ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট রিপোর্ট

তাপমাত্রা বাড়ছেই-চলতি বছর বিশ্ব উষ্ণায়নের

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ২২ জুলাই ২০১৮

তাপমাত্রা বাড়ছেই-চলতি বছর বিশ্ব উষ্ণায়নের

সমুদ্র হক ॥ আকাশে মেঘের আচরণ বিরূপ। মেঘ দেখে কিছুই বলা যায় না। তাপমাত্রা শুধু বেড়েই চলেছে। আষাঢ়ের শুরুতে ছিল টানা বৃষ্টি। তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়েই ছিল। ওই সময়ে স্বাভাবিকের চেয়ে ২০ শতাংশ বেশি বৃষ্টিপাত হয়, এই হিসাব আবহাওয়া বিভাগের। তারপরই আবহাওয়া ওলটপালট হতে শুরু করে। এই সময়ে খরতাপ। আবার সাদা মেঘে তাপপ্রবাহ। মাঝে মধ্যে কালো মেঘ দেখা যায়। বেশিক্ষণ থাকে না। ছাই রং হতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পর রোদের ঝাঁজ। বাইরে বের হওয়া যায় না। আবহাওয়াবিদদের কথা : মৌসুমি বায়ু অনেকটাই দুর্বল। বঙ্গোপসাগর থেকে বাতাস আসছে না। দেশের প্রায় প্রতিটি এলাকায় বৃষ্টিপাত কমেছে। তাপমাত্রাও বেড়েছে। দেশের এই আবহাওয়া বৈশি^ক আবহাওয়ার চেয়ে কোন অংশে কম নয়। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ইন্টারন্যাশনাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট এক অশনি সঙ্কেত দিয়েছে : এ বছর হবে বিশ্বে উষ্ণায়নের বছর। যার ভয়াবহ প্রভাব পড়বে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে। বাংলাদেশ ও ভারতে এ যাবতকালের সর্বোচ্চ তাপপ্রবাহ বইতে থাকবে। যা হবে দীর্ঘস্থায়ী। ভারতের আবহাওয়া গবেষণা বিভাগ ইতোমধ্যে তীব্র দাবদাহের সতর্কতা দিয়েছে। যা ৫০ ডিগ্রী সেলসিয়াস অতিক্রম করতে পারে। বাংলাদেশেও দাবদাহের সঙ্গে দেখা দিতে পারে তীব্র খরা। কিছুদিন ধরেই বাংলাদেশের আবহাওয়া অনেকটা মরু অঞ্চলের মতো। তারপরও বৈশ্বিক উষ্ণতার আভাস আরও খানিকটা ভাবিয়ে তুলেছে। দেশে বর্তমানে কোন ঋতুই ঠিকমতো চেনা যায় না। শীতের প্রতীক্ষা কোন ফল দেয় না। মাঘ মাস এসেছিল চেনা যায়নি। চৈত্রের শেষ সপ্তাহে বর্ষা। তারপর থেমে গেল। আষাঢ়ে বৃষ্টি বাড়ল। এরপর আর নেই। তারপর অতি তাপমাত্রার সঙ্গে খরা। শ্রাবণ বর্ষাকাল। বর্ষার দেখা নেই। শরত হেমন্ত ঋতু শুধু কাব্যে। গ্রীষ্মটা একটু জানান দেয়। এবারের গ্রীষ্মের দাবদাহ তেমন ছিল না। শ্রাবণের দাবদাহ গ্রীষ্মের দাবদাহের চেয়ে বেশি। শরতের তাপ কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকে তা ভাবছেন জলবায়ুর বিজ্ঞানীগণ। প্রকৃতির স্বাভাবিক আচরণ ঠিক থাকছে না। দিনে দিনে উষ্ণ হচ্ছে বায়ুম-ল। যত দ্রুত উষ্ণতা বাড়ছে গত হাজার বছরেও তা বাড়েনি। বিজ্ঞানীগণ যে শঙ্কার তথ্য দিয়েছেন তা হলো : গ্রীষ্ম ম-লীয় পর্যায়বৃত্ত পরিবর্তনে (যাকে বলা হয় এল নিনো) সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা অন্তত এক মিটার বেড়ে তাপমাত্রা বিশ্বের বিপজ্জনক মাত্রার কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। যা ডেকে আনবে বড় ধরনের বিপর্যয় । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইনস্টিটিউট ফর ক্লাইমেট এ্যান্ড সোসাইটির ক্লাইমেট প্রেডিকশন সেন্টার এবং এ ধরনের ভারতের কয়েকটি কেন্দ্র জানাচ্ছে, চলতি বছর হবে সবচেয়ে উষ্ণতম বছর। এ দিকে জাতিসংঘের বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার খবর চলতি বছর পূর্বের সকল সময়ের চেয়ে তাপমাত্রা বেড়ে যেতে পারে। সংস্থার মহাপরিচালক বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতার মাত্রা প্রতি বছর একটু করে বাড়ছে। এমন অবস্থা থাকলে নিকট দিনে বড় ধরনের অনেক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল এ্যারোনটিকস এ্যান্ড স্পেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসা) ও ন্যাশনাল ওসেনিক এ্যান্ড এটমোসফেরিক এ্যাডমিনি-স্ট্রেশনের (নোয়া) ক্লাইমেট ডাটা সেন্টার চলতি বছরকে বিশ্বে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রার আভাস দিয়েছে। যার প্রভাবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার দেশগুলো বিশেষ করে বাংলাদেশ ভারত নেপাল শ্রীলঙ্কায় কৃষি ভূমি, জীববৈচিত্র্য, রোগব্যাধিসহ নানা বিপর্যয়ের মুখে পড়তে পারে। ফসল উৎপাদনে ব্যাঘাত ঘটতে পারে। সেচের পানি উত্তোলন সহজ হবে না। পানির স্তর অনেক নিচে চলে যাবে। প্রভাব পড়বে আবাদ কার্যক্রমে। ভূগর্ভ থেকে সুপেয় পানি প্রাপ্তি স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকবে না। এই অবস্থায় সবচেয়ে ভয়াবহ সঙ্কটে পড়বে রাজধানী ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের মানুষ। বিজ্ঞানীরা বলছেন গ্রীষ্মম-লীয় এল নিনোর প্রভাবেও এমনটি হচ্ছে। আর লা নিনা হলো তার উল্টোটা। চলতি বছর বৈশ্বিক আবহাওয়ার তীব্র উষ্ণতার চরম বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ হলো এল নিনো। এই এল নিনোর প্রভাবে প্রশান্ত মহাসাগর ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের পানি বর্তমানের চেয়ে এক ডিগ্রী সেলসিয়াসেরও বেশি গরম হয়ে উঠবে। গত শতকের এই সময়ের তাপমাত্রা পর্যালোচনা করে জানা যায়, গত বছর তাপমাত্রা ১ দশমিক ২২ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেশি ছিল। চলতি বছর এই তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। দেশে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার এক রেকর্ড থেকে জানা যায়, ১৯৭২ সালের মে মাসের শেষে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছিল রাজশাহীতে। এর ২৩ বছর পর ১৯৯৫ সালের এপ্রিল মাসে ছিল ৪৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ২০০৯ সালের এপ্রিল শেষে ছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ২০১৬ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চলতি বছর ২০ জুলাই (শুক্রবার) বগুড়ায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৭৮ শতাংশ। এর অর্থ হলো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম। তবে এর মধ্যেও একটি সুখবর দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। তারা বলছে, ২২ জুলাইয়ের পর বৃষ্টিপাত বেড়ে গিয়ে ভারি বর্ষা নেমে আসবে। এখন দেখা যাক কী হয়!
×