ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্নপূরণ করেন

প্রকাশিত: ০৪:১৫, ২১ জুলাই ২০১৮

  তিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান এবং স্বপ্নপূরণ করেন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়াল রাতে সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শাহাদাতবরণ করলেও পশ্চিম জার্মানিতে অবস্থান করায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন তাঁর কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। পরবর্তী ছয় বছর লন্ডন ও দিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বাংলার মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে ও সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করে মা, মাটি ও মানুষকে মুক্তির গন্তব্যে পৌঁছে দিতে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা ফিরে এসেছিলেন বাংলার মাটিতে। ১৯৭৫ সালের জুন মাসে জার্মানিতে যাওয়ার সময় শেখ হাসিনার সব ছিল। ফিরেছিলেন সব হারানোর বেদনা, বুকের ভেতর একরাশ হাহাকার নিয়ে। বিমানবন্দরে স্বাগত জানাতে আসা ১৫ লাখের অধিক মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে বুঝেছিলেন, সামনের দিনগুলোতে এই নিঃস্বার্থ লাখো মানুষই হবে তাঁর পথচলার অনুপ্রেরণা। কালের পরিক্রমায় বিচার-বিশ্লেষণ করলে ১৭ মে ১৯৮১ সালে একজন শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘটেনি! সেই দিন ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাঙালীর-বাংলাদেশের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল। প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল বাংলাদেশের মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার! প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল বঞ্চিত নিপীড়িত গণমানুষের স্বপ্নপূরণের সারথির! দেশে ফিরেছিল নির্বাসিত গণতন্ত্র। সেই দিন থেকেই শুরু হয়েছিল স্বপ্ন দেখার, স্বপ্ন দেখানোর স্বপ্নপূরণের পথে শেখ হাসিনার অভিযাত্রা। ’৭৫ পরবর্তী চার দশকে বর্তমান মেয়াদকালসহ তিনি বাংলাদেশ পরিচালনা করেছেন সর্বসাকল্যে প্রায় ১৪ বছর। এই সময়ের মধ্যেই তিনি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের স্বপ্নপূরণে অনেকদূর এগিয়ে নিয়েছেন দেশকে। ইতোমধ্যেই শেখ হাসিনা দেশের গন্ডি পেরিয়ে আন্তর্জাতিক ভিশনারী নেতায় পরিণত হয়েছেন। বিশ্ব মিডিয়ার ভাষ্যে ‘দ্য ভিশনারি লিডার শেখ হাসিনা’ ‘একজন নেতা যিনি স্বপ্ন দেখেন, স্বপ্ন দেখান, স্বপ্নপূরণ করেন’। তিনি বাংলার মানুষের আস্থার শেষ ঠিকানা হিসেবে দেশের গন্ডি ও রাষ্ট্রনায়কের সীমানা ছাড়িয়ে যার দ্যুতি ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। ১৯৮১ সাল থেকে ১৯৯০ সাল দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াই করে গণতন্ত্রে উত্তরণের পর ১৯৯৬ সালে প্রথম বারের মতো রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসে শেখ হাসিনা পাহাড়ী জনপদ থেকে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার মাধ্যমে জাতিকে তার দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন বাংলার মানুষের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির বীজ বপন করে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতে শুরু করছিলেন। পূর্বসূরির গৌরবময় সাফল্য গাথার মতো, প্রথম মেয়াদে শেখ হাসিনার সরকার বেশ কয়েকটি স্মরণীয় সাফল্য এনে দিয়েছিলেন দেশকে। তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তিচুক্তি, যমুনা বঙ্গবন্ধু সেতু উদ্বোধন, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জন। দিনবদলের অঙ্গীকারের মাধ্যমে ২০০৯ সালে যাত্রা শুরু করা শেখ হাসিনার সরকার ২০১৪ সালের ১২ জানুয়ারি টানা দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠন করেছিলেন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার অর্থনীতি, অবকাঠামো, কূটনীতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং সামগ্রিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জনের মধ্য দিয়ে সাফল্যের সঙ্গে দ্বিতীয় মেয়াদের চার বছর আট মাস অতিক্রম করতে চলেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও সাফল্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যাপক প্রশংসা কুড়িয়েছে। জাতীয় তথ্য