ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এলএনজি গ্যাস কবে পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২১ জুলাই ২০১৮

এলএনজি গ্যাস কবে পাওয়া যাবে তা অনিশ্চিত

রশিদ মামুন ॥ তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) স্টোরেজ এবং রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) ৮৭ দিন আগে মহেশখালীতে নোঙ্গর করেছে। এর মধ্যে পাঁচ দফা সরবরাহের সময় নির্ধারণ করেও একবারও কথা রাখতে পারেনি এক্সিলারেট এনার্জি। সরবরাহ শুরুর আগেই মার্কিন কোম্পানিটি তালগোল পাকিয়ে ফেলায় শিল্পে গ্যাস সরবরাহের সরকারী সিদ্ধান্ত ঝুলে গেছে। ২৪ এপিল কাতার থেকে এলএনজি নিয়ে দেশে আসে এফএসআরইউটি। শুরুতে ২৬ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীকে দিয়ে এলএনজি প্রকল্পটি উদ্বোধন করানোর চিন্তা করছিল জ্বালানি বিভাগ। কিন্তু এলএনজি গ্যাসে রূপান্তর করে পাইপ লাইনে সরবরাহের সময়ই ত্রুটি ধরা পড়ে। এরপর পাইপ লাইনে ত্রুটি সারানোর কাজ শেষে এখন বলা হচ্ছে নোঙ্গরের শিকল পাইপ লাইনের সঙ্গে পেঁচিয়ে গেছে। সাগর উত্তাল থাকায় এই সমস্যা নিরসন করা আপাতত কঠিন। ফলে পুরো বিষয়টি এখন নির্ভর করছে আবহাওয়ার ওপর। সাগর শান্ত না হলে ত্রুটি সারিয়ে এলএনজি সরবরাহ সম্ভব নয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এলএনজি আসলে অন্তত ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধির ধারণা করা হচ্ছিল। যদিও জাহাজটি প্রতিদিন ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট এলএনজি গ্যাসে রূপান্তর করতে পারে। কিন্তু ক্ষমতার পুরোটা ব্যবহার করা সম্ভব না হলেও গড়ে অর্ধেক বা তার কিছুটা বেশি এলএনজিকে গ্যাসে রূপান্তর করা সম্ভব হতো। এক সঙ্গে ৩০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের সরবরাহ বৃদ্ধি পাওয়ার আশায় জ্বালানি বিভাগ শিল্পে সংযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সরবরাহ বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে পর্যায়ক্রমে সকল আবেদিত শিল্পে গ্যাস সংযোগ দেয়া হবে বলে ঘোষণাও আসে। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে সরকার আগের নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে পারছে না। এলএনজি সরবরাহ শুরু না হলে শিল্পে গ্যাস দেয়ার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। প্রসঙ্গত প্রথমে এলএনজি আসার পরপরই ২৬ এপ্রিল এরপর ১০ মে প্রথম দফায় এলএনজি সরবরাহের দিন ঠিক করা হয়। এরপর ২৫ অথবা ২৬ মে তৃতীয় দফায় আরও একবার এলএনজি সরবরাহের দিনক্ষণ ঠিক করা হলেও সরবরাহ শুরু করতে পারেনি এক্সিলারেট এনার্জি। এরপর জুনের দ্বিতীয় সপ্তাহ ৬ থেকে ১২ জুনের মধ্যে যে কোন একদিন এলএনজি সরবরাহের দিন নির্ধারণ করা হয়। পরে বলা হয় সব ত্রুটি সারানো হয়েছে জুলাই-এর ১০ তারিখের মধ্যেই এলএনজি পাইপলাইনে যাবে। কিন্তু এখন এসে অন্য কথা বলা হচ্ছে। সাগরে ভাসমান টার্মিনালের অবস্থান থেকে সাড়ে চার কিলোমিটারের সাবসি পাইপ লাইন দিয়ে এই গ্যাস জিটিসিএলের স্টেশনে আসবে। মূল সমস্যাটি এই সাড়ে চার কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে ছিল। জানা যায় সাড়ে চার কিলোমিটার পাইপ লাইনের মধ্যে দুটো ফ্রেঞ্জ (জোড়া) রয়েছে। পাইপ লাইনটিতে এক হাজার পিএসআই চাপে গ্যাস সরবরাহ করতে গেলে কোন সমস্যা হচ্ছিল না। কিন্তু যখনই দেড় হাজার পিএসআই চাপে গ্যাস সরবরাহ করা হচ্ছিল তখন একটি ফ্রেঞ্জ থেকে গ্যাস বাইরে বের হয়ে আসে। এই ত্রুটি ২৫ জুন সারানো হয়েছে বলে এর আগে জানায় আরপিসিএল। মহেশখালী জিটিসিএলের স্টেশন থেকে ৯১ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় জাতীয় গ্যাস গ্রিডে যোগ হবে। টার্মিনালটি প্রতিদিন ৪৬০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা হবে। ১৫ বছর ধরে চুক্তির আওতায় রিগ্যাসিফিকেশন চার্জ নেবে এক্সিলারেট এনার্জি। প্রতিদিন দুই হাজার ৭০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করে পেট্রোবাংলা। কিন্তু চাহিদার চেয়ে অন্তত এক হাজার মিলিয়ন ঘনফুট বেশি। দেশে ক্রমবর্ধমান চাহিদা বৃদ্ধির বিপরীতে গ্যাসের সঙ্কট দূর করতে সরকার এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়। প্রাথমিকভাবে কাতার এবং ওম্যান থেকে এলএনজি আমদানির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া আরও ৩২টি কোম্পানির কাছ থেকে এলএনজি আমদানি করা হবে। জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত দেশে সর্বোচ্চ বিদ্যুতের চাহিদা থাকে। এই সময়ের মধ্যে এলএনজি সরবরাহ করা সম্ভব হলে দেশ অন্তত ৫০০ থেকে ৭০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন বৃদ্ধি করা যেত। জুলাই-এর পর ক্রমান্বয়ে বিদ্যুতের চাহিদা কমতে শুরু করে। তখন গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ রাখলেও সমস্যা সৃষ্টি হয় না। ফলে চলতি বছর এলএনজির যে সুফল আশা করা হয়েছিল তা পাওয়া যায়নি।
×