ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পোগবা বড় ম্যাচের ফুটবলার ॥ মরিনহো

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ২০ জুলাই ২০১৮

পোগবা বড় ম্যাচের ফুটবলার ॥ মরিনহো

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন পল পোগবা। সেবার ফ্রান্স খুব বেশিদূর এগোতে না পারলেও টুর্নামেন্টের সেরা উদীয়মান ফুটবলার হয়েছিলেন ফরাসী যুবা। তখনকার ২১ বছর বয়সী পোগবা সদ্য শেষ হওয়া রাশিয়া বিশ্বকাপেও আলো ছড়িয়েছেন। ফ্রান্সের দ্বিতীয় বিশ্বকাপ জয়ে তিনিও রেখেছেন অসামান্য অবদান। নজরকাড়া পারফর্মেন্সের পর আসন্ন দলবদলের বাজারে আবারও পোগবার দিকে নজর পড়েছে বিশ্বের সেরা দলগুলোর। জোর গুঞ্জন, ২৫ বছর বয়সী এই তারকা ফের ফিরতে পারেন ইতালিয়ান ক্লাব জুভেন্টাসে। তুরিনের ক্লাবটিতে তিনি ২০১২ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ছিলেন। এরপর নাম লিখিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে। তবে এবারের বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়েই রেড ডেভিলস শিবিরে না থাকার ইঙ্গিত দেন পোগবা। এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেছিলেন, আমি আর ইংল্যান্ডে ফিরছি না। বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পর সম্ভাবনাটা আরও জোরালো হয়েছে। সুপারস্টার ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে যোগ দিয়েছেন জুভেন্টাসে। শোনা যাচ্ছে, ইতালিয়ান চ্যাম্পিয়নদের হয়ে সি আর সেভেনের সঙ্গে জুটি বাঁধতে পারেন পোগবা। এমন অবস্থায় গুরুত্বপূর্ণ এই ফুটবলারকে ম্যানইউতে ধরে রাখতে দারুণ কৌশল অবলম্বন করেছেন দলটির কোচ জোশে মরিনহো। স্পেশাল ওয়ান উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন পোগবার। সাক্ষাতকারে মরিনহো বলেছেন, পোগবা কেন ভাল ফুটবলার সেটা সে নিজে জানে। শুধু তাই নয়, বড় টুর্নামেন্টে নিজেকে সে প্রমাণ করতে পারে। এবারের বিশ্বকাপের ফাইনালেও নিজের নামের প্রতি সুবিচার করেন পোগবা। ফাইনালে ক্রোয়েশিয়াকে ৪-২ গোলে উড়িয়ে দেয়া ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা ছাড়াও গোল করেন। সবচেয়ে বড় কথা, ফ্রান্সের প্রতিটি ম্যাচেই জ্বলে ওঠেন তিনি। ফাইনালে দ্বিতীয়ার্ধে পোগবার পারফরমেন্স নিয়ে মরিনহো বলেন, দ্বিতীয়ার্ধে পোগবার পারফর্মেন্সে ছিল অনবদ্য। একটি বিজয়ী দলের জন্য তার পারফর্মেন্সই যথেষ্ট। ২০১৬ সালের আগস্টে ৮৯ মিলিয়ন ডলারে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে যোগ দেন। তবে ২০১৭-১৮ মৌসুমে তিনি দল থেকে ছিটকে যান। মরিনহো আরও বলেন, পোগবা বড় ম্যাচের খেলোয়াড়। অনেক ফুটবলার আছেন যারা সময়মতো জ্বলে উঠতে পারে না। কিন্তু পোগবা দেখিয়েছে নিজেকে সংযত রেখে কিভাবে আলো ছড়াতে হয়। আশা করি এই অবস্থা ধরে রাখতে পারবে সে। এমন প্রশংসা করার পরও পোগবাকে ম্যানইউ ধরে রাখতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সংশয় আছে। কেননা কোচ মরিনহোর ট্যাকটিসের সঙ্গে নাকি খাপ খাওয়াতে পারছেন না ফরাসী তারকা। যে কারণে বিশ্বকাপের আগে সমালোচিত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিশ্বকাপ জয়ে ফ্রান্সের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্মেন্স করার পর সব সমালোচনা উল্টো এখন ম্যানইউ কোচের দিকে। এখন পোগবা যদি জুভেন্টাসে পাড়ি জমান, তাহলে ম্যানইউতে যে তিনি বেকায়দায় পড়বেন সেটা নিশ্চিত। ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগে গত মৌসুমের দ্বিতীয় পর্বে মরিনহোর সঙ্গে পোগবার সম্পর্ক বেশ খারাপ হয়ে যায়। তখন বলা হয়েছিল, সম্পর্ক খারাপ হওয়ার জন্যই তাকে নিয়মিত একাদশে সুযোগ দেননি পর্তুগীজ লৌহমানব। ফ্রান্সের বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম নায়ক যা নিয়ে নিজের বিরক্তিও গোপন করেননি। পোগবার এই মুহূর্তে ক্লাব ছাড়তে চাওয়ার এটাই প্রধান কারণ বলে দাবি করা হচ্ছে। রাশিয়ায় বিশ্বকাপ হাতে নিয়েও পোগবা বলেছিলেন, ‘আমি কিন্তু কাপটা নিয়ে ইংল্যান্ডে যাচ্ছি না।’ তার এই বক্তব্যের নানা রকম মানে করা হয়েছিল। অনেকে বলেছিলেন, ইংল্যান্ডের ক্লাবে ফিরবেন না বলেই পোগবা এ রকম কথা বলছেন। পোগবাকে ম্যানইউ নতুন করে সই করায় ২০১৬ সালের আগস্ট মাসে। তখন ফ্রান্সের এই ফুটবলার চুক্তিমূল্য হিসেবে পেয়েছিলেন প্রায় ৮০০ কোটি টাকা। সে সময় যা একটা রেকর্ড ছিল। পরে অবশ্য তার চেয়েও বেশি মূল্যে নেইমার দ্য সিলভা সান্তোস জুনিয়রকে প্যারিস সেইন্ট জার্মেইন কিনে সেই রেকর্ড ভেঙ্গে দেয়। তবে ইতালীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবি, এবার পোগবাকে ফেরাতেও বিপুল খরচ করতে পারে জুভেন্টাস। ফ্রান্স জাতীয় দলে পোগবার সতীর্থ ব্লাইজ মাতুইদি নাকি ম্যানইউ’র এক কর্তাকে বলে দেন, ‘এখন আর পলের কাছে এসে আপনাদের লাভ নেই। পরে কখনও ওর কাছে আসার কথা ভাববেন।’ ইংলিশ সংবাদ মাধ্যম দাবি করছে, পোগবাকে ফেরাতে তার পুরনো ক্লাব জুভেন্টাস অন্তত ১৩৩ মিলিয়ন পাউন্ড পর্যন্ত দিতে রাজি। শুধু তাই নয়, রোনাল্ডোর সঙ্গে জুটি বাঁধিয়ে বিশ্বসেরা ক্লাবে পরিণত হওয়ার এই সুযোগ হেলায় হারাতে চায় না জুভরা। পোগবাও তার পুরনো সতীর্থ পাওলো দিবালা, আন্দ্রে বারজাগলি ও জিওর্জিও চিয়েল্লিনির সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছেন। তার ওপর জুভেন্টাস কোচ ম্যাসিমিলিয়ানো অ্যালেগ্রি অত্যন্ত পছন্দ করেন পোগবাকে। তিনিও চান তার প্রিয় ফুটবলারকে আবার দলে পেতে। জুভেন্টাস কোচ এ প্রসঙ্গে বলেচেন, পোগবা একজন অসাধারণ প্রতিভা। এ ধরনের প্রতিভা সচরাচর দেখা যায় না। তাই ও চলে যাওয়ার সময় আমার খুবই খারাপ লেগেছিল; কিন্তু আমি বিশেষ কিছুই করতে পারিনি। আমার ক্লাবের লোকেরা যখন বলল, কত খরচ করে ম্যানইউ ওকে নিচ্ছে, তখনই বুঝে গেলাম, নিষেধ করেও কোন লাভ নেই।
×