ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জর্দানে নিপীড়ন নির্যাতনে অতিষ্ঠ নারী গৃহকর্মীরা দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:০০, ২১ জুলাই ২০১৮

 জর্দানে নিপীড়ন নির্যাতনে অতিষ্ঠ নারী গৃহকর্মীরা দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ জর্দানে বাংলাদেশী নারী গৃহকর্মীর ওপর শারীরিক নির্যাতনসহ নানা অত্যাচার বেড়েই চলেছে। নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে প্রতিদিন তিন থেকে চার গৃহকর্মী আম্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন। আশ্রয় নেয়া গৃহকর্মীদের জন্য জায়গা সঙ্কটে পড়েছে দূতাবাস। জরুরী ভিত্তিতে দেশটিতে সেফহোম খোলার অনুমতিও চেয়েছে জর্দানে বাংলাদেশ দূতাবাস। কিন্তু এখন পর্যন্ত দূতাবাসকে সেফহোম খোলার অনুমতি দেয়নি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। জর্দানে বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) জানিয়েছেন, আগে নারী গৃহকর্মীর কোন সমস্যা হলে রিক্রুটিং এজেন্সির শেল্টার হোমে রাখা হতো। কিন্তু গত বছরের অক্টোবরে জর্দান সরকার সীমিত আকারে বাংলাদেশ থেকে নারী গৃহকর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিলে রিক্রুটিং এজেন্সির অনেকেই শেল্টার হোম বন্ধ করে দেয়। তাই, উপায় না পেয়ে দূতাবাসেই আশ্রয় নিচ্ছেন নির্যাতিত নারীরা। এ কারণে দূতাবাসের স্বাভাবিক কার্যক্রমও হুমকির মধ্যে পড়েছে। গত ৩ জুলাই রাষ্ট্রদূতের পক্ষ থেকে সেফহোম খোলার অনুমতি চেয়ে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠির কোন জবাব এখন পর্যন্ত মন্ত্রণালয় থেকে দূতাবাসকে দেয়া হয়নি। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, আশ্রিত কর্মীদের চাপ নিতে পারছে না দূতাবাস। দ্রুত সেফহোম খোলা না হলে দূতাবাসের কার্যক্রম চরমভাবে বিঘিœত হবে। বিষয়টি শ্রম সচিবের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারী গৃহকর্মীরা জর্দানে পৌঁছার পর পরই বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। গৃহকর্তার দুর্ব্যবহার, সময়মতো বেতন না পাওয়া, সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশে পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে না পারা, ওভারস্টেইং ফাইনসহ নানা অসুবিধায় নারী গৃহকর্মীরা দূতাবাসের শরণাপন্ন হচ্ছেন। এছাড়া মারাত্মক শারীরিক ও মানসিক অসুস্থ অবস্থায়ও গৃহকর্তার বাসা, হাসপাতাল, পুলিশ স্টেশন, জেলখানা থেকেও গৃহকর্মীকে দূতাবাসে পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে ৩/৪ নারীকর্মী দূতাবাসে অস্থায়ী আশ্রয়ের জন্য আসছেন। কিন্তু দূতাবাসের সেফহোম না থাকায় তাদের আশ্রয় দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এ কারণেই দূতাবাসে জরুরী ভিত্তিতে একটি সেফহোম খোলা প্রয়োজন। অনুমতি না মেলায় এখন পর্যন্ত দূতাবাস সেফহোম খুলতে পারছে না। অন্যদিকে বিষয়টি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কাছে জানতে চাইলে মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সেফহোমের বিষয়টি জর্দানে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাস চিঠি দিয়ে জানিয়েছে। কিন্তু একটি দূতাবাসে সেফহোম করা একটু চিন্তাভাবনার বিষয়। দেশটিতে কোন্ পরিস্থিতিতে নারীকর্মীরা দূতাবাসে আশ্রয় নিচ্ছেন তা খতিয়ে দেখতে হবে। নির্যাতনের বিষয়টি যদি প্রকট হয় তাহলে দেশটির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করতে হবে। আলোচনার পরই সেফহোম খোলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে অচিরেই দেশটিতে একটি প্রতিনিধি দল পাঠানো হবে। তারা সেখানে কর্মীদের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে সেফহোম খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করবে।
×