ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

অনন্যার কত্থক ও মাহামুদুলের বেহালায় মায়াবী সন্ধ্যা

প্রকাশিত: ০৫:০২, ২১ জুলাই ২০১৮

 অনন্যার কত্থক ও মাহামুদুলের বেহালায় মায়াবী সন্ধ্যা

মনোয়ার হোসেন ॥ শুরুটা নাচ নান্দনিকতায়। সমাপ্তি বেহালার সিগ্ধ সুরে। শ্রোতা-দর্শকদের জন্য শ্রবণের সঙ্গে দর্শনের অনন্য সংযোগ। সন্ধ্যাটি হয়ে উঠলো একই সঙ্গে মোহময় ও মায়াবী। শাস্ত্রীয় ধারার কত্থক নৃত্যের মাধুর্য ছড়ালেন অনন্যা ওয়াফি রহমান। বেহালার সুরেলা শব্দধ্বনিতে হৃদয় রাঙালেন মাহামুদুল হাসান। এই দুই শিল্পীর কত্থক নাচ আর বেহালা বাদনের যুগলবন্দী পরিবেশনা অনুষ্ঠিত হলো শুক্রবার। শিল্পকলা একাডেমির চিত্রশালা মিলনায়তনে নৃত্য ও যন্ত্রসঙ্গীতে সাজানো অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করে নৃত্যমঞ্চ ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত পরিষদ। শাস্ত্রীয় আঙ্গিকের দুই পরিবেশনায় সেই অর্থে ছিল না অতিথিদের বক্তৃতার বাগাড়ম্বর। অতিথিদের মঙ্গলপ্রদীপ প্রজ্বালনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হলেও তারা কথা বলেছেন পরিবেশনার পর। তাই আয়োজনটি শ্রোতা-দর্শকের জন্য হয়ে ওঠে দারুণ উপভোগ্য। মুদ্রার সঙ্গে অভিব্যক্তির সমন্বয়ে অনন্যার পরিবেশিত কত্থকের সৌন্দর্যে এগিয়ে যায় আয়োজন। সরাসরি বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তাল রেখে উপস্থাপন করেন কত্থকের নানা আঙ্গিক। হাত-পায়ের কারুকাজের সঙ্গে চোখের ইশারাময় মৌখিক অভিব্যক্তি আশ্রিত অনন্যার পারফর্মেন্স ছুঁয়ে যায় দর্শক হৃদয়। ৪০ মিনিট ব্যাপ্তির পরিবেশনায় অনুষ্ঠান উপভোগকারীদের নয়নে বুনে দেন মুগ্ধতার বীজ। সেই মুগ্ধতার সুবাদে দফায় দফায় ঝরে পড়ে নৃত্যরসিকের করতালি। সরাসরি বাদ্যযন্ত্রের সঙ্গে তাল রেখে কত্থকে নানা আঙ্গিক উপস্থাপন করেন এই শিল্পী। বিলম্বিত লয়ে বন্দনার মাধ্যমে শুরু হয় পরিবেশনা। ত্রিতালের আশ্রয়ে ধাপে ধাপে এগিয়ে যায় পরিবেশনা। আঙ্গিকের বিস্তারে একে একে উপস্থাপিত হয় ঠাট, আমোদ, টুকরা, পরন, তেহাই, গৎভাও। দ্রুত লয়ের মাধ্যমে এ পর্বের সমাপ্তি হয়। এরপর পরিবেশিত হয় নৃত্যপ্রেমীর নজর উচাটন করা লক্ষেèৗ ঘরানার মীরা ভজন। প্রকাশিত হয় কৃষ্ণের প্রতি প্রবল অনুরাগী মীরার হৃদয়ের আকুলতা। তারানা দিয়ে শেষ হয় উদীয়মান এই নৃত্যশিল্পীর পরিবেশনা। তার পরিবেশনা পর্বে তবলায় সঙ্গত করেন বিশ্বজিৎ নট্ট, সেতারে সত্যজিৎ চক্রবর্তী ও হারমোনিয়ামে তাসাউফ তাজিম। নাচ শেষে বেহালার মিষ্টি সুরকে সঙ্গী করে মঞ্চে আসেন মাহামুদুল হাসান। রাগ যোগের মাধ্যমে শুরু হয় তার পরিবেশনা। বিলম্বিত ত্রিতালের মাধ্যমে শুরু করে পদার্পণ করেন মধ্যলয়ে। এরপর বাজিয়ে শোনান দ্রুত ত্রিতালে। ঝিঞ্ঝটি রাগ-আশ্রিত ছোট্ট একটি ধুনের মাধ্যমে শেষ হয় বেহালার বাদন। পরিবেশনা শেষে মঞ্চে আসেন অনুষ্ঠানের অতিথিরা। দুই শিল্পীর পরিবেশনার মূল্যায়ন করে কথা বলেন নাট্যজন আতাউর রহমান, একুশে পদকপ্রাপ্ত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্যশিল্পী সংস্থার সভাপতি মিনু হক, নৃত্যশিল্পী সাজু আহমেদ ও মাহমুদুল হাসান। ‘দি ব্যালাড অফ আয়েশা’ গ্রন্থের প্রকাশনা ॥ আন্তর্জাতিক প্রকাশনা সংস্থা হার্পার কলিন্স থেকে প্রকাশিত হলো আনিসুল হকের জনপ্রিয় উপন্যাস আয়শামঙ্গল-এর ইংরেজী অনুবাদ গ্রন্থ ‘দি ব্যালাড অফ আয়শা’। