ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তীব্র দাবদাহে রংপুর কুড়িগ্রামে দুজনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ২০ জুলাই ২০১৮

তীব্র দাবদাহে রংপুর কুড়িগ্রামে দুজনের মৃত্যু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শ্রাবণে নেই শ্রাবণধারা। প্রচ- গরমে অতিষ্ঠ নগরবাসী। ভরা এই বর্ষায় এসেই বৃহস্পতিবার রাজধানীবাসী পার করল বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম একটি দিন। এদিন ঢাকায় মৌসুমের সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা ৩৭.৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে এ বছর ঢাকায় এর আগে তাপমাত্রা এত ওঠেনি। এর পাশাপাশি শ্রাবণের গরমে দেশবাসীও অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে। এদিন তীব্র দাবদাহে কুড়িগ্রামে এবং রংপুরের বদরগঞ্জে ২ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। প্রকৃতিতে আষাঢ় পেরিয়ে চলছে শ্রাবণ মাস। ঋতুবৈচিত্র্যের ধরন অনুযায়ী অঝোর ধারায় বয়ে চলার কথা বৃষ্টি। কিন্তু দেশের কোথাও চিরাচরিত শ্রাবণের সেই ধারা নেই। বৃহস্পতিবার সারাদিনই ঢাকায় প্রচ- রোদ আর গরমে দাবদাহে যেন একাকার। আবহাওয়া অফিস বলছে দুর্বল মৌসুমি বায়ুর অবস্থানের কারণে দেশের কোথাও বৃষ্টিপাতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। এই অবস্থায় আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। অর্থাৎ তাদের ভাষ্য অনুযায়ী আগামী দুই-তিনদিন প্রকৃতিতে গরম থাকতে পারে। তারা জানান, বৃষ্টিহীন দিনে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকায় গরম অনুভূত হয়েছে তাপমাত্রার চেয়েও বেশি। আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, পরপর সাগরে দুটি লঘুচাপের কারণে আকাশ মেঘহীন থাকছে। এ অবস্থায় সারাদেশের ওপর মৌসুমি বায়ু দুর্বল অবস্থায় চলে এসেছে। এছাড়াও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় এবং আকাশ মেঘমুক্ত থাকার কারণে গরমের পরিমাণ বেশি অনুভূত হচ্ছে। তিনি বলেন, কয়েকদিন আগে সাগরের একটি নি¤œচাপ সৃষ্টি হয়ে তা ভারতের দিকে চলে যায়। এটি শেষ না হতেই আবার লঘুচাপ সৃষ্টি হয়েছে। বারবার লঘুচাপ সৃষ্টির কারণে প্রকৃতিতে অস্থিরতা বাড়ছে। আকাশ মেঘমুক্ত থাকার কারণে গরমের পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। এর মধ্যে মৌসুমি বায়ুও সক্রিয় হতে পারছে না। ফলে বৃষ্টিপাতের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি জানান, এই অবস্থা আজ শুক্রবার অব্যাহত থাকতে পারে। আগামীকাল শনিবার অথবা রবিবার থেকে বৃষ্টিপাতের দেখা মিলতে পারে। আবহাওয়া অফিস জানায়, বৃহস্পতিবার রংপুরের রাজারহাটে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া এদিন বেশিরভাগ বিভাগেরই তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি রেকর্ড করা হয়েছে। আব্দুল মান্নান জানান, একযোগে সব বিভাগে এভাবে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার কারণে গরমে অনুভূতিটা বেশি। তারা জানান, আগের দিন বুধবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সিলেটে ৩৬ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। আর ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকার তাপমাত্রা ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়েছে। তবে শ্রাবণের শুরুতে বৃষ্টি না থাকায় এমন আবহাওয়া অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা জানান, ২০১৪ সালের ২২ এপ্রিল ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪০ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস, যা পাঁচ দশকের সর্বোচ্চ। এবারের বছরে শুরুটা ছিল অন্য বছরের তুলনায় অনেকটায় আলাদা। শীতের শেষে অবিরাম ধরায় নেমেছে বৃষ্টি। পুরো গ্রীষ্মটাও অতিবাহিত হয়েছে বৃষ্টির মধ্যে। হঠাৎ জুনের শুরুতে বৃষ্টি যেন প্রকৃতি থেকে উধাও হয়ে গেছে। ভরা বর্ষায়ও মিলছে না কাক্সিক্ষত বৃষ্টিপাতের দেখা। এরই মধ্যে সাগরে কয়েক দফায় সৃষ্টি হয়েছে লঘুচাপ। কিন্তু তাতে কাক্সিক্ষত বৃষ্টির সাড়া মেলেনি। