ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ডোপ টেস্ট করা হবে

সরকারী চাকরি মিলবে না মাদকাসক্তদের

প্রকাশিত: ০৬:০৮, ২০ জুলাই ২০১৮

সরকারী চাকরি মিলবে না মাদকাসক্তদের

আজাদ সুলায়মান ॥ ডোপ টেস্ট ছাড়া কেউ সরকারী চাকরি পাবেন না। পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশের আদলে এখন বাংলাদেশেও আসছে এই বিধান। খুব শীঘ্রই এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হচ্ছে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ জামাল উদ্দিন বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। সরকারী চাকরিতে যোগ দেয়ার আগে সব প্রার্থীরই স্বাস্থ্য পরীক্ষার সময় ডোপ টেস্ট করা হবে। জীবনে যদি কেউ ইয়াবা, গাঁজা ও হেরোইনের মতো মাদকে আসক্ত হয়-সে চাকরি পাবে না। কারণ ডোপ টেস্টে সেটা ধরা পড়বে। এ নির্দেশ খুব শীঘ্রই বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। তার আগে আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণাও দেয়া হবে। জানা গেছে- দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযানের পাশাপাশি মাদকাসক্তদের সতর্ক ও সচেতন করতে বেশকিছু উদ্যোগ নেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অভিভাবকদের টনক নড়ানোর জন্যই স্বরাষ্ট্র্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়। মাদকাসক্তদের সরকারী চাকরিতে অযোগ্য করার জন্যই ডোপ টেস্ট পদ্ধতি চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়। এ সংক্রান্ত একটি সারসংক্ষেপ প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পাঠানো হয়। গত সপ্তাহে ওই সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেন প্রধানমন্ত্রী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক সূত্র জনকণ্ঠকে জানায়, প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদনের পর এখন এটি বাস্তবায়নের পর্যায়ে রয়েছে। অবিলম্বে তা বাস্তবায়নের জন্য স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, উদ্যোগটা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের-কিন্তু বাস্তবায়ন করবে স্বাস্থ্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। বর্তমানে সরকারী চাকরিতে প্রবেশের আগে তো প্রত্যেক চাকরিপ্রার্থীর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করাটা বাধ্যতামূলক। তার সঙ্গে যোগ হবে শুধু মাদকের এই ডোপ টেস্ট। যেখানেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে-সেখানেই থাকবে ডোপ টেস্টেরও ব্যবস্থা। আসলে এটা প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। এখন কিভাবে তা বাস্তবায়ন করা হবে সেটা নিয়ে কাজ চলছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানান, দেশের প্রতিটি সিভিল সার্জনের অফিসেই সরকারী চাকরির মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণের পর চূড়ান্ত বাছাইয়ের জন্য স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হয়। এখন তার সঙ্গে যোগ হবে ডোপ টেস্ট। ডোপ টেস্টের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। ল্যাবে সরাসরি রক্ত ও প্রশ্রাব পরীক্ষায় মাদকের কিছু লক্ষণ ধরা পড়ে। আবার দ্রুতগতিতে মুহূর্তেই সন্দেহজনক মাদকাসক্তদের পরীক্ষা করার জন্য বর্তমানে অত্যাধুনিক মানের বিশেষ কিট রয়েছে, যা শরীরে স্পর্শ করা মাত্রই নেগেটিভ পজেটিভ রেজাল্ট দেবে। তবে আপাতত প্রতিটি জেলা পর্যায়ে রক্ত ও প্রশ্র্র্রাব পরীক্ষার মাধ্যমেই মাদকাসক্ত শনাক্ত করা হবে। ধাপে ধাপে বিশেষ ইকুপমেন্ট ও ক্যামিক্যালস যোগান দেয়া হবে। মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, চলমান অভিযানের পাশাপাশি মাদকাসক্তদের সমাজে কোনঠাসা করার মতো শাস্তি দেয়ার মানসিকতা থেকেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়ন করা হলে শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া উচ্চশিক্ষিত তরুণ সমাজই নয়, অর্ধশিক্ষিত বেকারও আগে থেকেই সতর্ক হয়ে যাবে। সরকারী চাকরি পেতে হলে মাদক ছাড়তে হবে, নইলে বেকার থাকতে হবে। পিয়ন থেকে বিসিএস ক্যাডার-কেউ রেহাই পাবে না এ শাস্তি থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক মাদক কর্মকর্তা বলেন, উচ্চশিক্ষিত বেকার যুবকদের অনেকেই হতাশা থেকে মাদকাসক্ত হয়। মেধার জোরে এদের অনেকেই পরে বিসিএস-এর মতো কঠিন পরীক্ষাতেও টিকে যায় এবং তারা প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে চাকরিতে যোগদান করে। এখন আর সেই সুযোগ থাকছে না। ডোপ টেস্ট ছাড়া যখন কেউ চাকরি পাবে না-তখন তারা নিজের প্রয়োজনেই মাদক থেকে দূরে থাকবে। কারণ একজন মেধাবী যখন সবকটা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে শুধু ডোপ টেস্টের দরুণ বাদ পড়বে তখন সে নিজ পরিবার ও সমাজের কাছে ধরা খেয়ে যাবে। যা হবে ওই পরিবারের জন্য অত্যন্ত বিব্রতকর। এমন কঠিন পরিণতির কথা ভেবেই চাকরিপ্রার্থীরা মাদক থেকে দূরে থাকবে। যারা মাদকাসক্ত হয়ে গেছে তারা সরে আসবে এই পঙ্কিল পথ থেকে। যারা মাঝে মাঝে শখের বসে একটু মদ বিয়ার পান করে তারাও কি এই ডোপ টেস্টে ধরা পড়লে অযোগ্য হবে- জানতে চাইলে মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ইয়াবা, হেরোইন ও গাঁজার মতো মাদক কেউ শুধু একবার খেয়েই ছেড়ে দেয় না। কিংবা মাসে দু’একবার খায় না। এগুলো যারা খায়-নিয়মিতই খায়। প্রত্যেকদিন তাদের খেতে হয়। তারা হার্ডকোর ড্রাগস এডিক্টস বা পেশাদার মাদকাসক্ত বলে চিহ্নিত হবে। ডোপ টেস্টে তা ধরা পড়বেই। তিনি বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই ড্রাগ এডিক্টদের ঘৃণার চোখে দেখা হয়। অনেক দেশেই তাদের সমাজ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে অবাঞ্ছিত করা হয়। সরকারী চাকরিতেও অযোগ্য ঘোষণা করা হয়। এখন এ দেশেও এই ডোপ টেস্ট বাধ্যতামূলক করা হলে অবশ্যই তা মাদক নির্মূলে ইতিবাচক ফল বয়ে আনবে।
×