ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২১ জুলাই ২০১৮

 নির্বাচনী প্রচারে তিন সিটি

বরিশালে বিএনপির দুর্গে নৌকার জোয়ার খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ এক সময়ে দক্ষিণাঞ্চলের বিএনপির দুর্গ হিসেবে পরিচিত বিভাগীয় শহর বরিশাল মহানগরী। এখনও এখানে বিএনপির বিশাল ভোট ব্যাংক থাকা সত্ত্বেও ৩০ জুলাইয়ের বরিশাল সিটি নির্বাচনকে সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নৌকার পালে হাওয়া লেগেছে। নির্বাচনের দিন যত ঘনিয়ে আসছে ততই বিএনপির দুর্গে এখন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও উন্নয়নের প্রতীক নৌকা। আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে ভোটারদের ভোটে নৌকার বিজয় এখন শুধু সময়ের ব্যাপার। এমন ভাষ্যই ভেসে বেড়াচ্ছে নগরীর ৩০ ওয়ার্ডের ভোটারদের মুখে মুখে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ধানের শীষের দুর্গে নৌকার পালে হাওয়া? এমন প্রশ্নের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ করছেন ভোটাররাই। সচেতন ভোটারদের মতে, বিএনপি ক্ষমতায় নেই। একাদশ জাতীয় নির্বাচনেও যে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে- তেমন কোন লক্ষণও নেই। এ সময় সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি দলীয় মেয়র থাকায় কোন উন্নয়ন হয়নি। তাই স্থানীয় উন্নয়নের জন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রতিই ভোটারদের আস্থা। সূত্র মতে, টানা ১০ বছর রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকায় নতুন প্রজন্মের ভোটাররা আওয়ামী লীগের প্রতি আস্থাশীল হয়ে উঠেছে। এবারের বরিশাল সিটি নির্বাচনে ভোটে যোগ হওয়া ৩০ হাজার নতুন ভোটারের অধিকাংশরাই নৌকার ভোটার বলে তথ্য রয়েছে। এছাড়া নৌকার মাঝি সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও তুলনামূলকভাবে বয়সের দিক থেকে তরুণ। নতুন ভোটাররা এ কারণে তার দিকেই বেশি আকৃষ্ট। পাশাপাশি নতুন ভোটারদের সার্বক্ষণিক পরিচর্যাও করছেন তিনি (সাদিক)। অন্য দিকে ধানের শীষের প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ারের সঙ্গে নতুন ভোটারদের বয়সের বিরাট ফারাক। তার (সরোয়ার) সঙ্গে নতুন ভোটারদের তেমন যোগাযোগ নেই বললেই চলে। বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হওয়ায় বছরের বেশিরভাগ সময় সরোয়ারকে রাজধানীতে থাকতে হয়। বরিশালের নতুন ভোটাররা তার নাগাল পান না। তাদের প্রতি তেমন আগ্রহীও নন সরোয়ার। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আগামী ৩০ জুলাই’র নির্বাচনে নতুন ভোটাররাই প্রার্থী বিজয়ের মূলশক্তি হয়ে দাঁড়াবে। সূত্র মতে, ভোটাররা চান বরিশালের উন্নয়ন, যা মজিবর রহমান সরোয়ারের পক্ষে আপাতত সম্ভব নয় বলে ভোটারদের বিশ্বাস। কারণ তার দল বিএনপি টানা ১২ বছর ধরে রয়েছে ক্ষমতার বলয়ের বাইরে। গত ২০১৩ সালের নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালকে ভোট দিয়ে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন নগরবাসী। বর্তমান মেয়র বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল গত ৫ বছরে দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করতে পারেননি। নগরীর সমস্যা সমাধানে তার কোন উদ্যোগ ছিল না। অথচ তার সময়ের বিদ্যমান সমস্যা দিন দিন আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। অনেকটা দায়সারাভাবেই পাঁচ বছর পাড়ি দিয়েছেন মেয়র কামাল। এমনকি সিটি কর্পোরেশনের উন্নয়ন বরাদ্দের বেশিরভাগই ভাগাভাগির অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। উন্নয়নের নামে গৃহীত বড় প্রকল্পগুলোর ঠিকাদারি বাণিজ্যের নেপথ্যে তার পুত্র কামরুল হাসান রুপনের সম্পৃক্ততা ছিল বলেও অভিযোগ রয়েছে। যা শুধু কামালকেই নয়, ডুবিয়েছে বিএনপিকেও। সাদিক আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ফুফাত ভাইয়ের ছেলে। বঙ্গবন্ধুর রক্ত তার শরীরে বহমান। সাদিকের পিতা মন্ত্রী পদমর্যাদায় থাকা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও দক্ষিণাঞ্চলের আওয়ামী লীগের একমাত্র কর্ণধর। এসব কারণেই উন্নয়নের স্বার্থে দলের চেয়ে প্রার্থীকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন নতুন, তরুণ ও সচেতন ভোটার থেকে শুরু করে তৃণমূলের সাধারণ ভোটাররা। এমন সমীকরণে ধানের শীষের দুর্গে এবারই নৌকার পালে গণজোয়ারের সৃষ্টি হয়েছে। যার চূড়ান্ত রূপ দেখা যাবে ৩০ জুলাই নির্বাচনের ফলাফলে। এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন প্রেসক্লাবের সভাপতি আলহাজ মোঃ আবুল কালাম আজাদ জনকণ্ঠকে বলেন, বরিশালের মানুষ উন্নয়ন চায়, শান্তি চায়। এ দুটো বিষয়কে মাথায় রেখেই তারা ভোট দেবে বলে আমার বিশ্বাস। ইভিএম নিয়ে দ্বিমত ॥ সিটি নির্বাচনে ইভিএম নিয়ে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ এবং বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার দ্বিমত পোষণ করেছেন। নির্বাচনে স্বচ্ছতার জন্য ইলেক্ট্রিক ভোটিং মেশিনের জন্য নৌকা মার্কার প্রার্থীর আগ্রহ থাকলেও অনিহা প্রকাশ করেছেন ধানের শীষের প্রার্থী। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মজিবর রহমান সরোয়ার জনকণ্ঠকে বলেন, ইভিএম পদ্ধতি জনগণের কাছে বোধগম্য নয়। ইভিএম ভোটের মাধ্যমে স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন, বিএনপির মেয়র প্রার্থী সুষ্ঠু ভোট নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তাই সুষ্ঠু ভোটের জন্য তার (সাদিক) নিজ কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতির ভোট প্রদানের জন্য আবেদন করা হয়েছে। সিটি নির্বাচনে সহরিটার্নিং অফিসার মোঃ হেলাল উদ্দিন জানান, ইভিএম পদ্ধতির মাধ্যমে ভোটগ্রহণে প্রার্থীদের শঙ্কার কারণ নেই। নগরীর চারটি ওয়ার্ডের ১১টি কেন্দ্রে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট নেয়া হবে। পরস্পরবিরোধী বক্তব্য ॥ নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের প্রচার ততই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে গোটা নগরী। আওয়ামী লীগ সমর্থিত নৌকা মার্কার মেয়র প্রার্থী সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, নির্বাচনকে ঘিরে জনগণের মাঝে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। বরিশালে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ বিরাজ করছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। অন্যদিকে হাত পাখার সমর্থক ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম (চরমোনাই পীর) সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন দুর্নীতিগ্রস্ত ও অসাধুদের কবলে বলে মন্তব্য করেছেন। . শান্ত মেজাজে লিটন, বুলবুলের সরে দাঁড়ানোর হুমকি মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ ভর বর্ষায় ভোট। তাই বৃষ্টি থেকে বাঁচাতে প্রার্থীরা তাদের পোস্টার লেমিনেটেড করেছিলেন। তবে বৃষ্টি তো নেই, উল্টো সূর্য দহনে পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে রাজশাহী। ঘাম ঝরা তীব্র গরম আর প্রখর সূর্য দহন উপেক্ষা করেই রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে জোর প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। শুক্রবার ছুটির দিনে সকাল থেকেই জমজমাট প্রচারে নামেন মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। ভোটের দিন দ্রুত ঘনিয়ে আসছে তাই দম ফেলার সময় নেই কারও। জয়ের লক্ষ্যে ভোটারদের ঘর পর্যন্ত ছুটে যাচ্ছেন সবাই। প্রচারের শেষ সময়ে এসে অনেকটায় উগ্র হয়ে উঠেছেন বিএনপির মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। প্রচারের মাঠে নানা অভিযোগের বয়ান শুধু তার মুখে। তবে পরিকল্পিত