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে মধ্য প্রদেশ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি মৌসুমি বায়ুর অক্ষের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষ রাজস্থান, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, মধ্য প্রদেশ, বিহার, গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত। এর একটি বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপাসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং তা উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় বিরাজমান রয়েছে। তারা জানায় পরবর্তী ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে উত্তর বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। এ অবস্থায় খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস বলেন, সারাদেশের ওপরে মৌসুমি বায়ু কম সক্রিয় অবস্থায় রয়েছে। মৌসুমি বায়ুর এই দুর্বল অবস্থানের কারণে দেশের বেশিরভাগই এলাকায় বৃষ্টিপাতের দেখ নেই। বিচ্ছিন্নভাবে দু-এক জায়গায় বৃষ্টিপাত হলেও অধিকাংশই বষ্টিপাতের পরিমাণ কমে গেছে। তিনি জানান, এই অবস্থা আরও কয়েকদিন অব্যাহত থাকতে পারে। এই সময়ে গরমের মাত্রার আরও বেড়ে যেতে পারে। তবে আগামী সপ্তাহ থেকে বৃষ্টির দেখা পাওয়া যেতে পারে। এদিতে টানা কয়েকদিন বৃষ্টিহীন থাকায় এবং প্রকৃতিতে গরম বেড়ে যাওয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছে নগরবাসী। গ্রামেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। এর ফলে জ্বরসহ মৌসুমি রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটছে। বৃষ্টি ন থাকায় প্রচ- রোদে বাইরে বের হতে পারছে না কেউ। নগরবাসীরা জানিয়েছে গরমের পরিমাণ এত বেড়ে গেছে যে বৈদ্যুতিক পাখায় গরম নিবারণ হচ্ছে না। ঘেমে ঘেমে যে একাকার। এদিকে প্রচ- গরমের কারণে দিনের বেলায় রাজধানীতে যানবাহনের সংখ্যা কমে যায়। তারা জানান, এখন প্রকৃতিতে চলছে বর্ষাকাল। এমনিতেই এ সময় বাতাসে জলীয় বাতাসের পরিমাণ বেশি থাকে। এই সময়ে বৃষ্টি না থাকলে এমনিতে গরমের অনুভূতিটা বেশি হয়। তারপর যদি তাপমাত্রা ৩৮ এর কাছাকাছি উঠে যায় তাহলে সেই গরমে জনজীবন অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে। যা বৃহস্পতিবার সারাদিনই লক্ষ্য করা গেছে। কুড়িগ্রাম ॥ তীব্র দাবদাহে জনজীবনে স্থবিরতা নেমে এসেছে। তীব্র গরমে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে বৃহস্পতিবার এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নাম সেকেন্দার আলী (৫৮)। তার বাড়ি সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের সন্ন্যাসী গ্রামে। বদরগঞ্জ, রংপুর ॥ প্রচ- দাবদাহে রংপুরের বদরগঞ্জে হিটস্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে আব্দুল কুদ্দুস (৫০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুটার দিকে পৌরশহরের গরুহাটি এলাকায় গরম সহ্য করতে না পেরে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। সে উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের শ্যামপুর বালাচড়া এলাকার বকস্ মিয়ার ছেলে। পেশায় তিনি একজন গরু ব্যবসায়ী। গতকাল রংপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস। ঠাকুরগাঁও ॥ বৃষ্টিহীন ভরা বর্ষা মৌসুমে প্রচ- গরমে দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁওয়ের জনজীবন। টানা ভ্যাপসা গরম আর অনাবৃষ্টির কারণে মানুষের প্রাণ প্রায় ওষ্ঠাগত। গরম বাতাস শরীরে লাগছে আগুনের হাহাকারের মতো। ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। শিশু ছাড়াও গরমে সবচেয়ে বেশি কাবু হয়ে পড়ছেন বৃদ্ধরা। নেতিয়ে পড়ছে গাছ-গুল্ম-লতা। ফলে প্রাণিকুল বিপর্যস্ত অবস্থায় সময় কাটাচ্ছেন। গরমের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে অসহনীয় লোডশেডিং। তীব্র গরম আর অসহনীয় তাপমাত্রার কারণে দিনের বেলায় শহরে লোকজনের চলাচল অন্য সময়ের চেয়ে অনেকটাই কম। কর্মজীবী মানুষ ঘরের বাইরে বের হলেই অতিরিক্ত ঘামে ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন। ক্লান্তি দূর করতে খোলা স্থানে গাছের ছায়ায় বসে সময় কাটাচ্ছেন। নীলফামারী ॥ আষাঢ়ে বৃষ্টির দেখা মিললেও শ্রাবণে দেখা নেই। আবহাওয়া চিত্র বলছে এ যেন চৈত্র বা জ্যৈষ্ঠের ভ্যাপসা গরম। দাবদাহে পুড়ছে জনজীবন। অন্যদিকে বিদ্যুতের লো ভোল্টেজে অতিষ্ঠ মানুষজন। নষ্ট হচ্ছে ফ্রিজ, ফ্যান, এসি। শিল্পকারখানা ধুকছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও গরম নিয়ে সরগরম। এদিকে বৃষ্টির পানি কম থাকায় তিস্তা ব্যারাজ সেচ প্রকল্পর কমান্ড এলাকার কৃষকরা প্রায় ৬০ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ পেয়ে আমন ধানের চারা বুনছে। দাবদাহের একটি উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে মৌসুমি বায়ুর অবস্থান কিছুটা সরতেই বৃষ্টি বন্ধ হয়েছে। সেই সঙ্গে সর্বোচ্চ ও সর্বনি¤œ তাপমাত্রা প্রায় কাছাকাছি চলে আসায় দাবদাহসহ ভ্যাপসা গরম পড়েছে।
×