বাংলাদেশে। তবে সে তুলনায় মহিলা হকির আসর অনুষ্ঠিত হয় না বললেই চলে। যাকে বলে বিন্দুতে সিন্ধু। বিস্ময়কর ব্যাপার হচ্ছেÑ দীর্ঘ ৩০ বছর পর ২০১২ সালে দ্বিতীয়বারের মতো মহিলা হকি মাঠে গড়িয়েছিল। ১৯৭৭ সালে। গঠিত হয়েছিল ওম্যান্স উইং হকি দল। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের প্রথম কোন হকি দল। সে দলে ছিলেন লাভলী, পুতুল, খুকী, হামিদা, মিউরেল, নাসিমা, কস্তরী, শাকিলা, ডলি ক্রুজসহ আরও অনেকে। তাদের সময়ে অনেক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ঢাকায় মওলানা ভাসানী স্টেডিয়ামে ঘাসের মাঠে গড়িয়েছিল হকি প্রতিযোগিতা। চলেছিল ১৯৮২ পর্যন্ত। সেই শেষ। তারপর কালের গর্ভে হারিয়ে যায় ৩০টি বছর। মহিলা হকিও হারিয়ে যায় দৃশ্যপটের অন্তরালে। মহিলা হকি নিয়ে ক্রীড়াপ্রেমীরা প্রশ্ন তুলেছেনÑ আজ পর্যন্ত আমাদের কোন জাতীয় মহিলা হকি দল গঠন করা হয়নি! ব্যাপারটা অত্যন্ত দুঃখজনক সত্য। মাঝে মধ্যে ফেডারেশন নামমাত্র কয়েকটা জেলা নিয়ে শুধু টুর্নামেন্ট করেই দেশের মহিলা হকি নিয়ে তাদের সব দায়িত্ব সারে। বাহফে র?্যাঙ্কিংয়ে এগোতে চায়। কিন্তু তারা কী জানে মহিলা হকি নিয়ে আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের (এফআইএইচ) অনেক লোভনীয় প্রস্তাব আছে? একটি দেশের পুরুষ জাতীয় দলের পাশাপাশি যদি মহিলা হকি দল থাকে তাহলে আন্তর্জাতিক হকি র?্যাঙ্কিংয়ে রেটিংয়ে অতিরিক্ত কিছু বোনাস পয়েন্ট পাওয়া যায়। এছাড়া মহিলা হকি দল গঠন করতে পারলে এফআইএইচ থেকে বাহফে অনেক বিশেষ অনুদানও পেতে পারে। বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা হকি দল গঠনের জন্য সবার আগে সব ক্লাবের অংশগ্রহণে প্রিমিয়ার মহিলা হকি লীগ আয়োজন করতে হবে (যেটি আজ পর্যন্ত হয়নি)। এছাড়া জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ টুর্নামেন্ট করলে সেখানে দেশের ৬৪ জেলা মহিলা হকি দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। যাহোক, অনেক দেরিতে হলেও দেশের আট বিভাগের আটটি নারী দল নিয়ে হকি লীগ শুরু হবে চলতি মাসের শেষ সপ্তাহে। তবে তার আগে হন্য হয়ে পৃষ্ঠপোষক খুঁজছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন (বাহফে)। এই লক্ষ্যে প্রস্তাব দেয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে। এরই মধ্যে ক্রীড়া পরিদফতরের সহযোগিতায় করা হয়েছে নারী হকি খেলোয়াড় অন্বেষণ। সারাদেশ থেকে বাছাই করে যে প্রাথমিক দল করা হয়েছে, তার পরিচর্যা করলে দেশের জন্য তারা পদক নিয়ে আসতে সক্ষম বলে মনে করেন ফেডারেশন কর্তারা। কোচ-খেলোয়াড়দের পাশাপাশি মাঠে হাজির হয়েছেন বেশ কয়েকজন কর্মকর্তাও। মঙ্গলবার পাঁচটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে দক্ষিণ কোরিয়া যাবে বাংলাদেশ জাতীয় হকি দল। তাই শেষদিকে