ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অনুমতির আগেই বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ॥ ২২৩ শিক্ষার্থীর ভবিষ্যত অনিশ্চিত

ফরিদপুরে তিন দিন অবরুদ্ধ ১৯ শিক্ষক কর্মচারী

প্রকাশিত: ০৪:৩৪, ২১ জুলাই ২০১৮

 ফরিদপুরে তিন দিন অবরুদ্ধ ১৯ শিক্ষক কর্মচারী

নিজস্ব সংবাদদাতা, ফরিদপুর, ২০ জুলাই ॥ একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের খামখেয়ালিপনার কারণে ২২৩ শিক্ষার্থীর ভবিষতে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয়টির সমস্ত কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়ে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তাসহ ১৯ জনকে গত তিন দিন ধরে অবরুদ্ধ করে রেখেছে। এ ঘটনাটি ঘটেছে ফরিদপুর শহরের পশ্চিম খাবাসপুর মহল্লায় অবস্থিত টাইমস ইউনিভার্সিটিতে। গত বুধবার বেলা ১১টা হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীসহ ১৯ জনকে অবরুদ্ধ করে রেখেছে ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রীরা। শুক্রবার তৃতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীদের অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। জানা যায়, ২০১৩ সালের ১৬ জুন প্রশাসনিক অনুমোদন পায় ‘ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটি’ নামে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন ওই বিশ্ববিদ্যালয়টির পাঠ দানের অনুমোদন দেন ২০১৫ সালের ২৫ নবেম্বর। কিন্তু কর্তৃপক্ষ পাঠদানের অনুমতি পাওয়ার আগেই ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকেই বিভিন্ন বিভাগে শিক্ষার্থীর ভর্তি করে পাঠক্রম শুরু করে দেয়। তবে নিয়ম অনুযায়ী পাঠদানের অনুমোদন পেলেই ভর্তি ও ক্লাস নেয়া যেতে পারে। পাঠদানের অনুমতি পাওয়ার আগেই ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৬টি ব্যাচে বিবিএ কোর্সে ১৪০ জন, এমবিএ কোর্সে ৪৬ জন, এলএলবি কোর্সে ৩৭ জনসহ মোট ২২৩ শিক্ষার্থী ভর্তি হন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থী মোঃ হাসিবুল হাসান জানান, পাঠদানের অনুমোদনের আগেই ভর্তি করার কারণে এসব ভর্তিকৃত ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন থেকে কোন সার্টিফিকেট প্রদান করছে না। যার কারণে ছাত্রছাত্রীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রদানকৃত সার্টিফিকেট এখন তাদের কোন কাজেই আসছে না । আন্দোলনরত আরেক শিক্ষার্থী মোঃ মোনয়েম বলেন, এই ঘটনা নিয়ে আমরা ২০ বার আন্দোলনে গেলাম। কিন্তু কোন টনক নড়ছে না এ বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শরীফ এম আফজাল হোসেনের। তিনি বলেন, এই আন্দোলন করার কারণে আমার নামে মিথ্যা মামলা দিয়ে জেল খাটানো হয়েছে। তিনি বলেন, এখন আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা ধর্মঘট ও শিক্ষক-কর্মচারীদের অবরুদ্ধ করে রাখা ছাড়া কোন উপায় নেই। ছাত্রদের দ্বারা তিন দিন ধরে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন, প্রক্টোর এবিএম ইসাহাক, ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রাকিব, অধ্যাপক আলাউদ্দিনসহ বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক ও কর্মকর্তাগণ। বুধবার অবরুদ্ধ ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপদেষ্টা আব্দুস সাত্তার। তার শরীরের কথা বিবেচনা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বুধবার রাতে তাকে বাসায় যাওয়ার অনুমতি দেন। ‘আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি যৌক্তিক’-স্বীকার করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার আব্দুর রাকিব বলেন, ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের কারণে গত বুধবার বেলা ১১টা হতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মচারীসহ ১৯ জনকে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন। এখন তারা বাড়ি ঘরে ফিরতে পারছেন না, কোন কাজে অংশ নিতে পারছেন না। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করছেন, তাদের খাবারও সরবরাহ করছেন। তিনি বলেন, বিষয়টি তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শরীফ এম আফজাল হোসেনকে জানিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শরীফ এম আফজাল হোসেন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে এ সমস্যা সামাধানের জন্য আমরা আবেদন করেছি। তারা যদি না মানে তাহলে আমরা হাইকোর্টে যাব। ‘মঞ্জুরি কমিশন তাদের অনুমোদন দিতে ১৫ মাস দেরি করায় এ সমস্যা হয়েছে’-দাবি করে তিনি বলেন, এটি শুধু এ বিশ্ববিদ্যালয়ই নয় দেশের আরও ৩৫টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে এই সমস্যা রয়েছে।
×