ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মামুন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিন নারীসহ গ্রেফতার ৪

প্রকাশিত: ০৬:২১, ২০ জুলাই ২০১৮

মামুন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিন নারীসহ গ্রেফতার ৪

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা মহানগর পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান (৩৪) হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে তিন নারীসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরা হচ্ছেÑ মিজান শেখ, মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফি, সুরাইয়া আক্তার কেয়া ও ফরিয়া বিনতে মীম। বুধবার রাতভর রাজধানীর বাড্ডা ও হাজারীবাগ এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ নিয়ে এই হত্যাকা-ে জড়িত পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হলো। বৃহস্পতিবার ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন এ কথা জানান। অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, গত ৮ জুলাই মামুন রাজধানীর সবুজবাগ এলাকা থেকে নিখোঁজ হন। এ ঘটনায় তার পরিবারের পক্ষ থেকে সবুজবাগ থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়। ১০ জুলাই গাজীপুরের কালীগঞ্জের উলুখোলার এক জঙ্গল থেকে মামুনের পোড়া মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরে পুলিশের এসবি পরিদর্শক মামুন নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় তার বন্ধু ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রহমত উল্লাহকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে আব্দুল বাতেন জানান, প্রায়ই টেলিভিশনের বিভিন্ন ক্রাইম সিরিয়ালে অভিনয় করতেন পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মামুন এমরান খান (৩৪)। সেই সূত্রে চার বছর আগে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার রহমত উল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্ব হয় তার। রহমতউল্লাহর পরিচিত মেহেরুন্নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন ওরফে আন্নাফিও তাদের সঙ্গে বিভিন্ন সময় অভিনয় করেছেন। রহমতউল্লাহর ও স্বর্ণার সঙ্গে মাঝে মধ্যেই যোগাযোগ হতো। সেই সূত্রে গত ৮ জুলাই স্বর্ণা বনানীর ২/৩ নম্বর রোডের ৫ নম্বর বাড়ির দ্বিতীয় তলায় তার বান্ধবীর জন্মদিনের দাওয়াত দেয় পূর্বপরিচিত রহমতউল্লাহকে। রহমতউল্লাহ ওই জন্মদিনের অনুষ্ঠানে পুলিশ বন্ধু মামুনকেও যাওয়ার অনুরোধ করেন। রহমতের ডাকে সেখানে মামুনও যান। অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, রহমতউল্লাহ নিজের প্রাইভেটকারে, মামুন যান তার মোটরসাইকেল নিয়ে। এর কিছুক্ষণ পর স্বপন, মিজান, দিদার ও আতিক বাসায় ঢুকে তারা (রহমতউল্লাহ ও মামুন) অপকর্মে লিপ্ত ছিল বলে দাবি করে। তখন মামুন নিজেকে পুলিশ কর্মকর্তা পরিচয় দিলে তারা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে রহমতউল্লাহ ও মামুনকে বেঁধে মারধর শুরু করে। তিনি বলেন, রহমতউল্লাহকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করা ছিল দুর্বৃত্তদের টার্গেট। কিন্তু মামুন পুলিশ পরিচয় দেয়ায় তাদের টার্গেট পাল্টে যায়। মারধরের এক পর্যায়ে মধ্যরাতে মামুন মারা যায়। এতে তারা চিন্তিত হয়ে পড়ে। রহমতউল্লাহর বাঁধন খুলে দেয়। তখন রহমতউল্লাহ মামুনকে ডেকে এনেছে বলে নিজেও ফেঁসে যাবে ভেবে তাদের সঙ্গে মিলে যায়। পরদিন সকালে মামুনের লাশ বস্তায় করে তারা রহমতউল্লাহর গাড়িতে উঠায়। স্বপন, দিদার ও আতিক সেনাবাহিনী থেকে বহিষ্কৃত সদস্য। সেই সূত্রে তারা গাড়ি নিয়ে রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে যায়। খাওয়া-দাওয়া করে। এ সময় মিজান অন্যদের কাছে মামুনের মরদেহ পুড়িয়ে ফেলার পরিকল্পনা জানায়। একটি পাম্প থেকে পেট্রোল কেনে। সন্ধ্যার দিকে তারা গাড়ি নিয়ে কালীগঞ্জের