নিজের শিষ্যদের নিয়ে অনুশীলনে মনোযোগী মালয়েশিয়ান কোচ গোপীনাথান কৃষ্ণমূর্তি। নয়দিনের সফরে জাতীয় দল থাকবে কোরিয়া। এই সময় খালিই থাকবে দেশের একমাত্র হকি স্টেডিয়াম (মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়াম)। এই সুযোগে মেয়েদের নিয়ে একটি টুর্নামেন্ট করার ইচ্ছা হকি ফেডারেশনের। তবে সেক্ষেত্রে পৃষ্ঠপোষক খুঁজছে ফেডারেশন। কেবল স্পন্সর মিললেই মাঠে গড়াবে নারীদের হকি লীগ। এর আগে ভারত গিয়েছিলেন জিমি-চয়নরা। সেই সুযোগে সারাদেশ থেকে নারী খেলোয়াড় বাছাই করে একটি দল গঠন করে ক্রীড়া পরিদফতর। তাদের পরিচর্যা করলে দেশের জন্য সম্মান বয়ে আনবে বলে মনে করেন হকি ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এহসান রানা। হকিতে দেশের মেয়েদের আগ্রহ কম হলে আটটি দল গঠন করতে সমস্য হবে না বলে ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। এদিকে আগামী সোমবার মহাখালীর ফ্যালকন হলে অনুষ্ঠিত হবে ফেডারেশনের গবর্নিং বডির সভা। যেখানে বেশ কয়েকটি এজেন্ডা প্রাধান্য পাবে। তবে এখানেও সুরাহা হচ্ছে না হকি লীগের মোহামেডান-মেরিনারের শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের জটিলতা। কোরিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ হকির দল ঘোষণা ॥ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচের জন্য ১৮ সদস্যের দল ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশন। দক্ষিণ কোরিয়া জাতীয় দলের বিপক্ষে পাঁচটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান গেমসকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন থেকে প্রস্তুতি নিচ্ছে হকি দলের প্রাথমিক স্কোয়াডের সদস্যরা। ৩০ সদস্যের দল নিয়ে কোচ গোপীনাথান কৃষ্ণমূর্তির অধীনে অনুশীলন শুরু করে তারা। ২৪ আগস্ট প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে দেশ ছাড়বে ১৮ সদস্যের হকি দল। মূল দলের বাইরে অপেক্ষমাণ তালিকায় রাখা হয়েছে আরও ছয় খেলোয়াড়। সিনিয়র এবং জুনিয়রদের মিশ্রণে গড়া হয়েছে দল। এশিয়ান গেমসের কন্ডিশনের কথা বিবেচনায় রেখে ভাল করতে চেষ্টা করছে বাহফে। দলের খেলোয়াড়রা হলেন : অসীম গোপ, আবু সাঈদ নিপ্পন, মামুনুর রহমান চয়ন, ইমরান হাসান, খোরশেদুর রহমান, ফরহাদ আহমেদ শিটুল, আশরাফুল ইসলাম, সোহানুর রহমান সবুজ, সারোয়ার হোসেন, রোমান সরকার, নাঈম উদ্দিন, ফজলে হোসেন রাব্বি, রাসেল মাহমুদ জিমি, পুস্কর খিসা মিমো, মিলন হোসেন, মাইনুল ইসলাম কৌশিক, আরশাদ হোসেন, কামরুজ্জামান। স্ট্যান্ডবাই হিসেবে আছেন : দ্বীন ইসলাম ইমন, বিপ্লব কুজুর, হাসান যুবায়ের নিলয়, শফিউল ইসলাম শিশির, মাহবুব হোসেন, রাজীব দাস। টিম লিডার : রফিকুল হক। টেকনিক্যাল ম্যানেজার : মোস্তফা জামান। ম্যানেজার : মোহাম্মদ ইউসুফ। কোচ : গোবিনাথন কৃষ্ণমূর্তি।
×