ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

জনস্বাস্থ্যে যুগান্তকারী যাত্রা

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২১ জুলাই ২০১৮

 জনস্বাস্থ্যে যুগান্তকারী যাত্রা

দেশে বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসা সেবা গ্রহণের আগ্রহ ও পরিসর বেড়েছে। মানুষও আগের তুলনায় এখন অনেক বেশি সচেতন। সঠিক প্রচারণা, নীতি নির্ধারণ এবং জনগণের দোরগোড়ায় আধুনিক চিকিৎসা সেবা পৌঁছে দেয়ার ব্রতে বর্তমান সরকার স্বাস্থ্যখাতে নতুন সম্ভাবনার সূচনা করতে সক্ষম হয়েছে। জাতীয় স্বাস্থ্যনীতি, বাংলাদেশ জনসংখ্যা নীতি, বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় আইন, বাংলাদেশ মেডিক্যাল ও ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, রক্ত পরিসঞ্চালন আইন, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ আইন ইত্যাদি প্রণয়ন করে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী এবং জনগণের স্বার্থ-সংরক্ষণ নিশ্চিত করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তির হাত ধরে ডিজিটাল বাংলাদেশ স্বাস্থ্যখাতের কার্যক্রম এগিয়ে যাচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, স্বাস্থ্য অধিদফতরসহ সকল দফতর নিজস্ব ওয়েব সাইটের মাধ্যমে দফতরের যাবতীয় কার্যক্রম ও তথ্য জনগণকে পৌঁছে দিচ্ছে। স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে একটি সমন্বিত ও কার্যকর সেবায় রূপান্তরের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস বিভাগ দক্ষতা দেখাচ্ছে। প্রতিটি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানকে এই নেটওয়ার্কের আওতায় এনে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যখাতে আজকের বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সাময়িকী ‘ল্যানসেট’। বিশ্বের ১৯৮টি দেশের মধ্যে ৫২তম অবস্থানে বাংলাদেশকে আসীন করে ‘ল্যানসেট’ বলেছে, স্বাস্থ্যমান উন্নয়নের সূচকে বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানকেও পেছনে ফেলে দিয়েছে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ভারতের চাইতেও অগ্রগামী বাংলাদেশ। স্বাস্থ্যখাতের এই সুঠাম, সবল এবং দ্যুতিময় চেহারার দিকে একবার ভাল করে তাকালে অনেকেই খুঁজে পাবেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার ক্ষেত্রে তারই উত্তরসূরিদের সংগ্রামী অগ্রযাত্রার সম্ভাবনাময় প্রতিচ্ছবি। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জনকণ্ঠে প্রকাশিত তার একটি লেখায় সুস্পষ্টভাবে বলেছিলেনÑ ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় সেবা প্রদানের ক্ষেত্রেও ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে যা এখন দৃশ্যমান। একথা অনস্বীকার্য, বিশেষায়িত হাসপাতাল, সরকারী মেডিক্যাল কলেজগুলো, জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের হাসপাতালগুলো বর্তমানে সাধারণ ও গরিব মানুষের প্রধান আশ্রয়স্থল। চিকিৎসকরা পাচ্ছেন কর্মোপযোগী পরিবেশ, আধুনিক প্রশিক্ষণ, অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি এবং প্রযুক্তির সন্নিবেশ।’ এটা অনস্বীকার্য যে, আমাদের সম্পদ খুবই সীমিত, কিন্তু জনসংখ্যার চাপ বিশাল। এই বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য সেবা চালিয়ে যাওয়া রীতিমতো দুঃসাধ্য একটি কাজ। সরকারী হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকরা জানেন কী এক পর্বতসম সমস্যা অতিক্রম করে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ, ত্রিগুণ, কোথাও কোথাও চারগুণ রোগীকে তারা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন যথাসাধ্য। এমন একটি বাস্তবতায় দেশের সব নাগরিকের তথ্য সংবলিত একটি স্থায়ী ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেজিস্ট্রি তৈরির কাজ চালাচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এজন্য বাংলাদেশের সব গ্রামে পরিচালিত একটি স্বাস্থ্য শুমারির মাধ্যমে সব পরিবারের নাগরিকের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে চিকিৎসকদের পরামর্শসহ কোথায়, কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় তার পুরো গাইডলাইন তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। তৈরি করা হচ্ছে তথ্য ভা-ার। এই তথ্য ভা-ারে প্রতিটি নাগরিকের পরিচিতি নম্বরসহ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকবে। এই তথ্য ভা-ার তৈরি হলে দেশের জনগণের হালনাগাদ জনমিতি, জন্ম-মৃত্যুর হার ও রোগ-ব্যাধিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য তথ্য যে কোন সময় কম্পিউটারের বোতাম টিপেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। যে কোন হাসপাতালে চিকিৎসার সময় রোগীর নাম-ঠিকানা লিখতে হবে না। পরিচিতি নম্বর থেকেই সব তথ্য জানা যাবে। এ প্রক্রিয়ায় দেশের প্রত্যেক নাগরিকের হাতে একটি করে ইলেক্ট্রনিক হেলথ কার্ড পৌঁছে দেয়ার বিশাল কর্মযজ্ঞটি সম্পন্ন হলে জনস্বাস্থ্যের পরিসরটিতে বিরাট একটি অর্জন সাধিত হবে, এতে কোন সন্দেহ নেই।
×