দিকে যায়। এরপর জঙ্গলে লাশ নামিয়ে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। পরে তারা রহমতউল্লাহকেও মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়। এরপর গত ১০ জুলাই বাসায় ফেরার সঙ্গে সঙ্গেই রহমতউল্লাহকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশ। পরে তার দেয়া তথ্য অনুযায়ী বুধবার তিন নারীসহ চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। এক প্রশ্নের জবাবে অতিরিক্ত কমিশনার আব্দুল বাতেন জানান, তারা বনানীর ওই বাসাটি দুই মাস আগে ভাড়া নিয়েছিল। মানুষকে ফাঁসিয়ে অর্থ আদায় করাই তাদের লক্ষ্য ছিল। আর তাদের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পালন করত রবিউল। ওই বাসাটি ভাড়া নিয়েছিল নজরুল নামের একজন। তবে হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নজরুলের সম্পৃক্ততা কেউ স্বীকার করেনি। আব্দুল বাতেন আরও বলেন, এ ঘটনায় জড়িত অন্তত আরও চারজনের বিস্তারিত নাম পরিচয় পাওয়া গেছে। আশা করি তাদের খুব শীঘ্রই গ্রেফতার করা সম্ভব হবে। গ্রেফতারকৃতদের আলাদা আলাদাভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই অভিন্ন বর্ণনা পাওয়া গেছে বলে দাবি করেন আব্দুল বাতেন। তিনি বলেন, ওই চক্রের টার্গেট ছিল রহমতউল্লাহকে ওই বাসায় নিয়ে আটকে, ছবি তোলে ব্ল্যাকমেল করে তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেয়া। কিন্তু মামুন যাওয়ায় এবং নিজেকে পুলিশ বলায় তাদের সব পরিকল্পনা এলোমেলো হয়ে যায়। মামুনকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে জানতে চাইলে বাতেন বলেন, মূলত কিলঘুষিতে মামুন মারা যান। হয়তো কোন কিলঘুষি শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে লাগায় তার মৃত্যু হয়। সুরাইয়ার রিমান্ডÑ মিম, স্বর্ণা ও মিজানের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী ॥ কোর্ট রিপোর্টার জানান, পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পরিদর্শক মোঃ মামুন ইমরান খান হত্যা মামলায় আরও ৩ জন আসামি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। এরা হলেন ফারিয়া বিনতে মিম ওরফে মাইশা (১৮), মেহেরুন নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন (১৯) ও মিজানুর রহমান। বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম মাহমুদা আক্তার আসামি ফারিয়া বিনতে মিম ওরফে মাইশার, মহানগর হাকিম জিয়ারুল ইসলাম আসামি মিজানুর রহমানের এবং মহানগর হাকিম নুরুন্নাহার ইয়াসমিন আসামি মেহেরুন নেছা স্বর্ণার জবানবন্দী গ্রহণ করেন। আরেক আসামি সুরাইয়া আক্তার কেয়ার (২২) ৭ দিনের রিমান্ড আবেদনের শুনানি শেষে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ঢাকা মহানগর হাকিম কায়সারুল ইসলাম শুনানি শেষে ওই তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি ইন্সপেক্টর শেখ মাহবুবুর রহমান ৩ আসামি স্বীকারোক্তি গ্রহণ এবং ১ আসামির রিমান্ড আবেদন করেছিলেন। এই চারজনকে গতকালই প্রথম আদালতে হাজির করা হয়। এর আগে গ্রেফতারকৃত আসামি রহমত উল্লাহ (৩৫) গত ১৮ জুলাই আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন। বর্তমানে তিনি কারাগারে রয়েছেন। গত ১১ জুলাই ওই আসামির ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছিল আদালত। ওই রিমান্ড শেষে তিনি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছেন। গত ১০ জুলাই গাজীপুর জেলাধীন কালিয়াকৈর থানার উলখোলার বাইরদিয়া রাস্তার পাশের বাঁশের ঝোপের মধ্যে পেট্রোলবোমা দিয়ে পোড়ানো ইন্সপেক্টর মোঃ মামুন ইমরান খানের লাশ পাওয়া যায়। রহমত প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছেন, সুরাইয়া আক্তার কেয়া, মেহেরুন নেছা স্বর্ণা ওরফে আফরিন, ফারিয়া বিনতে মিম ওরফে মাইশাসহ আরও কয়েকজন মিলে মামুন ইমরান খানকে ফোন করে ডেকে এনে হত্যা করেন। মামুন এসবির স্কুল অব ইন্টেলিজেন্স পরিদর্শক পদে কর্মরত ছিলেন।
×