ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মামলা জট কমবে, আইনের ব্যাখ্যার প্রতি মনোযোগ বাড়বে ॥ বিশেষজ্ঞদের অভিমত

চার হাজার বিচারককে ৯ বছরে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২১ জুলাই ২০১৮

   চার হাজার বিচারককে ৯ বছরে দেশে বিদেশে প্রশিক্ষণ

বিকাশ দত্ত ॥ আইন মন্ত্রণালয় নয় বছরে তিন হাজার ৯৩৫ বিচারককে দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সার্বিক প্রচেষ্টায় বিচারকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণে বিদেশে পাঠানো হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনবিশেষজ্ঞদের অভিমত, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিচারকরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন। লিগ্যাল সিস্টেম উপকৃত হচ্ছে আগে। সে কারণেই তাদের দেশ ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কিভাবে মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, দ্রুত বিচারপ্রার্থীরা সুবিচার পায় সে সমস্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্যই তারাদের বিদেশে নেয়া হয়। এতে মামলা জটও কমে যাবে। উচ্চতর প্রশিক্ষণের কারণে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি মামলা শুনানির ক্ষেত্রে কম সময় লাগছে এবং আইনের সামগ্রিক ব্যাখ্যার প্রতি মনোযোগ দেখা যাচ্ছে। এদিকে গত দুই বছরে (২০১৭-১৮) ৪২২ জন বিচারক বিদেশে উচ্চতর প্রশিক্ষণে গেছেন। এর মধ্যে অস্ট্রেলিয়ায় ২২৩, জাপানে ১৫ জন, ভারতে ১৮৪ বিচারক প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। এ ছাড়া আরও ৫৪০ বিচারক অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চতর প্রশিক্ষণে যাবেন বলে জানা গেছে। ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছর পর্যন্ত ১৮৯ জন জিপি ও পিপি ও ৭২৫ স্টাফকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। বিচারকদের প্রশিক্ষণের ফলে নিম্ন আদালতের মামলা জটও অনেকাংশে কমে যাবে। এর আগে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছিলেন, দেশের আদালতসমূহে চলতি বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৩ লাখ ৯৫ হাজার ৬৪৯। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ১৩ লাখ ৯০ হাজার ২০৯ ও ফৌজদারি মামলার সংখ্যা ১৯ লাখ ১৮ হাজার ৫২৭ এবং অন্যান্য (কনটেম্পট পিটিশন/ রিট/ আদিমসহ) মামলার সংখ্যা ৮৬ হাজার ৯১৩। সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেন, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিচারকরা অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করছেন। লিগ্যাল সিস্টেম উপকৃত হচ্ছে। সে কারণেই তাদের দেশে ও বিদেশে প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে। কিভাবে বিচার ব্যবস্থা মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায়, দ্রুত বিচারপ্রার্থীরা সুবিচার পায় সে সমস্ত অভিজ্ঞতা কাজে লাগানোর জন্যই তারাদের বিদেশে হয়। একে পাঠানো মামলা জটও কমে যাবে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিচারকরা সে সব অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে উপকৃত হবেন। কারণ নলেজের কোন ঘাটতি নাই। কথায় আছে জ্ঞান আহরণ করার জন্য বিদেশে যাও। উন্নত ধরনের বিচার ব্যবস্থা দেখে এলে তারাও উপকৃত হবেন। সঙ্গে সঙ্গে বিচারপ্রার্থীরাও উপকৃত হবে। দেশের আদালতগুলোর মামলা জট কিছুটা হলেও কমে যাবে। বিচারকদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তাপস কান্তি বল বলেন, দেশে বিদেশে বিচারকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে তারা বিচারের প্রশাসনিক বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জন করছেন। তাদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের কারণে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, মামলা শুনানির ক্ষেত্রে কম সময় লাগছে এবং আইনের সামগ্রিক ব্যাখ্যার প্রতি মনোযোগ দেখা যাচ্ছে। এই ধরনের প্রশিক্ষণ দেশে আইনের শাসন রক্ষায় আরও জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি। ভবিষ্যতে সকল বিচারককে এই ধরনের প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আশা উচিত বলে মনে করি। ২০০৯ সালে ৩৮৯, ২০১০ সালে ২৭৯, ২০১১ সালে ২৮২, ২০১২ সালে ৩৪৮, ২০১৩ সালে ২৫৫, ২০১৪ সালে ৪৪৬, ২০১৫ সালে ৩৫২, ২০১৬ সালে ৩১৫ বিচারককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। আইনবিশেষজ্ঞদের অভিমত, বিচারকদের দেশে প্রশিক্ষণটি একটি পজেটিভ দিক। মূল সমস্যা বের করে সমাধান করতে হবে। নতুন নতুন বিচারক নিয়োগ করে কোনভাবেই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। পদ্ধতিগত কারণে মামলা দীর্ঘ জটযুক্ত হচ্ছে। সনাতনি পদ্ধতি গত কারণে মামলা জট বেড়ে যাচ্ছে। দেওয়ানী ও ফৌজদারির প্রায় ৩৩ লাখ মামলাগুলো বিচারের দীর্ঘ সূত্রতার কারণে যুগ যুগ ধরে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কেন নিষ্পত্তি হচ্ছে না তা অনুসন্ধানে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দুর্বল এফ আই আর, দুর্বল চার্জশীট, সাক্ষী উপস্থিত না করতে পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা, বিচারকের অপ্রতুলতা, কিছু আইনজীবীর সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ না নেয়া, হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার, রুল দেয়া, সাক্ষী হাজিরে পুলিশ ও এপিপিদের উৎসাহ না থাকা, পদ্ধতিগত এ সমস্ত কারণে দেওয়ানী ও ফৌজদারি মামলা নিষ্পত্তিতে যুগের পর যুগ পার হয়ে যাচ্ছে। পদ্ধতিগত কারণে মামলা দীর্ঘ জটযুক্ত হচ্ছে। সনাতনি পদ্ধতিগত কারণে মামলা জট বেড়ে যাচ্ছে। কারণ অনেক মামলার সংশ্লিষ্ট পক্ষের মতে নোটিস জারি হয় বছরের পর বছর বিলম্বে। অপরদিকে নোটিস জারি যথাযথ না হওয়ার কারণে পুনরায় নোটিস জারি করতে হয়। সংশ্লিষ্ট সেকশনে নোটিস জারি হয়ে ফেরত আসায় পরে ভুল নথিতে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে নোট প্রদান করা হয় না। জারির তথ্য সেকশনেই পড়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে হারিয়েও যায়। এ কারণে মামলা শুনানির জন্য প্রস্তত হতেই দীর্ঘবিলম্ব হয়। পুনরায় মামলা কে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয় ভাবে আদালতের শুনানির তালিকায় অন্তভুক্ত অনিবার্য হলেও তা করা হয় না। আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় সেকশনে চলে যায়। নতুন করে তালিকা অন্তর্ভুক্ত করতে শুনানিঅন্তে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। বিচারকদের উচ্চতর প্রশিক্ষণের ফলে এ যেমন বিচারপ্রার্থীরা উপকৃত হবে। তেমনি মামলা জটও অনেকাংশে কমে যাবে।
×