ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

খেলাপী ঋণ কমাতে বিরোধ নিষ্পত্তিকে বিকল্প পন্থা হিসেবে বিবেচনার তাগিদ

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২২ জুলাই ২০১৮

খেলাপী ঋণ কমাতে বিরোধ নিষ্পত্তিকে বিকল্প পন্থা হিসেবে বিবেচনার তাগিদ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ থেকে উত্তরণের জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিকে (এডিআর) বিকল্প পন্থা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। সেই সঙ্গে বিদ্যমান অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ কে যুগোপযোগী ও সংস্কার করাও একান্ত আবশ্যক বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শনিবার ঢাকা চেম্বারে ‘খেলাপী ঋণ আদায়ে এডিআর’র ভূমিকা’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় এ অভিমত ব্যক্ত করা হয়। বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল আরবিট্রেশন সেন্টার (বিয়াক) এবং ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) যৌথভাবে এই সেমিনার আয়োজন করে। আইন, বিচার এবং সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ এবং সংসদ বিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। গোলটেবিল আলোচনায় মিডল্যান্ড ব্যাংক-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও আহসান-উজ জামান এবং ইউএ্যাব-এর বোর্ড অফ ট্রাস্টি’র বিশেষ উপদেষ্টা অধ্যাপক ইমরান রহমান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিয়াক-এর চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান গোলটেবিল বৈঠকটি সঞ্চালনা করেন। গোলটেবিল আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড-এর ইভিপি ও হেড অফ লিগ্যাল ব্যারিস্টার শাফায়াত উল্ল্যাহ। মূল প্রবন্ধে তিনি জানান, বর্তমানে ব্যাংকগুলোতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ প্রতিনিয়ত বাড়ছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং এ থেকে উত্তরণের জন্য তিনি বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) কে বিকল্প পন্থা হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। তিনি জানান, বর্তমানে বাংলাদেশের সামষ্টিক ব্যাংক ঋণের প্রায় ১১ শতাংশই খেলাপী ঋণ। তিনি ব্যাংক ঋণ বিষয়ক স্বাক্ষরিত চুক্তিসমূহে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি এবং মধ্যস্থতা প্রক্রিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, বিদ্যমান অর্থ ঋণ আদালত আইন ২০০৩ কে যুগোপযোগী ও সংস্কার করা একান্ত আবশ্যক। গোলটেবিল আলোচনার প্রধান অতিথি লেজিসলেটিভ এবং সংসদবিষয়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, বর্তমানে আদালতে অর্থ ঋণ বিষয়ক মামলার সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেক্ষেত্রে মামলা জট কমানো ও বিরোধ নিষ্পত্তিতে বিয়াক অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। তিনি আরও বলেন, গত ৭ বছর ধরে বিয়াক খেলাপী ঋণ, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি, মধ্যস্থতা, প্রশিক্ষণ প্রভৃতি কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। আমাদের অবশ্যই সকলের জন্য সমান আইনের শাসন নিশ্চিত করতে হবে এবং মামলা-মোকাদ্দমা জড়ানোর আগে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার আশ্রয় নেয়া গেলে অনেক ক্ষেত্রেই অহেতুক হয়রানি কমানো সম্ভব হবে। তিনি জানান, উন্নত দেশগুলোতে যেখানে ২ শতাংশ খেলাপী ঋণ রয়েছে, সেখানে বাংলাদেশে ১০ শতাংশের অধিক খেলাপী ঋণ বিদ্যমান আছে, যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি আরও বলেন, খেলাপী ঋণ কমাতে আইনের সংস্কারের প্রয়োজন হলে, সরকার তা করতে অত্যন্ত আগ্রহী। তিনি বলেন, খেলাপী ঋণ কমাতে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়, আইন মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংকার্স এ্যাসোসিয়েশন, অর্থ মন্ত্রণালয় এবং সকল ব্যাংকের উর্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ এ লক্ষ্যে একযোগে এগিয়ে আসতে হবে। বিয়াক চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান বলেন, সাম্প্রতি সময়ে খেলাপী ঋণ বৃদ্ধির বিষয়টি আমাদের দেশে একটি উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেলাপী ঋণের পরিমাণ কমানো সম্ভব হলে আমাদের দেশের আর্থিক খাতকে আরও শক্তিশালী করা সম্ভব হবে। তিনি জানান, এ লক্ষ্যে বিয়াক দেশের আর্থিক খাতের প্রতিষ্ঠান সমূহের সক্রিয়ভাবে সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেন, ২০১৮ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে খেলাপী ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৮৮৫ বিলিয়ন টাকা। তিনি জানান, বর্তমানে আমাদের মোট ঋণের ১০.৭৮ শতাংশ খেলাপী এবং ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে এর পরিমাণ ছিল ৯.৩১ শতাংশ। তিনি জানান, এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন দেশে খেলাপী ঋণের পরিমাণ খুবই কম যেমন; মালয়েশিয়ায় ১.৬ শতাংশ, ফিলিপাইনে ১.৯ শতাংশ, থাইল্যান্ড ও ইন্দোনেশিয়ায় ২.৯ শতাংশ, কম্বোডিয়ায় ২.৫ শতাংশ, শ্রীলঙ্কা ২.৬ শতাংশ এবং নেপালে ২ শতাংশ খেলাপী ঋণ রয়েছে। তিনি বলেন, খেলাপী ঋণের উচ্চ হারের কারণে ভাল গ্রহিতাবৃন্দ প্রয়োজনীয় ঋণ পাচ্ছেন না এবং উদ্যোক্তাবৃন্দ উচ্চ হারে ঋণ নিতে বাধ্য হচ্ছেন।
×