ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা মাতালেন ব্যান্ড বনি এম

প্রকাশিত: ০৭:০০, ১৯ জুলাই ২০১৮

ঢাকা মাতালেন ব্যান্ড বনি এম

গত শতাব্দীর সত্তরের দশকে আলোড়ন তোলা ডিসকো গানের দল ‘বনি এম’। পাশ্চাত্য ধারার সঙ্গে ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের সুর মিশিয়ে জনপ্রিয় অনেক গান সৃষ্টি করে ‘বনি এম’। তাদের গাওয়া অনেক গান এখনও অনেক তরুণ মনে আনন্দের ঝড় তোলে। ‘ড্যাডিকুল’, ‘বাই দ্য রিভার্স অবব্যা বিলন’ ও ‘ব্রাউন গার্লইন দ্যরিং’– এর মতো গানগুলো দিয়ে বিশ্বের গান প্রেমীদের মাঝে আলোড়ন তোলে বনি এম। নিজেদের ঝুলিতে ভরে নেয় যুক্তরাষ্ট্রের একাডেমি অব রেকর্ডিং আর্টস এ্যান্ড সায়েন্স কর্তৃক প্রবর্তিত বার্ষিক পুরস্কার গ্র্যামি এ্যাওয়ার্ড। বনি এম এখন পর্যন্ত আটটি স্টুডিও অ্যালবাম প্রকাশ করেছে। ‘টেক দ্য হিট অবমি’ নামের প্রথম এ্যালবামটি প্রকাশ পায় ১৯৭৬ সালে। প্রথম এ্যালবামে ‘ডেডি কুল’, ‘সানি’, টেক দ্য হিট ফরমি’, ‘বেবি ডু ইউ ওয়ানা বাম্প’, ‘নোও মেন নোক্রাই’ ও ‘ফিভার’ গানগুলো রয়েছে। এ্যালবামের প্রথম হিট সিঙ্গেল ‘ডেডিকুল’ যুক্তরাজ্যের টপ চার্টে স্থান করে নেয়। ডিসকোগানের এ এ্যালবামটি ইউরোপের নানা দেশের টপ চার্টের সেরা অবস্থানটি অর্জন করে। ১৯৭৮ সালে প্রকাশ পায় এ্যালবাম ‘নাইট ফ্লাইট টু ভেনাস’। এই এ্যালবাম তাদের এনে দেয় ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় সাফল্য। ‘রিভার অবব্যাবিলন’, ‘রাসপুটিন’, ‘ব্রাউন গার্ল ইনদ্য রাইন’ গানগুলো অসম্ভব জনপ্রিয়তা পায়। যুক্তরাষ্ট্রে ও তারা ব্যাপক সাড়া পায়। পরের এ্যালবাম ‘ও শেনস অব ফ্যান্টাসি ’প্রকাশ পায় ১৯৭৯ সালে। ১৯৮০ সালে আসে তাঁদের প্রথম সংকলন এ্যালবাম ‘দ্য ম্যাজিক অব বনি এম- টোয়েন্টি গোল্ডেন হিটস’। গত ১৩ জুলাই শুক্রবার বাংলাদেশে এসে মাতিয়ে গেল বনি এম’। ক্রেইন্সের আয়োজনে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের হল অব ফেম মিলনায়তনে তৈরি মঞ্চে প্রায় নব্বই মিনিট ধরে গাইলেন, মুগ্ধ করলেন জনপ্রিয় কিছু গানে। সঙ্গীত প্রেমীদের ‘নস্টালজিক’ করতে দ্বিতীয় বারের মতো ঢাকার মঞ্চ মাতালেন এই ব্যান্ড দলটি। ঘড়ির কাঁটা তখন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা। গোটা মিলনায়তন কানায় কানায় পূর্ণ। উচ্চ মূলের টিকিট হলে ও ফাঁকা ছিল না কোন আসন। দেশ-বিদেশের অসংখ্য শ্রোতার আগমনে কনসার্ট টি ছিল যেমন প্রাণবন্ত, তেমনই ছিল আনন্দমুখর। নৃত্যের তালে তালে যখন মুখে মুখে ফেরা গানগুলোর পরিবেশনা শুরু হলো, তখন আসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছিল শ্রোতারা। শিল্পীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে তুমুল করতালি আর নাচে মেতে উঠেছিল সবাই। ঘড়ির কাঁটায় তখন রাত পৌনে ৮ টায় মিলনাতনজুড়ে করতালির মধ্য দিয়ে মঞ্চে আসেন সবার আকাক্সিক্ষত লিজ মিশেল ও বনি এমের বাকি তিন সদস্য। শুরুতেই শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে মিশেল পরিবেশন করেন ‘সানি’ শিরোনামের গানটি। পাশ্চাত্য ধারার এ গানের সঙ্গে চার শিল্পীর নৃত্য পরিবেশনা বাড়িয়ে দিয়েছিল কনসার্টের জৌলুস। গানটি শেষ হতেই লিজ মিশেল গেয়ে শোনালেন বিখ্যাত গান ‘ডডিকুল’। গানের সঙ্গে মোহনীয় নৃত্যেও দর্শক-শ্রোতার করতালিতে উচ্ছ্বাস মুখর হয়ে ওঠে মিলনায়তন। দুটি গান পরিবেশন শেষে লিজ মিশেল বলে উঠলেন, ‘নাচ আরও বাড়াতে হবে। তুলতে হবে সব হাতগুলো। গাইতে হবে আমাদের সঙ্গে। শিল্পীর কথায় শ্রোতাদের উচ্ছ্বাস জেন আরও বেড়ে গেল। সবাই হাত তুলে গাইল পৃথিবীখ্যাত গান ‘হুর রে হুর রে ইটসএ হলি হলিডে’। গানের মাঝ খানে লিজ স্টেজ থেকে নেমে দর্শকদের সারিতে এসে হাত মেলালেন। শ্রোতাদের সঙ্গে নাচলেন। তারপর গাইলেন ‘ব্রাউন গার্লইন দ্যরেইন’। এ গানের সঙ্গে নেচে-গেয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে শ্রোতারা। পুরো আয়োজনের শেষের দিকে এসে লিজ মিচেল দর্শকদের চমকে দিলেন আরেকবার। মঞ্চে ডেকে নিলেন বাংলাদেশের কণ্ঠশিল্পী আলিফ আলাউদ্দীনকে! এরপর একই মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দু’জনে গেয়ে শোনান বনি এম-এর দুটো গান । একটি ‘রিভার্স অব বেবিলন’ অন্যটি ‘ক্যালেন্ডারসং -জানুয়ারি ফেব্রুয়ারি মার্চ’। শেষ দিকে লিজ আধো বাংলায় বললেন, ‘তোমাদের ভালোবাসি’। জানালেন ১১ জুলাই ছিল তাঁর জন্মদিন। এ কথা শুনে পুরো মিলনায়তন তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে ‘হ্যাপি বার্থ ডে’ গানটি গাইলেন। তার পর বিশ্বের সব মানুষের শান্তি কামনায় গাইলেন বিটলসের বিখ্যাত গান‘ লেটই টবি’। গানে গানে প্রার্থনার সুরে জানালেন বিশ্ব শান্তি ও মানবতার বাণী। নব্বয়ের দশকে বাংলাদেশে ব্যান্ড সঙ্গীতের যে প্রবাহ শুরু হয়েছিল খুব অল্প সময়ের ব্যাবধানে সেই প্রবাহ এখন এক রকম থেমে গিয়েছে, কি ‘এল আর বি’ কি ‘মাইলস’ বা ‘সোলস’ কিংবা ‘নগর বাউল’ এসব নাম এবং তাদের গাওয়া গান আজ বলতে গেলে কেবলই গৌরবের অতীত। বর্তমান বলতে এই সব ব্যান্ড দলের আর কিছুই নেই। যে কারণে ‘বনি এম’ বিশ্বখ্যাত ব্যান্ড দল হয়তো নতুন প্রজন্মকে অনুপ্রেণা যোগাবে এবং শেখাবে কিভাবে গাইতে হয় বা রচনা করতে হয় বিশ্ব মানবতার গান।
×