ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দুর্ভোগের অবসান কাম্য

প্রকাশিত: ০৪:২৭, ২০ জুলাই ২০১৮

দুর্ভোগের অবসান কাম্য

হজ এজেন্সিগুলোর প্রতারণা, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম এবং দুর্নীতির কারণে প্রতি বছরই হজযাত্রীদের পড়তে হয় চরম ভোগান্তির মুখে। এবারও সেই বিপত্তি থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হয়নি। চলতি বছর ১৪৪টি হজ এজেন্সির অনিয়মের কারণে সাড়ে ২৬ হাজার মতান্তরে ১৫ হাজার হজযাত্রীর পবিত্র হজ পালন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খবরে বলা হয়েছে সাড়ে ১৩ হাজার জনকে বদলি কোটায় হজে পাঠানোর চেষ্টা করছে ৮৮টি এজেন্সি। তবে সৌদি সরকারের কড়াকড়ি আরোপের কারণে এবার বদলি কোটা বাড়াতে পারছে না ধর্ম মন্ত্রণালয়। গত বছরও বদলি কোটায় হজে গিয়ে ফিরে আসেননি ১৮৩ হজযাত্রী। এ জন্য ৪৩টি হজ এজেন্সিকে সৌদি সরকার কালো তালিকাভুক্ত করে নিষিদ্ধ করেছিল। গত সোমবার সুনির্দিষ্ট অভিযোগে ৫৬টি হজ এজেন্সিকে ডেকে ধর্ম মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করা হয়। অভিযোগ উঠেছে, চিহ্নিত এসব এজেন্সি হজযাত্রী রেজিস্ট্রেশনের সময় ভুয়া নাম এন্ট্রি করে রেখেছিল। এখন তারা এন্ট্রি করা নামের হজযাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েছে কিংবা মারা গেছে জানিয়ে বা নিকটাত্মীয় দেখিয়ে অন্য হজযাত্রীদের পাঠানোর চেষ্টা করছে। বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ বলছে, হজযাত্রীদের টিকেট কাটার জন্য সংশ্লিষ্ট এজেন্সিগুলোকে বেশ কয়েকবার জরুরী নোটিস দেয়া হয়। কিন্তু তারা এখনও টিকেট নিশ্চিত বা পে-অর্ডার করেনি। অথচ এ বছর সৌদি সরকার বিমানের আর কোন স্লট বাড়াচ্ছে না। ফলে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রতিবারই হজের আগে উড়োজাহাজ সঙ্কট, হজ এজেন্সির অনিয়মসহ নানাবিধ কারণে হজযাত্রায় বিঘœ ঘটতে পারে বলে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় সংবাদ মাধ্যমে। বিষয়টি অনাকাক্সিক্ষত ও উদ্বেগের। হজ কার্যক্রম পরিচালনা করা সরকারের প্রতি বছরের নিয়মিত কাজ। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, এ সঙ্কট সমাধানে আগে থেকে কেন ব্যবস্থা নেয়া হলো না? বাংলাদেশ থেকে দেড় লক্ষাধিক মুসলমান হজ পালন করতে যান। সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় এ বিশাল কর্মযজ্ঞ পরিচালিত হয়ে আসছে। সাধারণভাবে আমাদের দেশের হজযাত্রীরা বয়স্ক। হজ এজেন্সিগুলোর প্রতারণার শিকার হলে তাদের জন্য বিড়ম্বনাটা আরও বেশি হয়। গত ১৪ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে হজ ফ্লাইট। এ বছর পবিত্র হজে যাচ্ছেন এক লাখ ২৭ হাজার ১৯৮ জন ধর্মপ্রাণ মুসলমান। কাজেই এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকারের নির্লিপ্ত থাকার সুযোগ নেই। বস্তুত, হজযাত্রা নিয়ে দেশে প্রতি বছরই কোন না কোন বিপত্তি ঘটে। আগামীতে হজ ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন আনা প্রয়োজন। সরকারকে আগেভাগেই সেই প্রস্তুতি নিতে হবে। হজযাত্রা নিয়ে কোন ধরনের অনিয়ম বরদাশত করলে চলবে না। আমরা মনে করি, হজযাত্রীদের যে কোন ধরনের অনাকাক্সিক্ষত দুর্ভোগ এড়ানোর জন্য সরকার সজগ থাকবে। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা ধর্ম মন্ত্রণালয়কে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি পরিস্থিতি সামাল দিতে হজ এজেন্সিগুলোর প্রতি নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রয়োজনে আইনী ব্যবস্থা নিয়ে হজযাত্রীদের যাত্রা নিশ্চিত করতে হবে। সর্বোপরি এই সঙ্কট সমাধানে ধর্ম মন্ত্রণালয়সহ সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরী।
×