ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফুটবলের ব্যর্থতায় ব্রাজিলে অর্থনৈতিক মন্দা!

প্রকাশিত: ০৪:৪৫, ২০ জুলাই ২০১৮

ফুটবলের ব্যর্থতায় ব্রাজিলে অর্থনৈতিক মন্দা!

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ফুটবল ইতিহাসের অন্যতম সেরা সাফল্যের দেশ ব্রাজিল। রেকর্ড সর্বোচ্চ পাঁচবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন তারা। ১৯৯৪ থেকে ২০০২Ñটানা তিনটি বিশ্বকাপের ফাইনালে খেলে দুইবার বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয় পেলের দেশ। কিন্তু এর পর থেকে প্রতিটি আসরেই সম্ভাবনা জাগিয়ে ব্যর্থ হয়েছে সেলেসাওরা। ২০০৬, ২০১০, ২০১৪ সালের পর এবার ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপেও সফল হতে পারেননি নেইমার, মার্সেলোরা। ফুটবলের টানা এই ব্যর্থতার ছোঁয়া লেগেছে ব্রাজিলের অর্থনীতিতেও। ২০১৪ সালে বিশ্বকাপ ও ২০১৬ সালে অলিম্পিক আয়োজন করেও নাকি দেশটি খুব বেশি লাভবান হতে পারেনি। তবে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে ফুটবল দল সফল হতে না পারায়। সম্প্রতি দেশটির এক সংস্থা থেকে করা জরিপে বলা হয়েছে, ফুটবলে প্রত্যাশিত সাফল্য না পাওয়ায় অন্যান্য সেক্টরে এর বাজে প্রভাব পড়েছে। সবমিলিয়ে অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছে! এর আগে দীর্ঘ মন্দায় ব্রাজিলের অর্থনীতি যখন তলানিতে তখন দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যকে জাগিয়ে তোলার সম্ভাবনা নিয়ে শুরু হয়েছিল রিও অলিম্পিক। কিন্তু বিশ্লেষকরা তখন বলেন, বড় অঙ্কের ব্যয়ে করা এ অলিম্পিক প্রকৃত অর্থে ব্রাজিলের অর্থনীতিতে কিছুই দিতে পারেনি। তাদের মতে, অর্থনৈতিক মন্দা, দুর্নীতি, শ্লথ প্রবৃদ্ধি এবং জিকা ভাইরাসের মতো মারাত্মক রোগে আক্রান্ত ব্রাজিলের অর্থনীতি এখন তলানিতে এসে ঠেকেছে। এ অবস্থায় অলিম্পিক দেশটির অর্থনীতিকে জাগিয়ে তুলতে খুব বেশি কিছু দিতে পারবে না। তবে অবকাঠামো বিনিয়োগ ও বিপুলসংখ্যক পর্যটকের আগমনে দেশটির ব্যবসা-বাণিজ্যে সাময়িক বেচাকেনা বেড়েছে। আর্থিকসেবা প্রতিষ্ঠান ইউবিএস তাদের এক ক্লায়েন্ট নোটে জানায়, সামার অলিম্পিক ব্রাজিলের অর্থনৈতিক উত্তরণে সহায়ক হবে না। তবে দেশে যে ভয়াবহ মন্দা চলছে তা থেকে বছরের দ্বিতীয়ভাবে উত্তরণ ঘটতে পারে। তাদের মতে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অলিম্পিকের ইভেন্টগুলো আয়োজক শহরের জন্য লোকসানের কারণ হবে। এমনকি দীর্ঘ মেয়াদে সুবিধারও খুব একটা সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। প্রতিষ্ঠানটির মতে, একটি দেশ যখন রাজস্ব সংকট ও তীব্র মন্দায় ভুগছে তখন ১০ বিলিয়ন ডলারেরও ওপরে অর্থ খরচ করা সহজ বিষয় নয়। এর পাশাপাশি সরকারি ও বেসরকারি খাতে ভয়াবহ দুর্নীতির অভিযোগ তো আছেই। অর্থনৈতিক বিশ্লেষক রোন্যাল্ডো পাঁচ এবং মিখায়েল বলিগার বলেছিলেন, দেশটি যদি মনে করে বছরের দ্বিতীয় ভাগে তারা ৮০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়াবে, সেটা অলিম্পিকের কারণে হবে না। বরং স্টক ও বন্ডে ব্যবসায়ীদের জন্য লোভনীয় বিনিয়োগের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে হতে পারে। বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান গোল্ডম্যান স্যাকসের বিশ্লেষক আলবার্তো রেমস বলেন, ব্রাজিলের ১.৮ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতিকে টেনে তুলতে ওয়ার্ল্ড কাপ এবং অলিম্পিকের বিনিয়োগ ক্ষুদ্রই বলা যায়। যা অর্থনীতিকে এগিয়ে নিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, দেশটির অর্থনীতি ইতিমধ্যে গুরুতর অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে। ওই সময় ব্রাজিলের ক্ষমতা থেকে প্রেসিডেন্ট দিলমা রৌসেফের অপসারণের পর অন্তর্র্বতী প্রেসিডেন্ট মাইকেল তেমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, সরকারী ব্যয় কমাবেন এবং ঋণ নিয়ন্ত্রণে আনবেন। তার প্রতিশ্রুতির ফলে ব্রাজিলের স্টক মার্কেট চাঙ্গা হয়েছে, বন্ড এবং মুদ্রাবাজারও কিছুটা উঠে দাঁড়িয়েছে, যা দেশটির মন্দাক্রান্ত অর্থনীতির জন্য আশাব্যঞ্জক হবে। কিন্তু এই ধারাও ধরে রাখা যায়নি। নেইমাররা বিশ্বজয় করতে না পারার কুপ্রভাব আবারও দেশটির অর্থনীতিতে লেগেছে।
×