বাতায়নের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বিগত সাড়ে নয় বছরে বাংলাদেশে অবকাঠামো উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, বিদ্যুত উৎপাদন, পুষ্টি, মা এবং শিশু স্বাস্থ্য, প্রাথমিক শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। দেশ আর্থ-সামাজিক সূচকসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে এবং মাথাপিছু আয় বৃদ্ধিসহ মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের কাজ অব্যাহতভাবে এগিয়ে চলেছে। এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও মিলেছে। ক্ষুধা দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে লড়াইরত বাংলাদেশকে স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর জাতিসংঘ স্বল্পোন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার তিনটি সূচকের মধ্যে সব কটিই পূরণ করায় (এলডিসি) শ্রেণী থেকে বের হওয়ার যোগ্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে জাতিসংঘের বিবেচনায় উন্নয়নশীল দেশের পথে বাংলাদেশের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হলো। গত ২৩ মার্চ ২০১৮ তারিখে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের যোগ্যতা অর্জনের আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতিপত্র দিয়েছে। বাংলাদেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হলো এই অর্জন। এর আগে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। এছাড়া জাতিসংঘ ঘোষিত সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যগুলো ভালভাবে অর্জনের স্বীকৃতি পেয়েছে। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ এখন এক বিস্ময়। গত জানুয়ারি মাসে প্রকাশিত ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ‘ইনক্লুসিভ ইকোনমিক ইনডেক্স অনুযায়ী ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশ। এটি শেখ হাসিনার উন্নত দেশের স্বপ্নপূরণের পথে আরও একটি মাইলফলক। সবকিছু ঠিক থাকলে ২০২১ সালে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ, ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ সব হারানোর বেদনা বয়ে বেড়ানো স্বপ্নচারী এক নারীর বন্ধুর পথ পাড়ি দেয়ার ইতিহাস আজকের বাংলাদেশ। বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় উঠে আসে জন্মের ৫০ বছরেরও কম সময়ের মধ্যে কিভাবে দ্রুতগতিসম্পন্ন বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের মাধ্যমে বাংলাদেশের সমুদ্র ও স্থানীয় নদী চ্যানেলগুলোতে থাকা জাহাজগুলো স্থলভাগের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ, দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা গ্রহণ ও টেলিভিশন প্রদর্শন করতে পারবে। এছাড়াও বিভিন্ন নৌবন্দর ও বাতিঘর ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর মাধ্যমে টেলিযোগাযোগ সেবার আওতায় আসবে। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার মিশনে নিয়ামক ভূমিকা পালন করেছে শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্ব, দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনা, এমডিজি অর্জন, এসডিজি বাস্তবায়নসহ শিক্ষাকে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য শতভাগ ছাত্রছাত্রীর মাঝে বিনামূল্যে বই বিতরণ কার্যক্রম। শিক্ষায় ডিজিটালাইজেশনের ছোঁয়া, ৩৫০০০ মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম স্থাপন ও মাল্টিমিডিয়া কনটেন্টের মাধ্যমে শ্রেণী পাঠদান, ২৬ হাজার ১৯৩টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয়করণ, পর্যায়ক্রমে সকল স্তরের শিক্ষা ব্যবস্থা জাতীয়করণের পরিকল্পনা, প্রাথমিক থেকে মাস্টার্স ও পিএইচডি পর্যন্ত শিক্ষা খাতে প্রায় ৪ কোটি ৩৭ লাখ ৭ হাজার শিক্ষার্থীকে উপবৃত্তির আওতায় আনয়ন, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড়আয়ু বৃদ্ধি, রফতানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, রেমিটেন্স প্রবাহে গতি আনতে ই-পাসপোর্ট জগতে প্রবেশ, সমুদ্রসীমা বিরোধ নিষ্পত্তি, সিটমহল সমস্যার সমাধান, ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারী সেবা পৌঁছে দেয়ার অভিপ্রায়ে ৪৫৫০টি ইউনিয়ন পরিষদে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার স্থাপন, বিগত সাড়ে নয় বছরে ২২ লাখ ৩৭ হাজার ৮৬ জন যুবক ও যুব মহিলাকে বিভিন্ন ট্রেডে