ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনার তারতম্য খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২০ জুলাই ২০১৮

বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনার তারতম্য খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা

শংকর কুমার দে ॥ বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমাকৃত সোনার ওজনের তারতম্য হওয়ার ঘটনাটি খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। প্রায় ২ বছর আগে ৮ জনের স্বাক্ষর করা প্রত্যয়নপত্র দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয় ৩.৩ কেজি ওজনের সোনা। এই ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দা সংস্থা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর প্রায় ৭ মাস আগে সোনার ওজনের তারতম্য হওয়ার বিষয়ে যে গোপনীয় প্রতিবেদন দিয়েছিল তা এতদিন গোপন রাখা হয়েছে কেন, প্রকৃতপক্ষে এর জন্য দায়ী কে, নাকি অন্য কোন উদ্দেশ্য আছে? আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলার জন্য প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তারা অশুভ তৎপরতায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে কী না তা খতিয়ে দেখবে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১৭ জানুয়ারি মাসে ৮ জনের স্বাক্ষরে বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে রাখা হয় ৩.৩ কেজি ওজনের সোনা। প্রত্যয়নপত্রে স্বাক্ষর করা এই ৮ জনের মধ্যে রয়েছেন ডায়মন্ড ওয়ার্ল্ড লিমিটেড এর নিহার বল্লভ, অলক জুয়েলার্স এর স্বত্বাধিকারী নিখিল ম-ল, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের উপ- পরিচালক মোঃ সাইফুর রহমান, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের উপ- পরিচালক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্যাশ বিভাগের যুগ্ম ব্যবস্থাপক মোঃ আমান উল্লাহ, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম ব্যবস্থাপক (বুলিয়ন ভল্ট) মোঃ রমিজউদ্দিন, বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম ব্যবস্থাপক (ভেরিফিকেশন ইউনিট) মোঃ রফিকুর রহমান, বাংলাদেশ ব্যাংকের কারেন্সি অফিসার (মহাব্যবস্থাপক) মোহাম্মদ খুরশীদ ওয়াহাব। এই ৮ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর প্রায় ৭ মাস আগে এ বিষয়ে গোপনীয় প্রতিবেদন দাখিল করেছেন শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মইনূল খান। তার স্বাক্ষর করা গত ২৫/১/২০১৮ তারিখে গোপনীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে জমাকৃত মোট ৩.৩ কেজি ওজনের গোলাকার কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের চাকতি এবং একটি কালো প্রলেপযুক্ত স্বর্ণের রিং এর পরিবর্তে যথাক্রমে অন্য ধাতুর চাকতি ও রিং পাওয়া গিয়েছে। স্বর্ণ হিসেবে জমা হলেও প্রকৃত যাচাই বাছাইয়ে স্বর্ণ পাওয়া যায়নি। এতে সরকারের ১ কোটি ১১ লাখ ৮৭ হাজার ৮৬.৫০ টাকা আর্থিক ক্ষতি হয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা তদন্ত অধিদফতর এই গোপনীয় প্রতিবেদন দাখিল করলেও যখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্টে সোনা জমা করা হয় তখন যেই ৮ জনের প্রত্যয়নপত্র নেয়া হয়েছে তাতে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের দুই জন উপ-পরিচালক কর্মকর্তার স্বাক্ষর রয়েছে। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতর গোপনীয় প্রতিবেদন দাখিল করার আগে তাদের অধিদফতরের যেই দুই উপ-পরিচালক স্বাক্ষর করেছেন তাদের জিজ্ঞাসাবাদ কিংবা মতামত নেয়া হয়নি কেন? শুধু তাই নয়, প্রায় ৭ মাস আগে এই ধরনের একটি গোপনীয় প্রতিবেদন দাখিল করার পর কেন এতদিন গোপন রাখা হলো, কী উদ্দেশে আবার এতদিন পর প্রকাশ্যে আনা হলো তা খুবই রহস্যজনক বলে মনে করছে গোয়েন্দা সংস্থা। শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ সহীদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, যেই ঘটনাটির কথা জানতে চাইছেন, ঘটনাটি আমি দায়িত্ব নেয়ার আগের। তবে সংবাদ মাধ্যমে খবর প্রকাশের পর আমরা প্রকৃত ঘটনাটি কী তার খোঁজখবর নিচ্ছি। অর্থ ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী যা বলার এই বিষয়ে বলে দিয়েছেন। মন্ত্রী মহোদয়ের বলার পর আমার কোন বক্তব্য থাকতে পারে না, এটাই আমার বক্তব্য। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, বিএনপি-জামায়াতপন্থী কর্মকর্তা আছেন যারা প্রশাসনের ভেতরে ঘাপটি মেরে আছেন, তারাই সামনের জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলতে সোনার ওজনের তারতম্যের প্রতিবেদনসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র বাইরে পাচার করে দেয়া হচ্ছে। আর এমন সময়ে সোনার ওজনের তারতম্য হওয়া গোপনীয় প্রতিবেদনটি সরবরাহ করা হয়েছে যখন অর্থ ও পরিকল্পনা মন্ত্রী ড. আবুল মাল আবদুল মুহিত ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান (এনবিআর) ড. মোশারফ হোসেন ভুঁইয়া বিদেশে অবস্থান করছেন। সরকারের এই দুই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বিদেশে থাকার সুযোগ নিয়ে ওই মন্ত্রণালয়াধীন বিষয়ে গোপনীয় প্রতিবেদনসহ গুরুত্বপূর্ণ দলিল দস্তাবেজ বাইরে পাচার করে দেয়ার ঘটনা অশুভ শক্তির গোপন তৎপরতার ইঙ্গিত বহন করছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×