ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারী বিষয়ক রিপোর্টিংয়ে জনকণ্ঠের হীরাসহ ৬ সাংবাদিক পুরস্কৃত

প্রকাশিত: ০৬:৫৩, ২০ জুলাই ২০১৮

নারী বিষয়ক রিপোর্টিংয়ে জনকণ্ঠের হীরাসহ ৬ সাংবাদিক পুরস্কৃত

স্টাফ রিপোর্টার ॥ গণমাধ্যমে নারীর প্রতি সহিংসতা, যৌন নির্যাতন প্রতিরোধসহ নারীবিষয়ক প্রতিবেদন করায় দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিকসহ ৬ সাংবাদিককে পুরস্কার দিয়েছেন উইমেন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ ও নারী উন্নয়ন শক্তি। প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে তিন এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার তিন সাংবাদিককে এই পুরস্কার দেয়া হয়। প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে দৈনিক জনকণ্ঠের স্টাফ রিপোর্টার ওয়াজেদ হীরা প্রথম পুরস্কার লাভ করেন। উইমেন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ ও নারী উন্নয়ন শক্তির যৌথ আয়োজনে এই অনুষ্ঠানে সেরা সাংবাদিকদের হাতে প্রধান অতিথি হিসেবে পুরস্কার তুলে দেন নারী ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি। জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, নারী উন্নয়ন শক্তির নির্বাহী পরিচালক ড. আফরোজা পারভীন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উইমেন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মন্টি। মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, নারী এখন আর বোঝা নয়; আদিকালের সেই ধারণা যোগ্যতা দিয়ে পাল্টে দিয়েছে নারীসমাজ। ঘর থেকে কর্মক্ষেত্র সকল জায়গায় নারী তার যোগ্যতা দিয়েই অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। সমাজের উন্নয়নে নারীকে পেছনে রাখার সুযোগ নেই। একই সঙ্গে নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে যে কোন নির্যাতিত নারীর পাশে দাঁড়াতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বানও জানান প্রতিমন্ত্রী। নারীকে নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারে গণমাধ্যমকর্মীদের উৎসাহ দিতে এই পুরস্কারের আয়োজন করা হয় বলেও অনুষ্ঠানে জানানো হয়। জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে সারাদেশ থেকে জমা হওয়া শতাধিক রিপোর্টের মধ্যে উল্লিখিত ছয়জনকে পুরস্কৃত করা হয়। প্রিন্ট মিডিয়া ক্যাটাগরিতে দ্বিতীয় হয়েছেন নিউএজের কুমিল্লা প্রতিনিধি ইয়াসমিন রীমা এবং তৃতীয় হয়েছেন যুগান্তরের সাংবাদিক রীতা ভৌমিক। টেলিভিশন ক্যাটাগরিতে প্রথম হয়েছেন এসএটিভির সিনিয়র রিপোর্টার ফারজানা শোভা, সময় টিভির স্টাফ রিপোর্টার শাতিলা শারমীন এবং তৃতীয় হয়েছেন নিউজ ২৪ এর কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি হুমায়ুন কবির সূর্য্য। পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট সার্টিফিকেট ও সম্মানী তুলে দেন অতিথিরা। পুরস্কারপ্রাপ্ত সাংবাদিকদের অভিনন্দন জানিয়ে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকতা একটি চ্যালেঞ্জিং পেশা। এই পেশাতেও নারী ভাল করছে। তারা পুর¯ৃ‹ত হচ্ছেন। প্রতিমন্ত্রী বলেন, বতর্মানে দেশের যে কোন প্রান্তে কোন নারী নির্যাতিত হলেই আমরা মিডিয়ার কল্যাণে জানতে পারছি এবং দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে পারি। এসব ক্ষেত্রে একেকজনের প্রতি অন্যজনের শ্রদ্ধাবোধ থাকা আরও বেশি জরুরী বলেও জানান তিনি। নারীর প্রতি সহিংসতা রুখতে সবাইকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, অনেক সময় দেখা যায় কোন নারীকে নির্যাতন করা হলে অন্যরা তাকিয়ে দেখে। কিন্তু তাকিয়ে না দেখে এগিয়ে আসতে হবে, প্রতিবাদ করতে হবে। সবার অংশগ্রহণই পারে এসব নির্যাতন-সহিংসতা রুখে দিতে। এ সময় প্রতিমন্ত্রী সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথাও তুলে ধরেন। শেখ হাসিনার সরকার বর্তমানে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে সে কথাও বলেন