সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ ভোটের মাঠে প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি। নগর উন্নয়ন নিয়ে নানা প্রতিশ্রুতি। কতটুকু বাস্তবায়ন হবে, সেটা বড় বিষয় নয়, এই মুহূর্তে নগর উন্নয়ন নিয়ে বড় দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রার্থী নিজেকে উজাড় করে দিয়ে মানুষের সেবা করার এমন হৃদয়গ্রাহী প্রতিশ্রুতিই মন ভুলিয়ে দিচ্ছে নগরবাসীর। নগরকে সাজানোর নানা পরিকল্পনা, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন, তিলোত্তমা নগরী গড়ার এমন স্বপ্ন কার না ভাল লাগে। সিটি নির্বাচনে বিরামহীন প্রচারে ব্যস্ত সাত মেয়র প্রার্থী। নগরবাসীর নজর কাড়তে এসব প্রার্থী দিচ্ছেন নানা পরিকল্পনা। প্রচার ও প্রতিশ্রুতির দিক থেকে স্বাভাবিকভাবেই এগিয়ে আছেন বড় দুই দল তথা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। আওয়ামী লীগের বদর উদ্দিন আহমদ কামরান ও বিএনপির আরিফুল হক চৌধুরী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছেন, দেখাচ্ছেন জমকালো এক নগরের স্বপ্ন। মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে সিলেটকে পরিকল্পিত নগরী হিসেবে গড়ে তোলার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এগিয়ে রয়েছেন। তিনি উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নে তার সরকারের বাস্তবতাকেও তুলে ধরছেন। তার বক্তব্য হচ্ছে নৌকা জয়ী হলে নগরীর উন্নয়ন হবে। সিসিকের প্রথম দুই মেয়াদের মেয়র ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব পালনের সময় সিলেট নগরীর উন্নয়নে একটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করেছিলেন তিনি। কিন্তু সেই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়নের কাজ ওই সময় শুরু করতে পারেননি কামরান। মাস্টারপ্ল্যানকে ফাইলবন্দী রেখেই সিসিকের তৃতীয় নির্বাচনে হেরে নগর ভবন থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল তাকে। এবার সেই মাস্টারপ্ল্যানকে আরও যুগোপযোগী ও আধুনিক করে নতুনভাবে আলোর মুখ দেখাতে চান কামরান। কামরান বলছেন, পঞ্চাশ বছর সময়কে বিবেচনা করে বিশেষজ্ঞদের মতামত অনুসারে মাস্টারপ্ল্যান করা হবে। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে প্রচারে নগরীর উন্নয়নে মাস্টারপ্ল্যানের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন কামরান। এদিকে, সিসিকের তৃতীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি আরিফুল হক চৌধুরী। আগের মেয়াদে আওয়ামী লীগ নেতা কামরান যে মাস্টারপ্ল্যান করেছিলেন, সেই প্ল্যান বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেননি আরিফ। এক্ষেত্রে আরিফ দাবি করেন, কামরানের করা মাস্টারপ্ল্যান সঠিক ছিল না। সেই প্ল্যানে বিভিন্ন সমস্যা ছিল। মেয়রের দায়িত্ব নেয়ার পর আরিফ প্রায় ২৯ মাস প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া হত্যা মামলায় কারান্তরীণ ছিলেন। বাকি সময়ে আরিফ মাস্টারপ্ল্যান করে কাজ করতে পারেননি। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে একটি মাস্টারপ্ল্যান মন্ত্রণালয়ে পাঠান তিনি। এবার নির্বাচিত হয়ে সেই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে চান আরিফ। নির্বাচনের প্রচারে এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরছেন তিনি।
এ বিষয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, সিলেট নগরীর উন্নয়নে একটি অত্যাধুনিক মাস্টারপ্ল্যান করে মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। কিন্তু সেটা অনুমোদিত হয়ে আসার আগেই আমার দায়িত্বকাল শেষ হয়েছে। কামরান ও আরিফ তাদের মাস্টারপ্ল্যান সম্পর্কে বলছেন, এই মাস্টারপ্ল্যানে সিলেট নগরীর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পানি সঙ্কটের সমাধান, স্বাস্থ্যসেবা, আধুনিক বহুতল পার্কিং ভবন নির্মাণ, সৌন্দর্য্যবর্ধন, সড়ক সম্প্রসারণ, বিনামূল্যে ওয়াইফাই সেবা, বিনোদনের সর্বোত্তম ব্যবস্থা, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ প্রভৃতি নানা বিষয় থাকবে।
ভোটারদের মন জয়ের নানান কৌশল অবলম্বন করছেন মেয়র প্রার্থীরা। ভোটাররাও তাদেরকে আশ্বস্ত করছেন। এভাবেই চলছে প্রতিদিনের প্রচার।
আরিফুল হক চৌধুরী ॥ বৃহস্পতিবার সকালে ২০ দলীয় জোট প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর পক্ষে গণসংযোগকালে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, সিলেটের উন্নয়নকামী লাখো জনতা জেগেছে। প্রচ- রোদ, খরতাপ কিংবা ঝড়ো বৃষ্টি আসলেও আরিফুল হক চৌধুরীর শুভাকাক্সক্ষীরা সিলেটের অলিতে গলিতে, পাড়ায় পাড়ায়-ঘরে ঘরে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে-যাবে। আরিফুল হক চৌধুরীকে বিজয়ের মালা পরানোর আগ পর্যন্ত স্বতঃস্ফূর্তভাবে এই গণসংযোগ চলবে- যে জনস্রোত তৈরি হয়েছে, সেই জনস্রোতের তোড়ে কোন ষড়যন্ত্রই পাত্তা পাবে না। শিবগঞ্জের পাশাপাশি একই দিন নাইওরপুল, মিরাবাজার এবং টিলাগড় এলাকায় বিএনপি, স্বেচ্ছাসেবক দল, যুবদল, ছাত্রদল, শ্রমিকদল এবং ২০ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দসহ সর্বস্তরের জনগণ গণসংযোগে অংশ নেন। শিবগঞ্জ, নাইওরপুল, মিরাবাজার এবং টিলাগড়ে গণসংযোগ শেষে আরিফুল হক চৌধুরী সাড়ে বারোটায় সিলেট আল হামরা শপিং সিটিতেও গণসংযোগ করেন। এসময় ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় অভিষিক্ত করেন। আরিফুল হক চৌধুরীকে ব্যবসায়ীদের ‘আপনজন’ উল্লেখ করে তার সমর্থিতরা বলেন, সিলেট নগরীতে ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ সৃষ্টিতে দূরদৃষ্টিসম্পন্ন অবদান রেখেছেন আরিফুল হক চৌধুরী। তাকে নির্বাচিত করলে তিনি সিলেট ব্যবসায়ের জন্য কাক্সিক্ষত ও সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করবেন বলে তারা প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন। পরে আরিফুল হক চৌধুরী আখালিয়ায় গণসংযোগ করেন।
রণে ভঙ্গ দিলেন বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জমান সেলিম ॥ অব্যাহত চাপের মুখে শেষ পর্যন্ত টিকে থাকতে পারেন নি মহানগর বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জমান সেলিম। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন। এ নিয়ে সংবাদ সম্মেলনও করেন। মাঠে প্রচারেও ছিলেন বদরুজ্জামান সেলিম। হঠাৎ করে নাটকীয়ভাবে তিনি রণে ভঙ্গ দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে সিটি নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরীর বাসায় কেন্দ্রীয় এবং সিলেটের স্থানীয় নেতাদের নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন সেলিম।