ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

২৬৫ টাকা দরে নর্দান জুটের শেয়ার বিক্রি করল আইডিবি

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ২২ জুলাই ২০১৮

২৬৫ টাকা দরে নর্দান জুটের শেয়ার বিক্রি করল আইডিবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ নর্দান জুট ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি লিমিটেড থেকে সম্পূর্ণ বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে নিয়েছে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক লিমিটেড (আইডিবি)। সম্প্রতি তাদের কাছে থাকা নর্দান জুটের ৩০ শতাংশ শেয়ার বিক্রি করে দিয়েছে আইডিবি। দ্বিপক্ষীয় চুক্তির মাধ্যমে আইডিবির কাস্টডিয়ানের কাছ থেকে স্থানীয় একটি এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির কাছে ২৬৫ টাকা দরে নর্দান জুটের শেয়ারগুলো স্থানান্তর করা হয়। পরবর্তীতে এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানিটি শেয়ারগুলো বাজারে বিক্রি করে দিয়েছে। স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিশ্রেণীর বিনিয়োগকারী এ শেয়ার কিনেছেন বলে জানা গেছে। জানা যায়, ইক্যুইটি সাপোর্টের অংশ হিসেবে আশির দশকে নর্দান জুটে বিনিয়োগ করেছিল আইডিবি। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে কোম্পানিটির সঙ্গে থাকার পর গত বছরের ডিসেম্বরে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) পাঠানো এক চিঠিতে নর্দান জুটের পর্ষদ থেকে ঐচ্ছিকভাবে পদত্যাগের কথা জানায় বিদেশী প্রতিষ্ঠানটি। এরপর চলতি বছরের ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আইডিবির পর্ষদ ত্যাগের পরিকল্পনা অনুমোদন করে নর্দান জুটের পর্ষদ। পর্ষদ থেকে পদত্যাগের পর কোম্পানির সাধারণ শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হয় আইডিবি। কোম্পানির পর্ষদ সদস্য হিসেবে ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রির সুযোগ না থাকলেও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারে পরিণত হওয়ার পর আইডিবির সে বাধা দূর হয়। আইডিবির কাছে থাকা নর্দান জুটের ৩০ শতাংশ শেয়ার কাস্টডিয়ান হিসেবে বিডিবিএল সিকিউরিটিজের কাছে গচ্ছিত ছিল। ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে বিডিবিএল সিকিউরিটিজের পক্ষ থেকে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কাছে আইডিবির হাতে থাকা নর্দান জুটের ৩০ শতাংশ বা ৬ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ শেয়ার সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান এ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের কাছে হস্তান্তরের প্রস্তাব দেয়া হয়। সংশ্লিষ্ট আইনকানুন যাচাই-বাছাই করে মার্চের শেষের দিকে বিএসইসির প্রস্তাবিত শেয়ার হস্তান্তর পরিকল্পনা অনুমোদন করে। শেয়ার হস্তান্তর পরিকল্পনা অনুসারে, নর্দান জুটের ৬ লাখ ৪২ হাজার ৫০০ শেয়ার ২৬৫ টাকা দরে এ্যালায়েন্স ক্যাপিটালের কাছে হস্তান্তর করা হয়। টাকার অংকে এর পরিমাণ ১৭ কোটি ২ লাখ ৬২ হাজার ৫০০। আইডিবির বিও হিসাব থেকে এ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল ও এর প্রাতিষ্ঠানিক গ্রাহকদের বিও হিসাবে স্টক এক্সচেঞ্জের মূল বোর্ডের বাইরে এসব শেয়ার হস্তান্তর করা হয়। পরবর্তীতে এ্যালায়েন্স ক্যাপিটাল এপ্রিলের প্রথমার্ধের মধ্যে আইডিবির কাছ থেকে কেনা নর্দান জুটের শেয়ার বাজারে বিক্রি করে দেয়। এর মধ্যে ডিএসইতে ১১ এপ্রিল ৪ লাখ ১৯ হাজার ২৯৫, ১২ এপ্রিল ২ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৫ ও ১৫ এপ্রিল ২ লাখ ৮৬ হাজার ১৫২টি নর্দান জুটের শেয়ার লেনদেন হয়। এর মধ্যে স্থানীয় কিছু ব্রোকারেজ হাউস ও ব্যক্তি শ্রেণীর বড় বিনিয়োগকারীরা এ শেয়ার কিনে নেয়। এদিকে পর্ষদ ত্যাগ ও শেয়ার বিক্রি করে চলে যাওয়ার বিষয়ে কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বলছে, আইডিবির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোম্পানিকে কিছুই জানানো হয়নি। তারা নিজেরাই সব কিছু করেছে। এমনকি গত বছরের ডিসেম্বরে পর্ষদ ছাড়ার বিষয়টি আমাদের না জানিয়ে সরাসরি ডিএসইকে চিঠি পাঠিয়ে জানিয়েছিল আইডিবি। চলতি হিসাব বছরের তৃতীয় (জানুয়ারি-মার্চ) প্রান্তিকে নর্দান জুটের শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৩ টাকা ৯৩ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ৩ টাকা ৯৭ পয়সা। ৩১ মার্চ কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ৬৩ টাকা ৮১ পয়সায়। এদিকে প্রথম তিন প্রান্তিকে (জুলাই ২০১৭-মার্চ ২০১৮) শেয়ারপ্রতি ১০ টাকা ৩৮ পয়সা লোকসান দেখিয়েছে কোম্পানিটি। যেখানে আগের বছর একই সময়ে ইপিএস ছিল ৪৪ পয়সা। ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৭ হিসাব বছরের জন্য ২০ শতাংশ নগদ ও ২০ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ দিয়েছে নর্দান জুট। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৫ টাকা ১৩ পয়সা। আগের হিসাব বছরে তা ছিল ৭২ পয়সা। ১৯৮৪ সালে যাত্রা করে নর্দান জুট। ব্যবসায় অংশীদার হিসেবে প্রায় শুরু থেকেই তাদের সঙ্গে ছিল উন্নয়ন সহযোগী আইডিবি। কোম্পানিটি পাটের সুতা প্রস্তুত ও রফতানি করে থাকে। প্রথমে একটি ইউনিটে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করে এলেও ২০১৬ সালের জুলাই থেকে দ্বিতীয় ইউনিটে পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্যিক উৎপাদনে যায় কোম্পানিটি।
×