ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জেনেভা ক্যাম্পে ফের মাদকবিরোধী বড় অভিযান

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ২০ জুলাই ২০১৮

জেনেভা ক্যাম্পে ফের মাদকবিরোধী বড় অভিযান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আবারও ঢাকায় মাদকের আঁতুড়ঘর হিসেবে পরিচিত মোহাম্মদপুরের উর্দুভাষী অবাঙালীদের বসবাসের জেনেভা ক্যাম্পে মাদকবিরোধী বড় ধরনের অভিযান চালিয়েছে র‌্যাব। অভিযানে শতাধিক লোককে আটক করা হয়েছিল। পরে যাচাই বাছাই শেষে ৩৭ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বাকিদের ছেড়ে দেয় র‌্যাব। এই নিয়ে চলতি বছর পর পর তিন বার জেনেভা ক্যাম্পে বড় ধরনের অভিযান চালাল র‌্যাব ও পুলিশ। তিন বার চালানো অভিযানে প্রায় তিনশ’ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হয়েছে। উদ্ধার হয়েছে বিপুল মাদক। যার মধ্যে মরণনেশা ইয়াবার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি। বৃহস্পতিবার ভোর পাঁচটা থেকে সকাল সাতটা পর্যন্ত মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্পে মাদকবিরোধী বড় ধরনের অভিযান চালায় র‌্যাব-২। অভিযানের আগে পুরো ক্যাম্প ঘিরে ফেলা হয়। এরপর সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে বিভিন্ন বাড়িতে অভিযান চালানো হয়। অভিযানে শতাধিক লোককে আটক করা হয়। আটককৃতরা মাদকের সঙ্গে জড়িত কিনা সে বিষয়ে দীর্ঘ যাচাই বাছাই চলে। যাচাই বাছাইয়ে দুই নারীসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মাদক বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পায় র‌্যাব। তাদের কাছ থেকে ইয়াবা ও গাঁজা উদ্ধার হয়। তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরে তাদের মোহাম্মদপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ক্যাম্পের বাসিন্দারা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বছরের পর বছর ধরে ক্যাম্পগুলোতে অভিযান চালালেও মাদক নির্মূল হয়নি। সুযোগ পেলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মাদক ব্যবসায়ীরা। আর মাদকবিরোধী অভিযান ভ-ুল করে দেয়ার জন্য নানা ধরনের অপতৎপরতা চলে। সম্প্রতি ৯ জুলাই রাতে মাদকবিরোধী অভিযানে নারায়ণগঞ্জে র‌্যাবের সঙ্গে গোলাগুলিতে নিহত হয় কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী উর্দুভাষী অবাঙালী নাদিম হোসেন ওরফে বেজি নাদিম ওরফে বোমা নাদিম ওরফে পঁচিশ। তার মৃত্যুতে ক্যাম্পের অধিকাংশ বাসিন্দারই খুশি। কারণ নাদিম ও তার সহযোগীদের কারণে ক্যাম্পে মাদক সহজলভ্য। এতে করে ক্যাম্পের কিশোর-কিশোরীরাও মাদকের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ছে। তারা বলছেন, অথচ কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী ও তাদের আশ্রয় প্রশ্রয়দাতারা নেপথ্যে থেকে বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে পঁচিশকে ভাল মানুষ পরিচয় দিতে তার লাশ নিয়ে ক্যাম্পে মিছিল করিয়েছে। এছাড়া ক্যাম্প উচ্ছেদ ও বিদ্যুত সংযোগ কেটে দেয়ার গুজব ছড়িয়ে ক্যাম্পের বাসিন্দাদের দিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গত ১৬ জুলাই বিক্ষোভ করিয়েছে এসপিজিআরসির নেতারা। নেতাদের অনেকেই ক্যাম্পের বাসিন্দাদের কাছ থেকে নানা অজুহাতে টাকাও আদায় করছেন। এসব করার নেপথ্যে রয়েছে অন্য হিসেব। ক্যাম্পে মূলত তারাই মাদক ব্যবসায়ীদের আশ্রয় দিচ্ছেন। এ বিষয়ে উর্দুভাষী অবাঙালীদের সংগঠন মোহাজির ওয়েলফেয়ার এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অসি আহমেদ অসি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানান, এসপিজিআরসি ক্যাম্প উচ্ছেদের মিথ্যা প্রচার ও ক্যাম্প থেকে বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়ার মিথ্যা তথ্য প্রচার করে ক্যাম্পবাসীদের দিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করাচ্ছে। সরকারের তরফ থেকে ক্যাম্প উচ্ছেদ বা বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ করতে এবং আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অবাঙালী উর্দুভাষী ভোটাররা যাতে ক্ষমতাসীন দলকে ভোট না দেন, এজন্যই এমন ষড়যন্ত্র করা হয়েছে। প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৬ মে জেনেভা ক্যাম্পে বড় ধরনের অভিযান চালায় র‌্যাব। টানা ছয় ঘণ্টার সেই অভিযানে অন্তত দুই শতাধিক লোককে আটক করা হয়েছিল। এদের মধ্যে যাচাই বাছাই শেষে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী ও মাদকের সঙ্গে জড়িত থাকার দায়ে ১৫৩ জনকে গ্রেফতার করা হয়। বাকিদের ছেড়ে দেয়া হয়। অভিযানে র‌্যাবের গোয়েন্দা দল ও ডগ স্কোয়াড অংশ নিয়েছিল। এরপর গত ২০ জুন আবারও জেনেভা ক্যাম্পে অভিযান চালায় পুলিশ। টানা প্রায় তিন ঘণ্টার সেই অভিযানে ৫১ জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করা হয়। গত ৮ জুন ক্যাম্পের শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী পাঁচু ও পাপিয়াকে লালবাগ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ। ক্যাম্পবাসীদের ভাষ্য, মোহাম্মদপুরের ক্যাম্পগুলো সব সময়ই নানা কারণে আলোচিত। কখনও মাদকবিরোধী অভিযানকে কেন্দ্র করে মারামারি আবার কখনও বা বোমা তৈরির কারখানা স্থাপনকে কেন্দ্র করে আলোচনায় থেকেছে ক্যাম্প। ইতোপূর্বে ২০১৩ সালে পর পর দুই দিনের অভিযানে জেনেভা ক্যাম্পে দু’টি বোমা তৈরির কারখানা আবিষ্কৃত হয়। কারখানা থেকে দুই দিনে ১৩২টি বোমা উদ্ধার করেছিল র‌্যাব। এরপর ২০১৬ সালে অভিযানকালে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পুলিশের থেমে থেমে চৌদ্দ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষ হয়েছিল। ওই সময় হার্টএ্যাটাকে এক বয়স্ক মহিলার মৃত্যু হয়। আর সংঘর্ষে তিন পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়। ২০১৬ সালে ক্যাম্পের বাসিন্দারা মাদক ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে ১২ মাদক ব্যবসায়ীকে ধরে ধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ করেছিল। ২০১৭ সালে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের চালানো মাদকবিরোধী অভিযানকালে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে ব্যাপক গোলাগুলি হয়। মাদক ব্যবসায়ীরা ক্যাম্পের ভেতরে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন উর্ধতন কর্মকর্তাসহ অন্তত ৫ জনকে আটকে ফেলেছিল। শেষ পর্যন্ত আমর্ড পুলিশ ও থানা পুলিশ এবং র‌্যাবের সহায়তায় তারা মুক্তি পান।
×