ও শান্ত মেজাজে ভোটারদের কাছে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। ভোটের মাঠ অনেকটায় লিটনের পক্ষে থাকলেও এবার ভোটে বাধা আসবে এমন আগাম সুর তুলে তা প্রতিরোধের ঘোষণা দিয়েছেন বুলবুল। শুক্রবার একটি গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত হয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। এর আগে সকাল থেকে নগরীর ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন বুলবুল। এ সময় বুলবুল অভিযোগ করে বলেন, তার প্রচারে আওয়ামী লীগ বাধা প্রদান করছে। গণসংযোগের সময় আওয়ামী লীগ প্রার্থীর প্রচার মাইক দুপুর থেকে সারাক্ষণ বিরক্ত করছে। তিনি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ফলাফল মেনে নেয়ার জন্য আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সরকারকে পরামর্শও দেন। নির্বাচন নিয়ে কোন প্রকার তালবাহানা সহ্য করা হবে না এমন হুঁশিয়ারি দিয়ে বুলবুল বলেন, সেখানেই বাধা সেখানেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা হবে। বেগম জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনঃরুদ্ধার ও দেশের মানুষকে খোলা কারাগার থেকে রক্ষা করতে ধানের শীষে ভোটপ্রদান করার আহ্বান জানান তিনি। এদিকে গণসংযোগে বুলবুলের এমন পাঁয়তারা কাম্য নয় উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, গত পাঁচ বছরে উন্নয়নে ব্যর্থ হয়ে রাজশাহীকে পিছিয়ে দেয়া বুলবুলের মুখে এমন কথা মানায় না। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার বলেন, নৌকার পক্ষে গণজোয়ার উঠেছে। রাজশাহীর সব মানুষ বুঝতে পেরেছে রাজশাহীর উন্নয়নে নৌকার বিকল্প নেই। তাই বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ও সাধারণ ভোটাররা এবার নৌকায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। তা দেখে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে বুলবুলের। কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে এসে ভোটের মাঠ উত্তপ্ত করতে চাইছে। নিজেদের প্রচার সভায় নিজেরায় বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করে তুলছে। রাজশাহীর মানুষ এখন লিটনের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হলেও বুলবুল নিজের নেতাদের দ্বন্দ্বেই বেসামাল হয়ে উগ্র বক্তব্য দিচ্ছেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ইঙ্গিত বুলবুলের ॥ এদিকে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার কোন আলামত দেখছেন না বলে উল্লেখ্য করে শেষ পর্যন্ত ভোটের মাঠে থাকবেন কি না তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। তবে বুলবুলের এই বক্তব্যকে আবেগ ও ক্ষোভের বহির্প্রকাশ বলে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেছেন, একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন চান তিনি। শুক্রবার দুপুরে রাজশাহী চেম্বার ভবন মিলনায়তনে আয়োজিত এক গোলটেবিল বৈঠকে তারা বক্তব্য রাখেন। ‘কেমন নির্বাচন চাই’ শীর্ষক এই গোলটেবিল বৈঠকে চারজন মেয়র প্রার্থীসহ রাজশাহীর সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ছুটির দিনে প্রচারে ব্যস্ত লিটন ॥ এদিকে শুক্রবার ছুটির দিনের সকাল থেকে ভোটের মাঠে রয়েছেন, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। সকাল তিনি বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। পরে একটি গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত হন। এরপর নগরীর হযরত শাহ মখদুম (র) জামে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করেন। তার সঙ্গে খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আবদুল খালেক ছাড়াও কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা ছিলেন। পরে তিনি মুসল্লিদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং নৌকায় ভোট কামনা করেন। বিকেলে লিটন নগরীর ভদ্রা এলাকায় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সংসদীয় আসন পাওয়ার শর্তে বুলবুলকে সমর্থন দেয়ার ঈঙ্গিত জামায়াতের ॥ রাসিক নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের মাঠে পক্ষে থাকতে বিএনপিকে শর্ত দিয়েছে জামায়াত। শুরু থেকেই চুপটি মেরে থাকা স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াত শেষ পর্যন্ত আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনে তাদের প্রার্থিতা দাবি করেছে বিএনপির কাছে। এ নিয়ে নতুন মেরুকরণ দেখা দিয়েছে বিএনপিতে। ওই আসনে আগে থেকেই ঠিক করে রাখা বিএনপির মহানগর সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন জামায়াতের এ শর্তে নাখোশ হয়েছেন। এ নিয়ে বিএনপি শিবিরে নতুন করে দ্বন্দ্বের আভাস পাওয়া গেছে। . লড়াই হবে কামরান আরিফের সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ ভোটের মাঠে দখল নিতে দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে গণসংযোগের মাধ্যমে প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মনোনীত প্রার্থী বদরুদ্দিন আহমেদ কামরান ও আরিফুল হক চৌধুরী। নির্বাচনী প্রচারের প্রথম দিকেই দলীয় কোন্দলের কারণে কোণঠাসা অবস্থায় ছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন পর্যন্ত দলের কেন্দ্রীয় নেতারা দফায় দফায় বৈঠক করেও নির্বাচন থেকে সরাতে পারেননি দলের এ বিদ্রোহী প্রার্থীকে। তাছাড়া জোটের শরিক জামায়াতও আলাদা প্রার্থী ঘোষণা করাও ভোটের মাঠে রীতিমতো কোণঠাসা অবস্থানে বিএনপি। সে হিসেবে একক প্রার্থী থাকায় অনেকটা এগিয়ে আছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী কামরান। কিন্তু হঠাৎ করে নাটকীয়ভাবে রনে ভঙ্গ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী সেলিম। দলীয় নেতৃবৃন্দের অনুরোধের মুখে তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন বলে সংবাদ সম্মেলন করে জানান। সেলিমের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণার পর বিএনপির নেতৃবৃন্দরা বলছেন, দলের মধ্যে আর কোন কোন্দল নেই। এখন বিএনপি ঐক্যবদ্ধ। বাস্তবে সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ালেও বিএনপির দলীয় প্রার্থী আরিফুল হকের তেমর উন্নতি হবে না। কারণ আরিফ বিদ্রোহীরাই মূলত সেলিমের পক্ষে ছিলেন। সেলিম হঠাৎ করে আরিফকে সমর্থন দিয়ে চলে যাওয়ায় আরিফ বিদ্রোহীরা অন্য পন্থা অবলম্বন করবেন বলেই ধারণা করা হচ্ছে। আর জামায়াতের প্রার্থী এহসানুল মাহবুব যোবায়েরকেও বশ মানাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। জামায়াতকে নির্বাচন থেকে সরাতে পারলে ভোটের মাঠে বিএনপির অবস্থান আরও প্রশমিত হবে। সেই লক্ষ্য মাথায় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন বিএনপির স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। শুক্রবারও নগরীর বিভিন্ন এলাকায় নির্বাচনী প্রচারে ব্যস্ত ছিলেন কামরান ও আরিফ। এ সময় নগরীর উন্নয়নের কর্মকান্ডে নিজেদের পরিকল্পনার কথা তুলে ধরছেন ভোটারদের কাছে। সমৃদ্ধ নগরী গড়তে নিজেদের দীর্ঘ মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যানের কথাও তুলে ধরছেন। জীবনের শেষ সময়ে নগরবাসীর উন্নয়নে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই- কামরান ॥ সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেছেন, জীবনের শেষ সময়ে নগরবাসীর উন্নয়ন ও কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করতে চাই। এটা হয়তো সিলেট সিটিতে আমার জীবনের শেষ নির্বাচন। আমি জানি না আর কতদিন বেঁচে থাকতে পারব। শুক্রবার সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমার ২৫ নং ওয়ার্ডে কায়েস্তরাইল এলাকায় নৌকা প্রতীকের গণসংযোগকালে একথা বলেন। কামরান আরও বলেন, অতীতে আমাকে কারাগারে রেখে নগরবাসী একলাখ ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী করেছেন। আমি এ ভালবাসার ঋণ শোধ করতে পারিনি। আগামী দিনে জীবন দিয়ে হলেও ঋণ শোধ করার চেষ্টা করব। বদর উদ্দিন কামরান কায়েস্তরাইল ওয়াক্ফ এস্টেট জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে এলাকায় গণসংযোগ করেন। নামাজ শেষে তিনি মসজিদের ইমাম, এলাকার মুসল্লিদের সঙ্গে কুশলবিনিময় করেন। মসজিদ থেকে বের হলে এলাকার গণমান্য ব্যক্তি, মুসল্লি, দলীয় নেতাকর্মীরা তাকে স্বাগত জানান। ২৫ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বদর উদ্দিন কামরানকে নির্বাচনের প্রতীক তৈরি করে উপহার দেন। এ সময় ‘নৌকা নৌকা’ স্লোগানে মুখরিত করে তোলেন কায়েস্তরাইলবাসী। নৌকার সমর্থনে নুরুল হুদার গণসংযোগ ॥ আসন্ন সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের সমর্থনে সিলেট নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় গণসংযোগ করেছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। এ সময় নেতৃবৃন্দ উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আগামী ৩০ জুলাই নির্বাচনে নৌকা ও মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে বিপুল ভোটের মাধ্যমে বিজয়ী করার আহ্বান জানান। কামরানের সমর্থনে ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ ॥ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেছেন, বাংলাদেশের এখন এগিয়ে যাবার সময়। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই সিলেটে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। আগামী সিলেট সিটি নির্বাচন হবে উন্নয়নের প্রতীক নৌকার নির্বাচন। দেশজুড়ে উন্নয়নের জোয়ারে মানুষ এখন জননেত্রী শেখ হাসিনা ও নৌকার ওপর বিশ্বাসী হয়ে গেছে। দেশের উন্নয়নে নৌকার কোন বিকল্প নেই। তাই তিনি আগামী ৩০ জুলাই সিলেট সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নৌকা ও মেয়র প্রার্থী কামরানকে বিজয়ী করে আবারও তা প্রমাণ করতে হবে। পরিশেষে দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানান। বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন সিলেট জেলার উদ্যোগে পাঠানটুলার ৭ ও ৮ নং ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী কামরানের সমার্থনে গণসংযোগ শেষে এক পথ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। কামরানের সমর্থনে ১৯ নং ওয়ার্ডে গণসংযোগ ॥ আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবকলীগ সিলেট জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন কয়েসের নেতৃত্বে নগরীর ১৯ নং ওয়ার্ডের শাহ আমীর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় সেন্টারের অধীনস্থ এলাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের পক্ষে গণসংযোগ করা হয়েছে। জামায়াতকে বশে আনতে আশাবাদী বিএনপি ॥ দলের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম। নিজে প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন এটা বেশ জোরেশোরেই জানিয়ে আসছিলেন নগরবাসীকে। অবশেষে সিসিকের চতুর্থ নির্বাচন নাটকীয়ভাবে মোড় নিয়েছে বৃহস্পতিবার। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম। সমর্থন করে যাচ্ছেন এখন দলীয় প্রার্থী সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে। ফলে সিলেট সিটি নির্বাচন নিয়ে বিএনপির বিরোধ অনেকটাই প্রশমিত হয়ে এসেছে বলে দাবি দলটির নেতাদের। বিএনপি নেতারা বলছেন, সকল বিরোধ মিটিয়ে বৃহস্পতিবার দৃশ্যত আরিফের পক্ষেই ঐক্যবদ্ধ বিএনপি। তবে এখন পর্যন্ত জোটসঙ্গী জামায়াতকে বশে আনতে পারেনি বিএনপি। জামায়াতের মহানগর আমীর এহসানুল মাহবুব জুবায়ের এখনও সিটি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। বৃহস্পতিবারও তিনি বিভিন্ন এলাকায় জনসংযোগ করেছেন। তবে বিএনপি নেতাদের আশা জামায়াতের সঙ্গেও সমঝোতা হবে। তারাও আরিফুল হক চৌধুরীকে সমর্থন জানাবে। উন্নয়ন পরিকল্পনায় উপেক্ষিত নারীরা ॥ নির্বাচন সামনে রেখে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি মনোনীত প্রার্থীরা নগরীর উন্নয়নে পরিকল্পিত মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাওয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে যাচ্ছেন। আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী বদরুদ্দিন আহমদ কামরান ৫০ বছর মেয়াদী মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন নগরবাসীকে। বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চেীধুরীও সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে মাস্টারপ্ল্যান নিয়েই নগরীরর উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীদের উন্নয়ন পরিকল্পনায় নারীরা উপেক্ষিত বলে অভিযোগ আসছে নারী নেতৃবৃন্দের পক্ষ থেকে। সিলেট মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি শিরিন আক্তার বলেন, সিলেট নগরী ঠিক নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে ওঠেনি। নগরে নারীদের হাঁটাচলার কোন ব্যবস্থা নেই। ফুটপাথগুলোও দখল হয়ে আছে। কোন উন্মুক্ত উদ্যান নেই। ফলে বয়স্ক ও অসুস্থ নারীরা সকাল বা বিকেলে হাঁটাহাঁটি বা ব্যায়াম করতে চাইলেও সে সুযোগ নেই। আগামীতে যিনি মেয়র নির্বাচিত হবেন তার কাছে সিলেট নগরীকে নারীবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলার দাবি তাদের। ২০০২ সালে সিলেট পৌরসভাকে সিটি কর্পোরেশনে উন্নীত করার পর পেরিয়ে গেছে ১৬ বছর। এই সময়কালে তিন মেয়াদে দুইজন মেয়র দায়িত্ব পালন করেছেন এই নগরীর। বাস্তবায়িত হয় বেশকিছু উন্নয়ন কর্মকা-। তবে এই দীর্ঘ সময়ে নারীদের উন্নয়ন ও সেবায় নেয়া হয়নি তেমন কোন উদ্যোগ। শিরিন আক্তার বলেন, সিলেটের নারীরা কিছুটা রক্ষণশীল। ফলে উন্মুক্তস্থানে তারা শরীরচর্চা করতে চান না। তাদের জন্য একটি আলাদা ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। এ ছাড়া আগামী নির্বাচনে বিজয়ী হওয়া মেয়রের কাছে এসিড আক্রান্ত নারীদের জন্য সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে মাসিক ভাতার ব্যবস্থা রাখার দাবি। এই নগর কেবল পুরুষের নয়, নারীদেরও। আর নারীরা যেহেতু পিছিয়ে আছেন এবং সিলেটের মতো একটি রক্ষণশীল শহরে নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে তাদের চলাফেরা করতে হয়। তাই তাদের জন্য বিশেষ কিছু পরিকল্পনা ও উদ্যোগের প্রয়োজন। মাস দুয়েক আগেও সিলেট নগরীতে নারীদের জন্য ছিল না কোন পাবলিক টয়লেট। গত এপ্রিলে একটি উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সহযোগিতায় নারীদের জন্য একটি পাবলিক টয়লেট চালু করা হয়। এ ছাড়া সিটি কর্পোরেশনের নিয়ন্ত্রণাধীন মাতৃ ও স্বাস্থ্য সেবা সেন্টার আছে মাত্র একটি। প্রায় ২৭ কিলোমিটার আয়তনের নগরীতে যা চাহিদার তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল বলছেন সংশ্লিষ্টরা। এ ছাড়া নগরীতে নেই কোন গণপরিবহন। ফলে কর্মজীবী নারী ও ছাত্রীদের চলাচলে বিপদে পড়তে হয়। কদমতলীতে মোয়াজ্জেমের গণসংযোগ ॥ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত ও উলামা মাশায়েখ সমর্থিত হাতপাখা প্রতীকের মেয়র পদপ্রার্থী প্রফেসর ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন নগরীর কদমতলী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় ও গণসংযোগ করেছেন। এ সময় তিনি বলেন, নগরবাসীর সমস্যার কোন অন্ত নেই। স্থায়ী শান্তিও দুর্নীতিমুক্ত সমাজব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আগামী নির্বাচনে সৎ ও খোদাভীরু প্রার্থীকে নির্বাচিত করতে হবে। ভোট একটি জাতীয় আমানত। কাজেই বুঝে-শুনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করাই একজন সচেতন ঈমানদার ও দেশপ্রেমিকের কাজ।
×