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের বাতিঘরে গ্রন্থটির প্রকাশনা অনুষ্ঠান হয়। বাতিঘর ঢাকা ও হার্পার কলিন্সের আয়োজনে বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, অধ্যাপক সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, কবি কামাল চৌধুরী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন কথাসাহিত্যিক আনিসুল হক। বইটি অনুবাদ করেছেন লেখক ইনাম আহমেদ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন শিল্পী ও সাংবাদিক এলিটা করিম। শুরুতেই সঙ্গীত পরিবেশন করেন শিল্পী ফারজানা ওয়াহিদ শায়ান। মাইকেল মধুসূদনের নাট্যবিষয়ক সেমিনার ॥ আধুনিক বাংলা সাহিত্যের কালজয়ী এক নাম মাইকেল মধুসূদন দত্ত। পদ্যের পাশাপাশি গদ্য রচনায় সুনিপুণতার স্বাক্ষর রেখেছিলেন এই মহাকবি। সেই তার হাত ধরে বাংলা সাহিত্য পেয়েছে বেশ কিছু নাটক। মাইকেলের জীবনের সেই নাট্য অধ্যায়টি উঠে এলো সেমিনারের মাধ্যমে। তার লেখা নাটক এবং তাকে নিয়ে রচিত নাটক নিয়ে সাজানো ছিল সেমিনারটি। শুক্রবার বিকেলে শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে অনুষ্ঠিত হলো ‘নাট্যকার মাইকেল মধুসূদন, তার জীবননাট্যের রূপায়ণ এবং বাংলাদেশে মাইকেল চর্চা’ বিষয়ক সেমিনার। মাইকেল মধুসূদন স্মরণে যৌথভাবে এ সেমিনারের আয়োজন বাংলাদেশ যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদ এবং প্রকাশনা সংস্থা জ্যোতিপ্রকাশ। সেমিনারের উদ্বোধন করেন নাট্যজন আতাউর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন যাত্রানট ও গবেষক মিলন কান্তি দে। আলোচনায় অংশ নেন লোক গবেষক আমিনুর রহমান সুলতান, কামাল উদ্দিন কবির, সায়মন জাকারিয়া, জাহিদ রিপন, আনন্দ আলো সম্পাদক রেজা নূর রহমান, যাত্রাশিল্প উন্নয়ন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার জসীম ও জ্যোতিপ্রকাশের স্বত্বাধিকারী জাহাঙ্গীর আলম প্রমুখ। চারুশিল্পী সংসদের সম্মেলন ॥ দেশের চারুকলাকে আরও বেগবান করার আহ্বান এসেছে বাংলাদেশে চারুশিল্পী সংসদের সম্মেলন থেকে। তবে এ সম্মেলনে বরেণ্য শিল্পীদের উপস্থিত ছিল না। তাদের উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও তারা তাতে অংশ নেননি। এমনকি বিদায়ী কমিটির সভাপতি সব্যসাচী শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারও উপস্থিত ছিলেন না। তাদের অনুপস্থিতির মধ্যেই শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলন থেকে আগামী দুই বছরের জন্য ৩১ সদস্যবিশিষ্ট নতুন কার্যনির্বাহী কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের অধ্যাপক জামাল আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন কামাল পাশা চৌধুরী। সকালে বেলুন উড়িয়ে ও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে চারুশিল্পী সংসদের সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মুহাম্মদ সামাদ, সংসদের সহ-সভাপতি আবদুল মান্নান, নাজমা আক্তার, বিদায়ী কমিটির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান প্রমুখ। জাতীয় অধ্যাপক রফিকুল ইসলামকে নাগরিক সংবর্ধনা ॥ বরেণ্য শিক্ষাবিদ, গবেষক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিকুল ইসলামকে সম্প্রতি সরকার জাতীয় অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত করেছেন। এ উপলক্ষে সাংস্কৃতিক চর্চা কেন্দ্র গীতাঞ্জলি ললিতকলা একাডেমি শুক্রবার তাকে নাগরিক সংবর্ধনা প্রদান করে। বিকেলে উত্তরার ক্ষুদ্রও কুটির শিল্প ইন্সটিটিউটে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। প্রদীপ প্রজ্বলনের মাধ্যমে অনুষ্ঠানের সূচনা হয় বলে জানান আয়োজক সংগঠনের প্রধান নির্বাহী মাহবুব আমিন মিঠু। এরপর রফিকুল ইসলামকে নিবেদিত শুভেচ্ছা কত্থনে অংশ নেন বিশিষ্টজনরা। ছিল তাকে নিবেদিত আবৃত্তি পরিবেশনা।
×