ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়াতে চান মাশরাফি

প্রকাশিত: ০৪:৪৩, ২০ জুলাই ২০১৮

ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়াতে চান মাশরাফি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ এখন ওয়ানডে সিরিজের অপেক্ষায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে যে হতাশা মিলেছে, ওয়ানডে সিরিজে তা দূর করতে চান বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা। রবিবার প্রথম ওয়ানডে দিয়ে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ শুরু হবে। এরপর ২৬ জুলাই দ্বিতীয় ও ২৮ জুলাই তৃতীয় এবং শেষ ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। ওয়ানডে সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে চায় বাংলাদেশ। ক্রিকেটবিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে এমন আশার কথাই জানিয়েছেন বাংলাদেশ ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। তিনি বলেছেন, ‘ওয়ানডে সিরিজে ঘুরে দাঁড়াতে চাই।’ মাশরাফি জানিয়েছেন, ‘প্রস্তুতি ছাড়া কেউ মাঠে খেলতে যায় না। আমি মনে করি, তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করেছে। তবে তাদের ঠিকঠাক নক হয়নি মাত্র। এমনভাবে দল হারলে সকলের মানসিক অবস্থা খুব দুর্বল থাকে এটা সত্য। আমার প্রাথমিক কাজ হচ্ছে দলের সকলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করা। কিভাবে ওটা কাটিয়ে ওঠা যায় তা নিয়ে আমি চিন্তা করছি। কারণ আমরা ওয়ানডে সিরিজে তাদের বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়াতে চাই। আমি মনে করি না যে, আমাদের ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে ভালো ব্যাট করার সামর্থ্য নেই। কিন্তু আমাদের সেটা করে দেখাতে হবে। মানসিকভাবে আমাদের শক্ত হতে হবে। এছাড়া আমাদের সবকিছু ইতিবাচকভাবে ভাবতে হবে।’ টেস্ট সিরিজের দুই ম্যাচেই হার হয়েছে। হোয়াইটওয়াশ হয়েছে বাংলাদেশ। টেস্ট সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে দাঁড়াতেই পারেনি বাংলাদেশ। লজ্জা মিলেছে। একটি ম্যাচও তিনদিনে নেয়া যায়নি। এখন ওয়ানডে সিরিজে জিতে টেস্ট সিরিজের হতাশা দূর করতে হবে। মাশরাফি বলেছেন সকলকে মানসিকভাবে চাঙ্গা করে তুলতে চান। কিন্তু তিনি নিজেই তো চাঙ্গা থাকার কথা নয়। কারণ, তা স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। এজন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ যাওয়াই তা অনিশ্চিত ছিল। মাশরাফির জন্য কাজটা কঠিন নয়? জবাব দিলেন নিজেই, ‘এটা সবসময় কঠিন। তবে আমি পুরো বিষয়টি নিয়ে খুব ইতিবাচক ছিলাম। এটা সত্য যে আমার স্ত্রী অসুস্থ। তবে একই সঙ্গে বলছি আমি দলের সঙ্গে যোগ দেয়ার ব্যাপারে খুব ইতিবাচক ছিলাম। শুধু ব্যাপার হলো আমি দলের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিজ আসতে পারিনি। কারণ, তার যে চিকিৎসা চলছিল তা ১৫ তারিখের দিকে শেষ হওয়ার কথা ছিল। অসুস্থ স্ত্রীকে রেখে দেশের বাইরে খেলতে আসা অবশ্যই সহজ ছিল না। তবে এর আগেও আমি পরিবারের সদস্যদের অসুস্থতা সত্ত্বেও বাইরে খেলতে এসেছি। আমি এই ব্যাপারগুলোর সঙ্গে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এখানে আসার পর আমার জন্য ভালো ব্যাপার হলো আমি প্রস্তুতি ম্যাচটা খেলতে পারব। কারণ, কিছুদিন আগে আমি শেষ প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ খেলেছি।’ ২০০৯ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এসেই ইনজুরিতে পড়েছিলেন মাশরাফি। এরপর অনেকে ভেবেছিল ইনজুরি কাটিয়ে সেরাটা আর দিতে পারবেন না মাশরাফি। এরপর মাশরাফি নিজেকে অন্য উচ্চতাতেই নিয়ে গেছেন। জানিয়েছেন, ‘এটা সত্য অনেকে এমনটা ভেবেছিল। তবে এটা নিয়ে মনের মধ্যে কোন খচখচানি নেই। ওই দৃশ্যপটটা নিয়ে আমি খুব অখুশি নই। আবার ভীতও নয়। আসল ব্যাপার হল্-ো আমি বাস্তবতাটা মেনে নিয়েছি। সেটা যত ব্যথারই হোক, কোন ব্যাপার না। আমি ওটা ভুলে সামনের দিকে তাকিয়েছি। আমি ২০০৯ সালে অনেক প্রত্যাশা নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে এসেছিলাম। কিন্তু ইনজুরিতে পড়ে তার কিছুই পূরণ হয়নি। এসব স্মৃতি মনে করা গুরুত্বহীন। আর হ্যাঁ, আপনি মনে মনে যেমনটা ভাবছেন তেমন কিছু অবশ্যই এর মধ্যে নেই।’ গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজেও একই অবস্থা হয়েছিল। টেস্ট হেরে টালমাটাল দল ওয়ানডেতেও নাজেহাল হয়েছে। ক্রিকেটারদের আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি পড়ে যায়। যার প্রভাবও পড়ে। এবার কী হবে? মাশরাফি বলেন, ‘এখানকার যে উইকেট তা দেখে বোঝা যায় রান করতে পারলে ভালো কিছু আশা করা যায়। আর তাই আমাদের দলের টেস্ট হতাশা নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। আমাদের অবশ্যই ওয়ানডে সিরিজে বড় প্রত্যাশা আছে। যদিও আমাদের সমর্থকরা সম্প্রতি পারফর্মের কারণে বেশি কিছু প্রত্যাশা করতে পারছে না। নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে ক্রিকেট খেলার কোন মানে হয় না। এমনকি আমরা হারলেও আমাদের সঠিক পথটা খুঁজে বের করতে হবে।’ হাতে আর এক বছরও নেই। আগামী বছর ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে হবে ওয়ানডে বিশ্বকাপ। ৩০ মে শুরু হবে। ১০ মাস বাকি আছে। বিশ্বকাপের প্রস্তুতি এখনই শুরু করতে হবে। সেদিকে বাংলাদেশ দলের নজরও আছে। সেটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজে শুরুও করতে চায় বাংলাদেশ দল। মাশরাফি বলেছেন, ‘দেখুন আমরা বিশ্বকাপের জন্য আর মাত্র ১২ মাস হাতে সময় পাচ্ছি। সুতরাং আপনাকে সামনে এগোতে হলে এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। তার জন্য আমাদের বিশেষ কিছু জায়গা পূরণ করতে হবে। আর সামনে এগোনোর জন্য সব ধরনের চিন্তা মাথায় রাখতে হবে। দলের নতুন কোচ এসেছেন। প্রথমত তার প্রভাব দলে ব্যাপকভাবে কাজে দেবে। কারণ, তিনি খেলোয়াড়দের কাছ থেকে দেখা শুরু করবেন। আমার মনে হয়, আমাদের দলটা মোটামুটি দাঁড়ানোই আছে। ওদিকে ফিল্ডিং কোচ দলের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন। এই একই দল নিয়ে এখনও আমরা অন্তত সামনের পাঁচ-ছয় মাস খেলব। নতুন খেলোয়াড়দের নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখতে হলে এখনই তাদের দলের সঙ্গে আনতে হবে। কারণ, তাদের দলের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার এবং প্রমাণ করার একটা সময় তো দিতে হবে।’ মাশরাফি সবসময়ই বলেন, দলে কিছু জায়গা ফাঁকা আছে। কেন বলেন? ব্যাখ্যা করতে গিয়ে জানান, ‘যেমন ধরুন তামিমের সঙ্গী হিসেবে আমরা এখনো ভাল একজন সঙ্গী খুঁজছি। আমরা তিনে একজন নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান খুঁজছি। আমাদের সাত-আটের দিকে নির্ভরযোগ্য কাউকে লাগবে। আমি আটে একজন অলরাউন্ডারকে বেশি সমর্থন করব। সেখানে অবশ্যই প্রতিপক্ষের শক্তি বিবেচনা করে পেসার, বাঁহাতি স্পিনার বা অফ স্পিনার হাতে থাকতে হবে।’ মুস্তাফিজুর রহমান ইনজুরি থেকে ফিরেছেন। তাকে কিভাবে কাজে লাগাবেন মাশরাফি? জানালেন, ‘দেখুন সে ইনজুরি থেকে ফিরেছে। এখন তাকে শুরুর মতো বল করতে বললে হবে না। তবে সে নিয়মিত তার সমস্যা কাটিয়ে উঠছে। যেটা আমাদের সামনের দিনগুলোতে সহায়তা করবে বলে আমার মনে হয়। তার যে দিকটা আমার ভালো লাগে তা হলোÑ সে এগুলো নিয়ে খুব একটা চিন্তা করে না।’ দলের সিনিয়র খেলোয়াড়রাও টেস্ট সিরিজে নিজেদের মেলে ধরতে পারেননি। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে। মাশরাফির কী কোন দুশ্চিন্তা আছে? মাশরাফি জানালেন, একদমই চিন্তা নেই, ‘আমার মনে হয় না সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহকে নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ আছে। তাদের খারাপ সময় যেতে পারে। তবে তারা ম্যাচ জয়ী খেলোয়াড় হিসেবে নিজেদের প্রমাণ করেছে। আমাদের তাদের জন্য এমন সুযোগ করে দিতে হবে সেখান থেকে তারা তাদের সেরাটা দিতে পারে।’
×