ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সংবর্ধনা সভায় কাঁদলেন তালিকায় নাম না ওঠা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ২১ জুলাই ২০১৮

  সংবর্ধনা সভায় কাঁদলেন তালিকায় নাম না ওঠা যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়ে অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে অঝোরধারায় কাঁদলেন মুক্তিযুদ্ধে দু’চোখ হারানো সাহসী যোদ্ধা আব্দুল মান্নান। কান্নাভেজা কণ্ঠে বললেন, ‘আমার আসলে আর কিছুই চাওয়ার নেই। শুধু মরার আগে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তালিকায় নিজের নামটি রয়েছে- জেনে যেতে পারি। আপনারা যে সম্মান আজ আমাকে দিলেন, তা সারাজীবন স্মরণ করব।’ শুক্রবার বেলা ১১টায় প্রেসক্লাব যশোর মিলনায়তনে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানকে ‘সুন্দর বাংলাদেশ চাই ফাউন্ডেশন-এসবিসি’ এই সংবর্ধনা দেয়। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী আনিসুজ্জামান আরজুর সভাপতিত্বে সম্মাননা ও সহযোগিতা প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন দৈনিক গ্রামের কাগজ সম্পাদক মবিনুল ইসলাম মবিন। বক্তৃতা করেন সংগঠনের উপদেষ্টা সাবেক সরকারী কর্মকর্তা মোঃ মুফাজ্জেল হোসেন, সাংবাদিক তৌহিদ জামান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে অতিথিবৃন্দ মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নানের হাতে একটি সম্মাননা ক্রেস্ট এবং দশ হাজার টাকার প্রাইজবন্ড তুলে দেন। একইসঙ্গে তার নাম যাতে মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় সন্নিবেশিত হয়, সে লক্ষ্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টার অঙ্গীকার করেন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় আব্দুল মান্নানের বাবা খুলনায় ইস্টার্ন জুট মিলে চাকরি করতেন। ১৯৭১ সালের জুন মাসে তিনি হঠাৎ করেই বাড়ি ছাড়া হয়ে যান। ওই সময় তার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু মথুরাপুরের মোশাররফকে নরেন্দ্রপুর এলাকার জল্লাদ আফসার নামে এক রাজাকার বন্দুকের বাঁট মারে এবং শাসায়, মুক্তিবাহিনীতে গেলে মেরে ফেলবে। এই ঘটনাটি তার মনে দাগ কাটে। তাই মা-বাবা কিংবা বন্ধু মোশাররফকে না জানিয়ে তিনি মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন; এই জানোয়ারদের হাত থেকে দেশকে মুক্ত করতে। তার প্রশিক্ষক ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল ওহাব মিন্টু। যশোর সদরের একডালা-বটতলা এলাকায় তিনি তরুণ যোদ্ধা রেজা কাজী, ফরিদ, শান্তি, আব্দুল মান্নানসহ ১৫-১৬ জনকে রাইফেল চালনা থেকে শুরু করে ক্রলিং, সেফটিনেট, গ্রেনেড নিক্ষেপ ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। এখানে প্রশিক্ষণ নিয়ে মান্নান সোজা ভারতে চলে যান। বনগাঁওয়ের চাপাবাড়িয়া ট্রেনিং ক্যাম্পে অস্ত্রের ওপর প্রশিক্ষণ নেন। ট্রেনিং শেষে দেশে ফেরার পর তার আব্বা বলেন, অবস্থা খুব খারাপ, তুই অন্য কোথাও চলে যা। এরপর ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর দিয়ে মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ নামে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে ফের ভারতে গিয়ে আরেক দফা প্রশিক্ষণ নেন। নবেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে কমান্ডার আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে তাদের ১১ জনের একটি দলকে দেশে পাঠানো হয়। নবেম্বরের শেষের দিকে সকালে কোটচাঁদপুর এলাকার শুভদির মাঠে তারা এ্যাম্বুশ করেন। পাকিস্তানী সেনারা খুলনা থেকে দর্শনার দিকে ট্রেনে যাবে- এমন সংবাদ আসে সোর্সের মাধ্যমে।
×