ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

দেলদুয়ার শৈলকুড়িয়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রের অবস্থা করুণ

প্রকাশিত: ০৪:২৫, ২১ জুলাই ২০১৮

 দেলদুয়ার শৈলকুড়িয়া আশ্রয়ণ কেন্দ্রের অবস্থা করুণ

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ২০ জুলাই ॥ ‘কী আর করুম। দুঃখের কপাল। ঘরের চাল ছিদ্র। রুয়ার কাঠ নষ্ট। ঝড়ের সময় ডরে খাটের নিচে শুইয়্যা থাকি। বৃষ্টির সময় ঘরে পানি আহে। এত কষ্ট আর সহ্য অয় না। মন অয় সব ফালিয়্যা মইরা যাই।’ কথাগুলো বলছিলেন টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার লাউহাটী ইউনিয়নের শৈলকুড়িয়া আশ্রয়ণকেন্দ্রের বাসিন্দা লাভলী বেগম। ‘আশ্রয়ণের অধিকার শেখ হাসিনার উপহার, এই সেøাগানে টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে এই আশ্রয়ণ কেন্দ্রটিতে ৪০ পরিবারের দুই শতাধিক সদস্য মানবেতর জীবনযাপন করছে। লাভলী বেগমের মতো আশ্রয়ণকেন্দ্রটিতে ৪০ পরিবারের দুই শতাধিক সদস্যের নিত্যদিনের কষ্ট ও দুর্ভোগ অমানবিক। বিগত ২০০১ সালে সেনাবাহিনী শৈলকুড়িয়া গ্রামে আশ্রয়ণকেন্দ্রটি নির্মাণ করে। সেখানে যমুনা, পদ্মা, মেঘনা ও ধলেশ্বরী নামে চারটি স্থাপনা রয়েছে। প্রতিটিতে রয়েছে ১০টি করে কক্ষ। এগুলোর মেঝে মাটির, বেড়া ও চাল টিনের। সরজমিনে দেখা যায়, ঘরগুলোর টিনের চাল ছিদ্র হয়ে গেছে। ঘরের ভেতর থেকে ওপরের দিকে তাকালে আকাশ দেখা যাচ্ছে। চাল আটকে রাখার জন্য ব্যবহৃত কাঠ (রুয়া) পচে নষ্ট হয়ে গেছে। বৃষ্টির সময় ঘরে পানি পড়ে। বৃষ্টির পানি থেকে রেহাই পেতে পলিথিন টানানো হয়েছে। এছাড়া সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের জন্য একমাত্র বিনোদন কেন্দ্রটির (কমিউনিটি সেন্টার) চাল, দরজা-জানালা ভেঙ্গে গেছে। ভেতরে ভাঙ্গা চেয়ার-টেবিল পড়ে রয়েছে। এখানে বসবাসকারী চম্পা বেগম বলেন, চাল ছিদ্র হওয়াতে খাটে হুয়াই আল্লাহর (আকাশ) দ্যাহা যায়। বর্ষাকালে ঘরে পানিতে ভোগান্তি হয়। মেঘজান বেগম ও মর্জিনা বেগম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে ঘরের দুরবস্থা। তবে সংস্কারের কোন উদ্যোগ নেই। বস্তিতে থাকায় তাদের মূল্য নেই। অভাবের সংসারে কেউ সাহায্যেরও হাত বাড়ায় না। আশ্রয়ণকেন্দ্রের আরেক বাসিন্দা নাছিমা বেগম বলেন, একমাত্র বিনোদনকেন্দ্রটির দুরাবস্থার কারণে দীর্ঘদিন সেখানে কোন অনুষ্ঠান হয় না। আগে সরকারী কর্মকর্তারা সেখানে বসে আলোচনা করতেন। এখন কেউ এলে বাইরে বসে কথা বলেন। এর বাইরেও আশ্রয়ণকেন্দ্রের বাসিন্দারা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছেন। বাহার উদ্দিন বলেন, এখানে কবরস্থান নেই। কেউ মারা গেলে দুর্ভোগ বেড়ে যায়। আশপাশে কেউ মরদেহ দাফন করতে দেয় না। অনেক দূরে আগে যেখানে তারা বাস করতেন, সেখানকার মাতব্বরদের হাতে-পায়ে ধরে মরদেহ কবর দিতে হয়। নীলকমল দাস বলেন, গত বছর তার স্ত্রীর বড় বোন মারা যান। তাকে শ্মশানে দাহ করার জন্য আশপাশে অনেকের কাছে মিনতি জানিয়েছিলেন, কিন্তু লাভ হয়নি। পরে আশ্রয়ণকেন্দ্রের অদূরে নদীর পাড়ে তাকে দাহ করা হয়। এ বিষয়ে লাউহাটী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম খান বলেন, আশ্রয়ণকেন্দ্রের বাসিন্দারা বহু কষ্ট করে বসবাস করছেন। ওই ঘরগুলো সংস্কার করা জরুরী। ঝড়-বৃষ্টির সময় তাদের দুর্ভোগ আরও বেড়েছে। এ বিষয়ে দেলদুয়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, সম্প্রতি তিনি আশ্রয়ণকেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন। সংস্কার করার জন্য উপজেলা প্রকৌশলীকে দিয়ে ব্যয় প্রাক্কলন তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীর দফতরে ফাইল পাঠানো হয়েছে। ঘরগুলো মেরামতের জন্য আশ্রয়ণ কেন্দ্রের বাসিন্দারা দ্রুতই সহযোগিতা পাবে। পাশের একটি পুকুর খননের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ওই পুকুরে মাছের চাষসহ প্রয়োজনীয় কাজ করে বসবাসকারীরা লাভবান হতে পারবেন।
×