ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মিরপুরের এক বাড়িতে ‘গুপ্তধনের’ সন্ধানে খোঁড়াখুঁড়ি

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২২ জুলাই ২০১৮

মিরপুরের এক বাড়িতে ‘গুপ্তধনের’ সন্ধানে খোঁড়াখুঁড়ি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ কথিত গুপ্তধনের সন্ধানে রাজধানীর মিরপুরের একটি বাড়িতে খোঁড়াখুঁড়ি করেছে ঢাকার জেলা প্রশাসন। বাড়িটির ভেতরের দুইটি কক্ষে সাড়ে চার ফুটের মতো খনন করার পরেও কিছুই পাওয়া যায়নি। খোঁড়াখুঁড়িতে বাড়িটির স্থাপনা নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় কথিত গুপ্তধন সন্ধান কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। বাড়িটির সার্বিক অবকাঠামো পর্যবেক্ষণ শেষে বিশেষজ্ঞদের দেয়া পরামর্শ মোতাবেক পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। সে পর্যন্ত খনন কাজ বন্ধ থাকার পাশাপাশি বাড়িটি পুলিশ হেফাজতে থাকবে বলে ঢাকার জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এদিকে গুপ্তধনের সন্ধানে খোঁড়াখুঁড়ির সময় শত শত উৎসুক নারী-পুরুষ-কিশোর-কিশোরী ও শিশু বাড়িটির চারদিকে অবস্থান নিয়েছিল। শেষ পর্যন্ত কিছুই না পাওয়ায় বিরস মুখে তাদের চলে যেতে হয়েছে। তবে বাড়িটিতে থাকা কথিত গুপ্তধন সম্পর্কে আশপাশের উৎসুক বাসিন্দাদের আগ্রহ কমেনি। মিরপুর মডেল থানার ওসি দাদন ফকির জনকণ্ঠকে বলেন, গত ১০ জুলাই তৈয়ব নামের এক ব্যক্তি কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে ঢাকায় এসে মিরপুর-১০ নম্বরের সি ব্লকের ১৬ নম্বর সড়কের ১৬ নম্বর বাড়িতে গুপ্তধন থাকার দাবি করে থানায় একটি জিডি করেন। তার দাবি, বাড়িটি তার আত্মীয়র। বাড়িটিতে দুই মণেরও বেশি স্বর্ণালঙ্কার আছে। বাড়িটির মূল মালিক দিলশাদ খান। তিনি ১৯৭১ সালে পাকিস্তানে চলে যান। সৈয়দ আলম নামে তার এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আছেন। তিনি তার দূর সম্পর্কের আত্মীয়ও। আলমও পাকিস্তানে থাকেন। মাঝে মধ্যে দেশে আসেন। বর্তমানে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। পাকিস্তানে থাকাকালে আলমকে এ তথ্য দেন দিলশাদ। তৈয়বও আলমের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তার মাধ্যমে খবর পেয়ে মাটির নিচে লুকিয়ে রাখা এ সম্পদ নিতে তিনি টেকনাফ থেকে ঢাকায় আসেন। অন্যদিকে বাড়িটির বর্তমান মালিক দাবিদার ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলামের ভাষ্য, তিনি আট বছর আগে ২০১০ সালে সেলিম রেজা নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে বাড়িটি কিনেন। বাড়িটি দেখভাল করছেন শফিকুল ইসলাম ও সুমন নামের দুজন কেয়ারটেকার। পাশাপাশি বাড়িটিতে ঘর তুলে ভাড়াও দেয়া হয়েছে। সম্প্রতি বাড়িটি ভেঙ্গে নতুন করে নির্মাণ কাজ করা হবে বলে ভাড়াটিয়াদের চলে যেতে বলা হয়। তিনি পল্লবীতে আরেকটি বাড়িতে পরিবার নিয়ে থাকেন। বাড়িতে গুপ্তধন থাকার বিষয়ে কে বা কারা থানায় জিডি করেন। এরপর গত ১২ জুলাই রাতে জোর করে কয়েক যুবক ওই বাড়িতে ঢোকার চেষ্টা করে। এ বিষয়ে তিনি মিরপুর মডেল থানায় একটি জিডি করেন। জিডিতে তিনি বাড়ির মাটির নিচে যদি কোন গুপ্তধন থাকে, তবে তা উদ্ধারের আহ্বান জানান। এ সংক্রান্ত সকল ব্যয় তিনি বহন করবেন বলেও জানান। এমন ঘটনার পর পরই পুলিশ দিয়ে বাড়িটির নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। পাল্টাপাল্টি এমন দাবির প্রেক্ষিতে আদালত বিষয়টি নিশ্চিত হতে একজন ম্যাজিস্ট্রেটকে নিয়োগ দেয়। শনিবার সকাল দশটার দিকে ঢাকা জেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনোয়ারুজ্জামানের উপস্থিতিতে বাড়িটিতে খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হয়। খননে অংশ নেন ২০ জন দিনমজুর। তার আগে সকাল থেকেই পুলিশের ৩০ সদস্য বাড়ির বাইরে ভেতরে ও আশপাশে অবস্থান নেন। প্রায় পৌঁনে ২ কাঠা জমির ওপর বাড়িটি নির্মিত। দুই পাশে মোট ৭টি ঘর ও একটি রান্নাঘর এবং পাশে একটি টয়লেট। বাড়ির ভেতরের পাশাপাশি দুটি ঘরে খোঁড়া হয়। মিরপুর মডেল থানার ওসি দাদন ফকির শনিবার বিকেলে জনকণ্ঠকে জানান, প্রায় সাড়ে চার ফুট খনন করার পরেও মাটির নিচ থেকে কিছুই উদ্ধার হয়নি। উপরন্ত বাড়িটির অবকাঠামো নড়বড়ে হয়ে পড়েছে। বাড়িটি ধসে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে বিকেল চারটা নাগাদ খনন কাজ সাময়িকভাবে স্থগিত করার নির্দেশ দেন দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ মোতাবেক গুপ্তধনের সন্ধানে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে। সে পর্যন্ত বাড়িটি পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন দায়িত্বরত ম্যাজিস্ট্রেট।
×