ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিশ লাখ বৃক্ষরোপণ

প্রকাশিত: ০৪:০৯, ২১ জুলাই ২০১৮

ত্রিশ লাখ বৃক্ষরোপণ

১৯৭১ সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী বাংলাদেশে নজিরবিহীন গণহত্যা চালিয়েছিল। এই ঘৃণ্য হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে তখনই বিশ্বব্যাপী ব্যাপক জনমত তৈরি হয়েছিল। তখন বিভিন্ন দেশের জনগণ বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশেষভাবে সমর্থন দিয়েছিল। বিশ্বের শান্তিপ্রিয় মানুষের এই সমর্থন মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের যোদ্ধাদের বিশেষ প্রেরণা যুগিয়েছিল। একাত্তর সালে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দেশের যে নজিরবিহীন হত্যাকা- এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডে যুক্ত হয়েছিল, তা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার জন্য ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হলেও তা যথেষ্ট ছিল না। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লাখ শহীদসহ বিশ্বব্যাপী গণহত্যার শিকার অসংখ্য মানুষের স্মৃতি বিশ্ববাসীর সামনে বিশেষভাবে তুলে ধরতে ত্রিশ লাখ বৃক্ষরোপণের কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী ত্রিশ লাখ বীর শহীদের স্মরণে সারাদেশে একযোগে জেলা ও উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ত্রিশ লাখ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। দেশে প্রথমবারের মতো এ ধরনের কর্মসূচী পালন করা হয়। এই কর্মসূচীর মাধ্যমে দেশ তার স্বাধীনতা অর্জনে শহীদদের প্রতি আরেকবার শ্রদ্ধা জানাল। এই বিপুলসংখ্যক বৃক্ষ দেশের পরিবেশ রক্ষায় এবং বাস্তুতন্ত্রে বিশাল ইতিবাচক ভূমিকাও রাখবে। একেকটি বৃক্ষ একেকজন শহীদের আত্মত্যাগকে ধারণ করে রাখবে বলে বিশ্বাস। একাত্তর সালে দীর্ঘ নয় মাস পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী এ দেশের নিরীহ মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞসহ অন্য যেসব অপরাধমূলক কর্মকা-ে যুক্ত ছিল, তা যথাযথভাবে নতুন প্রজন্মের কাছে প্রতিভাত হবে তার পূর্ব পুরুষদের আত্মদানের মহিমা। বাঙালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালে জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান উপলক্ষে বলেছিলেন, দেশের প্রত্যেক নাগরিকের কর্তব্য এই বৃক্ষরোপণ অভিযানের সময় এবং পরে অধিক বৃক্ষরোপণ করা। প্রধানমন্ত্রী একই সময়ে বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও পরিবেশ মেলা এবং জাতীয় বৃক্ষরোপণ অভিযান ও বৃক্ষমেলার উদ্বোধন করে বলেছেন, কারও মুখাপেক্ষী না হয়ে জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ রক্ষায় নিজেদেরই উদ্যোগী হতে হবে। সবাই নিজের দেশের কথা চিন্তা করে পরিবেশ রক্ষায় শামিল হতে হবে। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য এবং রয়েল বেঙ্গল টাইগারের আবাসস্থল সুরক্ষায় প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই পদক্ষেপ জাতি হিসেবে আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের এবং সম্পদ রক্ষার জন্য সঙ্গত। কারণ পঁচাত্তর পরবর্তী শাসকরা সুন্দরবনের নদ-নদী, খাল ও চ্যানেলগুলো বন্ধ করে চিংড়ি চাষ প্রকল্প করায় এখানকার পানি লবণাক্ত হয়ে পড়েছিল। ফলে বন ও বৃক্ষ এবং প্রাণিসম্পদ ধ্বংস হওয়ার পথে ছিল। শেখ হাসিনার সরকার এই নদী এবং খাল পুনর্খনন করে নাব্য বৃদ্ধির পাশাপাশি তা জাহাজ চলাচলের উপযুক্ত কর তুলেছে। আমাদের সুষ্ঠুভাবে বেঁচে থাকার জন্য বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়নের গুরুত্ব অরিসীম। তা পরিবেশের উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনেও সহায়ক। দেশে বনভূমির পরিমাণ এখন বেড়ে ১৭ শতাংশ হয়েছে। দেশে মোট বৃক্ষের সংখ্যাও বাড়ছে। সামাজিক বনায়নসহ বছরে দশ কোটি গাছ রোপণ করা হচ্ছে। বাড়ির ছাদে, বারান্দায় বা আঙিনায় বাগান গড়ে তোলা হলে হোল্ডিং ট্যাক্স দশ শতাংশ হ্রাসসহ সবুজায়নের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানকে স্বল্প সুদে ঋণ দেয়ারও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এভাবে বাড়ছে বৃক্ষরোপণ ও সবুজায়নের হার। ফলে তাপমাত্রা হ্রাস ও পরিবেশ রক্ষায় তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশকে যত বেশি সবুজে ভরে ফেলা যাবে, তত মানুষ বাঁচবে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিটি উপকূলেই গড়ে তোলা সবুজ বেষ্টনীগুলো রক্ষণাবেক্ষণ জরুরী। দেশ বাঁচাতে হলে বৃক্ষরোপণ বাড়ানো সঙ্গত। জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবেলা ও পরিবেশ রক্ষায় প্রয়োজন সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এবং এক্ষেত্রে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা জরুরী। দেশ ও মানুষ বাঁচাতে হলে বৃক্ষরোপণ, সংরক্ষণে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিতের বিকল্প নেই।
×