প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হিসেবে গড়ে তোলা, ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচীর আওতায় ডিসেম্বর ২০১৭ সাল পর্যন্ত ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৯৬ জনকে প্রশিক্ষণ প্রদান করে জাতি ও সমাজ গঠনমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে ২ বছরের অস্থায়ী কর্মে নিযুক্ত করা হয়েছে। ২৫ হাজারের বেশি পোর্টালের সমন্বয়ে তৈরি করা হয়েছে বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ন্যাশনাল ওয়েব পোর্টাল। বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের তালিকায় পোশাক শিল্পের পাশাপাশি যুক্ত হয়েছে জাহাজ, ওষুধ এবং বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্যসামগ্রী। স্বল্প সময়ে রফতানি পণ্যের তালিকায় বাংলাদেশের আইটি শিল্প বহির্বিশ্বে অভূতপূর্ব সুনাম কুড়িয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, বাংলাদেশ ব্যাংক, বেসিস, বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস এবং আউট সোর্সিংয়ে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে রফতানি আয় প্রায় ৮০০ মিলিয়ন ডলার। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে সারা বিশ্বে মিঠা পানির মাছ উৎপাদনে চতুর্থ অবস্থানে বাংলাদেশ। গ্লোবাল জেন্ডার গ্যাপ রিপোর্ট ২০১৭ অনুযায়ী লিঙ্গ সমতার দিক দিয়ে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শীর্ষে এবং নারীর রাজনৈতিক ক্ষমতায়নের দিক দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে। গত বছর পদ্মা সেতু, কক্সবাজার এলএনজি টার্মিনাল স্থাপন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, ঢাকা মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্রবন্দর, মাতারবাড়ি বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র, কর্ণফুলী টানেল, চট্টগ্রাম আউটার রিং রোড প্রকল্প, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বঙ্গবন্ধু মেরিটাইম ইউনিভার্সিটি, পদ্মা সেতু রেল সংযোগ ও দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনদুম রেললাইনের মতো মেগা প্রকল্পগুলোতে গতি সঞ্চারিত হয়েছে। গত বছর ৩০ নবেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বহুল প্রতীক্ষিত দেশের একমাত্র পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের মূল নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেছিলেন অতি সম্প্রতি বিদ্যুত কেন্দ্রটির দ্বিতীয় ইউনিটের নির্মাণকাজ উদ্বোধনের মাধ্যমে বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে পারমাণবিক জ্বালানি শক্তিধর দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হলো। দেশের সবচেয়ে বৃহৎ অবকাঠামো পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলেছে এবং ইতোমধ্যে এর ৫০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ফেনী জেলার মহীপালে দেশের প্রথম ছয় লেনের ফ্লাইওভারের কাজ নির্দিষ্ট সময়েই শেষ হয়েছে। ইতোমধ্যেই এই ফ্লাইওভার যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। দেশের সম্ভাবনাময় আইটি খাতের উন্নয়নে সারাদেশে অসংখ্য হাইটেক পার্ক সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলেছে, ইতোমধ্যে যশোরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়ার টেকনোলজি পার্ক’ উদ্বোধন করা হয়েছে। মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ক্ষুদ্র আয়তনের একটি উন্নয়নশীল দেশ হয়েও বাংলাদেশ সারা বিশ্বের কাছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের নিবিড় সমন্বিত ব্যবস্থাপনা, ক্ষুদ্র ঋণের ব্যবহার এবং দারিদ্র্য দূরীকরণে ভূমিকা, পরিবেশ সুরক্ষায় বৃক্ষরোপণ, প্রভৃতি সামাজিক ও অর্থনৈতিক সূচকের ইতিবাচক পরিবর্তন বিশ্বের অন্যান্য স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে। শেখ হাসিনার সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচী দারিদ্র্য বিমোচন ও উন্নয়ন কর্মকা-ের কেন্দ্রে স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের এই সকল জনহিতকর সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচী কল্পনাতীত বলে মন্তব্য করেছে বিদেশী গণমাধ্যম। অর্থনৈতিক বিভিন্ন সূচকের ইতিবাচক তুলনামূলক বিশ্লেষণ থেকে বুঝা যায় উন্নত দেশ গঠনের স্বপ্নপূরণে শেখ হাসিনার বাংলাদেশের পথচলা কতটা