তিনি। বতর্মান কোটা ব্যবস্থার বিষয়ে আন্দোলন নিয়েও কথা বলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, কোটা না থাকলে অনেকক্ষেত্রে নারীর যোগ্যতা প্রমাণ হতো না। এছাড়াও যারা সুযোগসুবিধা থেকে একটু পিছিয়ে আছে তাদের তো একটু সুযোগ দিতেই হবে। তবে মেধাবীদেরও মূল্যায়ন করা হচ্ছে। দেশের অগ্রযাত্রা আর উন্নয়নে সর্বক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত থাকতে হবে। বাসসর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ বলেন, বর্তমানে উন্নয়ন সাংবাদিকতা একটি বড় সাংবদিকতা। একজন কৃষক বেশি ফসল উৎপাদন করলে সেটি সংবাদ হয়। আবার জামায়াত-শিবিরের লোকজন আমাদের পরিবেশের জন্য গাছ কেটে দিলে সেটিও খবর হয়। বর্তমানে সাংবাদিকতায়ও নারীর অংশগ্রহণ বেড়েছে। নারী নির্যাতন নিয়ে বলেন, একটা সময় ছিল নারী নির্যাতিত হতো সেটি এখন অনেক কমে গেছে বলেও জানান তিনি। সভাপতির বক্তব্যে প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, অনুষ্ঠানটির আয়োজন ছোট হলেও এক বছর ধরে চলছে এর নানা কার্যক্রম। আমরা সারাদেশের সাংবাদিকদের সংযোগ ঘটানোর চেষ্টা করেছি। নারীর পাশাপাশি পুরুষও যে নারীর প্রতি নির্যাতন- সহিংসতা নিয়ে ভাবেন সেটি পুরস্কারের মাধ্যমে আপনারা জেনেছেন। কেননা, আমাদের পুরুষ সাংবাদিকরাও ভাল লেখনীর মাধ্যমে পুরস্কার পেয়েছেন। ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী নারী। তিনি যেভাবে দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করছেন তাতে আমাদের পিছিয়ে রাখা যাবে না। অনেকক্ষেত্রেই নারীর প্রতি সহিংসতা আগের চেয়ে অনেক কমে এসেছে। এর পরও দু’একটি ঘটনা বহির্বিশ্বে আমাদের সুনাম নষ্ট করে দেয়। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হয়। কোন কোন সময় নারী গাড়িতে, বাড়িতে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে, ইভটিজিংয়ের শিকার হচ্ছে তবে এসবের বিচারও হচ্ছে। আমরা এসব দেখতে চাই না। এজন্য সর্বস্তরে সচেতনতা দরকার বলেও জানান তিনি। অনেক সময় ঘরের মধ্যে নারী নির্যাতিত হলে ঐ সময় সরকারের কিছু করার থাকে না। তবে সচেতনতা এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখতে পারে। নারী যাতে কোন ধরনের নির্যাতনের শিকার না হয় সেজন্য একটি সামাজিক আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার কথা বলেন প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক। নারী উন্নয়ন শক্তির নির্বাহী পরিচালক ড. আফরোজা পারভীন বলেন, ১৯৯২ সাল থেকে আমরা কাজ করছি। আমরা আগামীতেও অনেক কাজ করতে চাই। নারীর প্রতি সহিংসতার বিষয়টি অধিক গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানান তিনি। পুরস্কার প্রাপ্তির পর অনুভূতি প্রকাশ করে প্রথম স্থান লাভ করা দৈনিক জনকণ্ঠের সাংবাদিক ওয়াজেদ হীরা বলেন, কর্মের স্বীকৃতি হলো পুরস্কার। আর এই পুরস্কার কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ববোধ আরও বাড়িয়ে দিল। ভাল সুযোগসুবিধা পেলে নারীও নিজেকে মেলে ধরতে পারেন। সর্বক্ষেত্রে নারীর উন্নয়ন; তবে নারী ক্রিকেট ও ফুটবলে নারী খেলোয়াড় পিছিয়ে আছেন সেদিকে একটু দৃষ্টি দেয়ার আহ্বান জানান। অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে ইলেকট্রনিক ক্যাটাগরিতে প্রথম স্থান লাভ করা এসএটিভির সাংবাদিক ফারজানা শোভা বলেন, আমরা নারীর উন্নয়নের পাশাপাশি কিছু জায়গায় বৈষম্যও দেখি। আমরা এখনও নারীকে নানাভাবে নিগৃহীত হতে দেখি। সামনের দিনগুলোতে এসব কমে আসবে বলে আশা প্রকাশ করেন। অনুষ্ঠানে সহায়তা করেছেন সাউথ এশিয়া উইমেনস ফান্ড, শ্রীলঙ্কা। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১০ সাল থেকে নারী সাংবাদিকদের পেশাগত মান বৃদ্ধিতে কাজ করছে উইমেন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ। এ সময় নারী উন্নয়ন শক্তির বিভিন্ন কর্মকর্তাসহ উইমেন জার্নালিস্টস নেটওয়ার্কের প্রতিনিধি ও অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
×