ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জোট সম্প্রসারণ নিয়ে বিএনপি বিপাকে

প্রকাশিত: ০৬:০২, ২২ জুলাই ২০১৮

জোট সম্প্রসারণ নিয়ে বিএনপি বিপাকে

শরীফুল ইসলাম ॥ জোট সম্প্রসারণ নিয়ে বিপাকে বিএনপি। না পারছে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতকে সামাল দিতে আবার না পারছে নতুন ৫ রাজনৈতিক দলের ইচ্ছে পূরণ করতে। এমন দোটানার মধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে শেষ পর্যন্ত ২০ দলীয় জোটের পরিধি বাড়ছে কি না তা নিয়ে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। সূত্র মতে, বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে চরম বেকায়দায় থাকা বিএনপি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিজেদের জন্য বাড়তি সুবিধা আদায় করতে ২০ দলীয় জোট সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা নিয়ে কারাগারে যাওয়ার আগেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করে। তার ধারাবাহিকতায় দলের সিনিয়র নেতারা সে যোগাযোগ এখনও অব্যাহত রেখেছেন। জোটে আসতে আগ্রহী রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বিএনপি নেতাদের কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। কিন্তু বিএনপির এ জোট সম্প্রসারণের পথে বাধা হয়েছে জামায়াত। জানা যায়, জামায়াত মনে করছে ২০ দলীয় জোটে নতুন নতুন রাজনৈতিক দল আসলে জোটে তাদের আধিপত্য খর্ব হবে। কারণ, বর্তমানে এ জোটের ডজনখানেক দল বিভিন্নভাবে জামায়াতের সরাসরি সহযোগিতা পেয়ে থাকে। তাই জোটে কোন সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে জামায়াত যা চায় তারা সেটাই সমর্থন করে। তাই অনেক সময় জোটে বিএনপির ইচ্ছের চেয়ে জামায়াতের ইচ্ছেই প্রাধান্য পায়। এদিকে ভোট ব্যাংক ও রাজপথের শক্তি প্রদর্শনের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে দীর্ঘদিনের জোটসঙ্গী জামায়াতকে চটাতে চায় না বিএনপি। আবার নতুন করে জোটে ভিড়তে চাওয়া রাজনৈতিক দল বিকল্প ধারা, গণফোরাম, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, জেএসডি ও নাগরিক ঐক্য এর ইমেজের বিষয়টিকেও এড়িয়ে যেতে পারছে না বিএনপি। তাই জোট সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়ে নানান হিসাব নিকাশ করছে তারা। আবার জোট সম্প্রসারণের বিষয়টি নিয়ে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও দুই ধরনের চিন্তাভাবনা কাজ করছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক কেন্দ্রীয় নেতা জানান, গত কয়েকটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে দেশে জামায়াতের ভোট রয়েছে শতকরা প্রায় ১০ ভাগ। আর এ ভোট ব্যাংকের কারণে বিএনপি জোটে জামায়াত থাকলে ভোটের রাজনীতিতে তারা একটি বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে। এছাড়া মাঠের রাজনীতিতে জামায়াতের নেতা কর্মীরা অনেক সক্রিয়। জোটগত যে কোন নির্বাচনে দেখা যায় বিএনপির আগে জামায়াতের নেতাকর্মীরা ভোট কেন্দ্রের আশপাশে গিয়ে অবস্থান করে। এতে বিএনপি অতিরিক্ত সুবিধা পেয়ে থাকে। জোটে জামায়াত না থাকলে এ সুবিধাটা পাবে না বিএনপি। তাই জামায়াতকে পাশ কাটিয়ে কিছু করা যাচ্ছে না। আবার জামায়াতকে নিয়ে দেশ-বিদেশে অনেকের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে নতুন ৫টি রাজনৈতিক দলকে জোটে ভিড়ানো গেলে এ জোটের ইমেজ বৃদ্ধি পাবে। তাই জোট সম্প্রসারণের আগে সবকিছুই বিবেচনায় আনা হচ্ছে। আর এ কারণেই জোট সম্প্রসারণের কাজ কিছুটা বিলম্বিত হচ্ছে। সূত্র মতে, বিএনপির একটি অংশ চায় জামায়াতকে বাদ দিয়ে হলেও ইমেজ সম্পন্ন নতুন ৫টি রাজনৈতিক দলকে জোটে টানতে। এ ৫টি দল হচ্ছে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা অধ্যাপক ডাঃ একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্প ধারা, প্রখ্যাত আইনজীবী ও সাবেক আওয়ামী লীগ নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন গণফোরাম, বঙ্গবীরখ্যাত মুক্তিযোদ্ধা কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আসম আব্দুর রবের নেতৃত্বাধীন জাসদ এবং সাবেক ডাকসু ও চাকসু ভিপি মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন নাগরিক ঐক্য। জামায়াত বাদ দিয়ে এ ৫টি রাজনৈতিক দলের ইমেজ দেশের সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য। তবে দলের অপর অংশ মনে করছে এ ৫টি দলের রাজনৈতিক ইমেজ জামায়াতের চেয়ে ভাল হলেও সারাদেশে এ ৫টি দলের ১ শতাংশও ভোট নেই। তাই ভোটের রাজনীতিতে এই ৫ দল বিএনপির জন্য বাড়তি সুবিধা দিতে পারবে না। এছাড়া দীর্ঘদিনের মিত্র জামায়াতকে উপেক্ষা করে জোট সম্প্রসারণ করলে জামায়াত ক্ষুব্ধ হতে পারে। তাই সবার মন জুগিয়ে জোট সম্প্রসারণ করা যায় কি না এমন চেষ্টা চলছে।
×