অপ্রতিরোধ্য। এছাড়া শেখ হাসিনার বহুল আকাক্সিক্ষত স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ নির্মাণের লক্ষ্য পূরণের সুবাদে দেশের ১৬২ মিলিয়ন জনসংখ্যা একটি ডিজিটালাইজড জ্ঞানভিত্তিক সমাজে পরিণত হয়েছে। দেশের টেলিকম খাতেও ব্যাপক অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। ২০০৬ সালের ৫৭ লাখ মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৪ কোটি, একই সময়ে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে দেশে ফিরে মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন বাকি জীবন বাবার স্বপ্নের পথ ধরে এদেশের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে যাবেন। আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে তিনি রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। শেখ হাসিনা স্বপ্ন দেখেছেন এদেশের মানুষ শিক্ষিত ও প্রযুক্তিসমৃদ্ধ উন্নত জীবনযাপন করবে। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এদেশের মানুষ আর না খেয়ে থাকবে না। তিনি স্বপ্ন দেখেছেন এদেশের মানুষ আর চিকিৎসার অভাবে মারা যাবে না। শেখ হাসিনা তার স্বপ্নপূরণের পথে এগিয়ে চলেছেন দুর্বার গতিতে। ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পদার্পণ করেছে এবং আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা অর্জন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এর নির্বাচনী ইশতেহারে ক্ষুধা দারিদ্র্য দূর করে অর্থনৈতিক মুক্তির কথা বলা হয়েছিল। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে পথেই এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। যার ফলে সরকারের আশা ২০৩০ সালের মধ্যেই দেশ ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত এবং ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশে রূপান্তরিত হবে। ১৯৯৬-২০০১, ২০০৯-২০১৪ এবং ২০১৪ থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ তিন মেয়াদ দেশ শাসন করছে। ১৯৮১ সালের সেই বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় শেখ হাসিনার দেশে ফেরার তাৎপর্য এখন কাউকে দেখিয়ে দিতে হয় না। এই তিন মেয়াদে শেখ হাসিনা এবং তাঁর সরকারের অর্জন পূর্ববর্তী সরকারগুলোর অর্জনকে যে ছাড়িয়ে গেছে তা এখন বিশ্ববাসী স্বীকার করে। অচিরেই বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরেই বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্ত হবে। একসময় যে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুর অর্থায়ন প্রত্যাহার করেছে সেই বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশে এসে উন্নয়নপ্রত্যাশী দেশগুলোর সামনে বাংলাদেশকে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরেছেন। উন্নত দেশের জি-৭ ক্লাব শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শুনতে চেয়েছেন তাঁর দেশের উন্নয়নের গোপন রহস্যের কথা। সম্প্রতি জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস এবং বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবেলায় বাংলাদেশকে তাদের অব্যাহত সহযোগিতার পাশাপাশি ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গাকে আশ্রয় প্রদানে বাংলাদেশের মহানুভবতার প্রশংসা করেন। শেখ হাসিনার মহানুভবতায় মুগ্ধ বিশ্ব গণমাধ্যম। বিশ্বের অসংখ্য প্রভাবশালী গণমাধ্যম শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অফ হিউমিনিটি’ এবং ‘নিউ স্টার অব দ্য ইস্ট’ অভিধায় ভূষিত করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিলেন। বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদান এবং আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখায় ১৯৯৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রায় ৪২টি পুরস্কার, পদক, ডক্টরেট ও সম্মাননা অর্জন করেছেন। আমরা বিশ্বাস করি শেখ হাসিনা যেতে পারবেন আরও অনেক দূর, যদি তিনি ব্যাংকিং সেক্টরসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে লাগামহীন দুর্নীতি, অন্তর্দলীয় কোন্দল এবং আমলাতন্ত্রকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ এবং দেশের ভবিষ্যত প্রজন্মের প্রতিনিধি কিশোর-তরুণ সমাজকে অবৈতনিক আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষায় শিক্ষিত করে গড়ে তুলতে পারেন। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×