ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ

হেলসিঙ্কিতে একান্ত বৈঠকের বিষয়বস্তু গোয়েন্দা প্রধানকে অবহিত করেননি ট্রাম্প

প্রকাশিত: ০৪:০৩, ২১ জুলাই ২০১৮

হেলসিঙ্কিতে একান্ত বৈঠকের বিষয়বস্তু গোয়েন্দা প্রধানকে অবহিত করেননি ট্রাম্প

হেলসিঙ্কিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সোমবার অনুষ্ঠিত শীর্ষ বৈঠকের পর সপ্তাহজুড়ে বিশ্বের রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়নের সূত্রপাত হয়েছে। বিশ্লেষকদের ধারণা দুই শীর্ষ নেতার এই বৈঠক নানা কারণে বিশ্বের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ বেশ কিছু বিষয়ে বিশ্ব পরিস্থিতি এখন দারুণ উত্তপ্ত। এসবের মধ্যে চীন ও ইইউ জোটের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য যুদ্ধ, ন্যাটো জোটের ভবিষ্যত সিরিয়া ও আফগান পরিস্থিতি, উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে দোদুল্যমান সম্পর্ক সব কিছু নিয়ে এই নেতার মধ্যে কোন গোপন সমঝোতা হলো কী না তা নিয়ে বিশ্বের সকল সচেতন গোষ্ঠী যেমন জানার জন্য উন্মুখ হয়ে আছে-তেমনি মার্কিন জনগোষ্ঠী ও ক্ষুব্ধ হয়েছে তাদেরকে সম্পূর্ণ অন্ধকারে রেখে পুতিনের সঙ্গে একান্ত আলোচনা করার জন্য। কারণ এই আলোচনা চলাকালে বেশ কিছু সময় পুতিন ও ট্রাম্প এবং তাদের দু জন দোভাষী ছাড়া কোন পক্ষের কেউ উপস্থিত ছিল না। এ প্রসঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক ড্যানিয়েল কোটস এনবিসি টিভি চ্যানেলে পুরো বিষয়টি নিয়ে তার অজ্ঞতার কথা বলেন। নিয়মানুযায়ী নিরাপত্তা ও অন্যান্য বিষয়ে আলোচ্যসূচী ঠিক করার আগে গোয়েন্দা সংস্থার প্রধানকে অবহিত করার কথা। কিন্তু ট্রাম্প সে পথে না গিয়ে এককভাবে পুতিনের সঙ্গে একান্ত বৈঠকে মিলিত হয়েছেন এবং বৈঠক শেষে মার্কিন নির্বাচনে রুশ হস্তক্ষেপের বিষয়ে পুতিনের বক্তব্য মেনেও নিয়েছেন। পরবর্তীতে দেশে যখন এ বিষয়ে সমালোচনা শুরু হয়Ñতখন তিনি আগের কথার সুর পাল্টে দ্বিধাগ্রস্ত জবাব দিয়েছেন। উল্লেখ্য, এনবিসির আন্দ্রিয়া মিশেল যখন ড্যানিয়েল কোটকে জিজ্ঞেস করেন যে, দু ঘণ্টারও বেশি সময় ট্রাম্প-পুতিনের এই অতি গোপনীয় আলোচনা রুশ পক্ষের ক্যামেরায় ধারণ করে রাখার সম্ভাবনা আছে কী না? জবাবে কোটস বলেন, এই সম্ভাবনা ও ঝুঁকি অস্বীকার করা যায় না। পুতিন-ট্রাম্পের মধ্যে আলোচনা যাই হয়ে থাক- বিশ্লেষকদের ধারণা এই আলোচনার সময় পুতিনই সারাক্ষণ প্রভাব বিস্তার করে ছিলেন। এ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান শিবিরেও সমালোচনা শুরু হয়েছে। কংগ্রেসে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা দাবি করেছেন যে, ট্রাম্পের পক্ষে যে দোভাষী ছিলেন তাকে সমন জারির মাধ্যমে ডেকে এনে পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় কী কী বিষয় স্থান পেয়েছিল তা জেনে নেয়া। কিন্তু ট্রাম্পের অনুগত রিপাবলিকানরা ডেমোক্র্যাটদের এই উদ্যোগ কার্যকর হতে দেয়নি। এ দিকে, প্রেসিডেন্ট পুতিন হেলসিঙ্কি থেকে মস্কো ফিরে তার এক সংক্ষিপ্ত বক্তৃতায় বলেন যে, ট্রাম্পের সঙ্গে বৈঠক সার্থক হয়েছে এবং এতে বেশ কয়েকটি সফল চুক্তি ও মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পুতিন তার বক্তব্যে আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের কোন কোন মহল হেলসিঙ্কি বৈঠকের অগ্রগতিকে অস্বীকার বা খাটো করে দেখার চেষ্টা করছে। এরা তাদের রাজনৈতিক উচ্চাকাক্সক্ষা চরিতার্থ করার জন্য রুশ-মার্কিন সম্পর্ককে বলি দিতে চায়। পুতিন তার এ কথার মাধ্যমে ট্রাম্পবিরোধী শক্তি তথা ডেমোক্র্যাটদের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা। এর একদিন আগে ওয়াশিংটনে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত আনাতোলি এন্তোলভ মস্কোতে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, হেলসিঙ্কি বৈঠকে গুরুত্বপূর্ণ মৌখিক চুক্তি সাধিত হয়েছে। আন্তোনভ তার বক্তব্যে সবকিছু পরিষ্কার না করলেও একথা বলেন, বৈঠকে পুতিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে কতকগুলো সুনির্দিষ্ট ও আকর্ষণীয় প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে মাঝারি পাল্পার পারমাণবিক অস্ত্র, দ্বিপাক্ষিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ও সিরিয়া যুদ্ধ প্রসঙ্গও রয়েছে। এ দিকে, হোয়াইট হাউস মুখপাত্র স্যান্ডার্স বুধবার এক বিবৃতিতে বলেন, হেলসিঙ্কির মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপের দ্বার উন্মোচিত হলো। হেলসিঙ্কি বৈঠকে ট্রাম্পের দুর্বল ভূমিকা যুক্তরাষ্ট্রে যখন জোরেশোরে আলোচিত হচ্ছে তখন তার পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ফক্স নিউজ চ্যানেলকে বলেন যে, এটি অবাস্তব কথা। বৈঠকে ট্রাম্পের ভূমিকা যথার্থ ছিল। কারও সঙ্গে পরামর্শ না করে ট্রাম্প পুতিনকে যুক্তরাষ্ট্র সফরের আমন্ত্রণ জানানোর খবরে নতুন করে বিতর্ক উস্কে উঠেছে। ট্রাম্পের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের বরাত দিয়ে স্যান্ডার্স প্রথম একথা ঘোষণা করেন। স্যান্ডার্স বলেন, বিষয়টি এখনও চূড়ান্ত হয়নি, প্রসঙ্গটি প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনায় সীমাবদ্ধ আছে। সবকিছু মিলে ট্রাম্পের একগুঁয়ে মনোভাবে বীতশ্রদ্ধ মার্কিন ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্সের পরিচালক ড্যান কোটস শীঘ্রই পদত্যাগ করতে পারেন বলে গুজব ছড়িয়ে পড়েছে। হোয়াইট হাউসের কোন কোন কর্মকর্তাও কোটসকে আক্রমণ করে বক্তব্য রাখছেন। তবে এই মুহূর্তে কোটসের পদত্যাগে নতুন করে ঝামেলা হতে পারে ভেবে ট্রাম্প কোটসকে শান্ত করার চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। -ওয়াশিংটন পোস্ট।
×