ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

যশোরে প্রেমঘটিত কারণে ছাত্রকে হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৯ জুলাই ২০১৮

যশোরে প্রেমঘটিত কারণে ছাত্রকে হত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ সদর উপজেলার লেবুতলা ইউনিয়নের শর্শুনাদহা গ্রামের কলেজছাত্র নয়ন মিয়াকে প্রেমের কারণে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। হত্যার পর তাকে বিদ্যুতের তারের পাশে ফেলে ‘বিদ্যুায়িত’ হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে হত্যাকারীরা প্রচার করে। পুলিশ ঘটনাটি ভিন্ন খাতে নেয়ার জন্য থানায় অপমৃত্যু মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করে। বুধবার প্রেসক্লাব যশোরে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনেরা। নিহত নয়নের পিতা ফসিয়ারের পক্ষে সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নয়নের বড় ভাই হুমায়ুন কবীর। সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন নয়নের চাচা ফারুক হোসেন, ভাই ইসরাফিল, মামা জালাল উদ্দিন, ভগ্নিপতি বাবলু রহমান, বোন গোলাপি বেগম, ঝুমুর খাতুন, প্রতিবেশী জহুরুল ইসলাম প্রমুখ। এ সময় লিখিত বক্তব্যে হুমায়ুন বলেন, বিশ^কাপ ফুটবল খেলা দেখে দোকান থেকে রাত সাড়ে ১১টার দিকে নয়ন বাড়ি আসে। এসেই রাতের খাবার খেতে বসে। এ সময় তার মোবাইল ফোনে একটি কল আসে। নয়ন সে সময় বলে, খাওয়ার পর আসছি। এরপর টিউবওয়েলে হাত ধুয়ে প্লেট সেখানে রেখে মোবাইলটি হাতে নিয়ে রাত সাড়ে ১২টার দিকে বের হয় নয়ন। তখন তার মা নুরজাহান আরা কোথায় যাচ্ছিস এমন প্রশ্নের উত্তরে নয়ন বলে এখনই আসছি। কিছু সময়ের মধ্যে নয়ন ফিরে না আসায় তার পিতা ফসিয়ার খুঁজতে বের হয়। তাকে না পেয়ে অন্য দিনের মতো বাড়িতে এসে নয়ন ঘুমিয়ে পড়ে ভেবে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। তিনি বলেন, সকাল ৬টার দিকে নয়নকে ঘরের মধ্যে না পেয়ে তার মা পিতা ফসিয়ার রহমানকে জানান। ফসিয়ার রহমান নয়নের মোবাইলে ফোন দিলে তার ঘরের মধ্যে রিং বেজে ওঠে। তিনি ঘরের মধ্যে গিয়ে মোবাইল ফোনটি নিয়ে দেখেন নয়নের মোবাইল ফোনের ডায়াল এবং রিসিভ কল কিছুই নেই। এ সময় সন্দেহ হলে বিভিন্ন জায়গায় নয়নকে খুঁজতে থাকে। তাকে না পেয়ে লেবুতলার বাজারের দিকে নসিমন নিয়ে বের হয়। এর মধ্যে প্রতিবেশীরা সকাল ৮টার দিকে ফসিয়ারের বাড়ির পেছনে ইসরাফিলের মুরগি ফার্মের পাশ থেকে নয়নের মৃতদেহ উদ্ধার করে বাড়িতে নিয়ে আসে। এ সময় কিছু লোক নয়ন আত্মহত্যা করেছে বলে প্রচার করে। স্থানীয়রা এবং নয়নের স্বজনরা নয়নের শরীরে দুই পায়ের মাঝে নিতম্বের পাশে, দুই হাতে এবং পিঠে পোড়া দাগ দেখতে পায়। এছাড়া নিতম্বের পেছনে আঘাত ও পোড়ার চিহ্ন, পুরুষাঙ্গসহ তার ওপরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন দেখতে পাওয়া যায়। স্থানীয়দের সংবাদের ভিত্তিতে লেবুতলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলিমুজ্জামান মিলনের নির্দেশে ইউনিয়নের চৌকিদার লুৎফর রহমান নিহত নয়নের বাড়িতে উপস্থিত হয়। লুৎফর নয়নের মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করার জন্য চেয়ারম্যানের নির্দেশের কথা জানালে নয়নের স্বজনরা ময়নাতদন্তের জন্য গত সোমবার সকালে লাশ যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসে। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে সাদা কাগজে নয়নের পিতা ফসিয়ারের স্বাক্ষর করে নেয়া হয়। তারপর চেয়ারম্যানের নির্দেশে লাশ বাড়িতে নিয়ে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়। তিনি আরও বলেন, নয়নকে একই এলাকার আশির উদ্দিনের মেয়ে ১০ম শ্রেণীর ছাত্রী ভালবাসত। বিষয়টি তার পরিবারের লোকজন জানতে পারলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে মুরগির ফার্মের পাশে বিদ্যুতের তারের পাশে রেখে গেছে। নয়ন হত্যার আগে একই এলাকার আসাদ ও মিলন নামে দুই যুবক নয়ন এক সপ্তাহও বাঁচতে পারবে না বলে তার মাকে হুমকি দিয়ে যায়। এছাড়া হত্যার পরদিন মামলা না করার জন্য ওই স্কুল ছাত্রীর চাচা মাহাবুবুর রহমান হুমকি দিয়ে বলেছেন, বেশি বাড়াবাড়ি করলে তার অপর দুই ভাইয়ের নয়নের মতো অবস্থা হবে। সংবাদ সম্মেলনে ডাক্তারদের বক্তব্য দিয়ে নয়নের বোন গোলাপি বেগম জানান, বিদ্যুত স্পষ্ট হলে শরীরে কোন রক্ত থাকার কথা নয়, কিন্তু ময়নাতদন্তের সময় নয়নের শরীর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। এছাড়া শরীরে বিভিন্ন জায়গায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। নয়নের মোবাইল ফোনের ডায়াল কল ও রিসিভ কল ডিলিট করা অবস্থায় ঘরে পাওয়া গেছে। নয়ন বের হওয়ার সময় তার হাতে মোবাইল ফোন ছিল। কিন্তু তার মোবাইল ফোনটি ঘরের মধ্যে ফেলে দিয়েছে হত্যাকারীরা। সংবাদ সম্মেলনে নয়নের কাছে দেয়া স্কুলছাত্রীর একশ’র বেশি প্রেমপত্র হাজির করে। তারা নয়নের হত্যাকারীদের অবিলম্বে আটক করে দৃষ্টান্ত শাস্তির দাবি জানিয়েছে।
×