ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ২২ জুলাই ২০১৮

সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত

কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইঙ্গিত দিয়েছে জর্দান। গত এক বছরের বেশি সময় ধরে দেশ দুটির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রায় তলানিতে রয়েছে। চরমপন্থী গ্রুপগুলোকে সহায়তার জের ধরে গতবছর জুন থেকে তেল সমৃদ্ধ ক্ষুদ্র উপসাগরীয় দেশটি এক ঘরে রয়েছে। কাতারকে এক ঘরের রাখার নেতৃত্ব দিয়েছে সৌদি আরব। মিডলইস্ট ক্রনিকল ও পেনিনসুলা কাতার। জর্দানের শ্রমমন্ত্রী সামির মুরাদ চলতি সপ্তাহে কাতার সফর করেন। কাতারে ১০ হাজার জর্দানির কর্মসংস্থান নিয়ে তিনি দোহার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেন। আগামী দুই মাসের মধ্যে ১ হাজার জর্দানি কাতারে যাবে। অন্যদিকে কাতারও জর্দানে ৫শ’ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। মুরাদের সঙ্গে জর্দানের শ্রম, উন্নয়ন ও সমাজকল্যাণ ইসা বিন সাদ আল নুআইমির যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়েছে। মুরাদ কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আলসানির সঙ্গেও সাক্ষাত করেছেন। এর আগে গতবছর ৫ জুন সন্ত্রাসবাদে মদদ দেয়ার অভিযোগে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে উপসাগরীয় সাত দেশ। কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্দান ও মিসর। পরে একই পদক্ষেপ নেয় সৌদি আরবে অবস্থানরত ইয়েমেনের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ও লিবিয়া। সৌদির আহ্বানে সাড়া দিয়ে সম্পর্কচ্ছেদ করেছে মালদ্বীপও। তবে এই আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে পাকিস্তান। সৌদি আরব, আমিরাত, বাহরাইন ও কাতার প্রভাবশালী আঞ্চলিক সংগঠন গালফ কো-অপারেশন কাউন্সিলের (জিসিসি)’র সদস্য। জিসিসি’র মধ্যে শুধু কুয়েত ও ওমানই কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখে। কয়েক বছর ধরে চলে আসা শীতল সম্পর্কের জের ধরে দুই সপ্তাহ আগে আল জাজিরাসহ কাতারের সংবাদমাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেয় মিসর, সৌদি আরব, বাহরাইন ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। বলা হয় কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল-থানি সৌদি আরবের সমালোচনা করে বক্তব্য দেন। তাঁর ওই বক্তব্য কাতারের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। এতে ক্ষুব্ধ হয় সৌদি আরব। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয়, এ ঘটনাই সৌদি আরবসহ অন্য পাঁচ দেশকে কাতারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করতে উৎসাহিত করে। কাতার বলে যে, দেশটির আমির শেখ তামিম সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ওই বক্তব্য দেননি। ২০১৪ সালে সৌদি আরব, বাহরাইন এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অভিযোগ তুলে কাতার থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতদের প্রত্যাহার করেছিল। কাতারের বিরুদ্ধে সৌদির এ পদক্ষেপের নেপথ্যে দুটি নিয়ামক কাজ করে। একটি হলো ইসলামি জঙ্গী সংগঠনগুলোর সঙ্গে কাতারের কথিত সম্পর্ক এবং সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা। যদিও কাতার ইসলামিক স্টেটের (আইএস) বিরুদ্ধে লড়াইয়ে মার্কিন জোটে অংশ নিয়েছে। উপসাগরীয় দেশগুলোতে মিসরের রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। যদিও সৌদি আরব নিজেই সিরিয়ায় কট্টরপন্থী সংগঠনসহ ইসলামি বিদ্রোহীদের মূল সমর্থক। কাতারের ওপর এই পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। আরব আমিরাতের জাতীয় বিমান পরিবহন সংস্থা ইত্তিহাদ এয়ারওয়েজ কাতারে যাত্রী আনা নেয়া বন্ধ রেখেছে। দুবাইভিত্তিক এমিরেটস ও ফ্লাইদুবাইও একই পথ ধরেছে। কাতারের জনপ্রিয় বিমান সংস্থা কাতার এয়ারওয়েজও এই চার দেশে উঠানামা করত। তাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে কাতার। মধ্যপ্রাচ্যে প্রবেশের জন্য জর্দান, ইরান ও ইরাক এবং ইউরোপে যাতায়াতের জন্য ইরান বা তুরস্ক হয়ে যেতে হয়। কাতারকে একঘরে করে রাখার প্রভাব পড়ে তেল বাজারের ওপরও। তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কাতারের শেয়ার স্টকের মূল্য পড়ে যায়। মিডলইস্ট ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো চার্লস লিস্টার বলেছেন, কাতার খাদ্যদ্রব্য আমদানির জন্য সৌদি আরবের ওপর নির্ভরশীল। স্থলসীমান্ত বন্ধ হওয়ায় বড় সমস্যা না হলেও সাধারণ সৌদিদের খাদ্যের জন্য বেশি মূল্য গুণতে হয়। সিএনএনকে একজন আরব পর্যবেক্ষক বলেন, আরব দেশগুলো চায় ২০১৪ সালের মতো এবারও ক্ষমা চাক কাতার। অন্যদিকে আল-জাজিরায় সিনিয়র মধ্যপ্রাচ্য রিপোর্টার হাশেম আহেলবারা বলেন, ‘কাতার মনে করে এই সমন্বিত প্রচেষ্টা নেয়া হয়েছে কাতারকে আরও কোনঠাসা করার জন্য। শেষ পর্যন্ত কূটনৈতিক পর্যায়েই এই সঙ্কটের সুরাহা হতে হবে।’ জর্দানের সর্বশেষ পদক্ষেপ সেই ইঙ্গিতই দেয়।
×