ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রূপগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভোগান্তির শেষ নেই

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ১৯ জুলাই ২০১৮

রূপগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভোগান্তির শেষ নেই

নিজস্ব সংবাদদাতা, রূপগঞ্জ, ১৮ জুলাই ॥ নানা অনিয়ম আর দুর্নীতির কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীরা নিত্য ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতালের ডাক্তাররা সঠিক সময়ে হাসপাতালে আসেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। ডাক্তারদের পরিবর্তে জরুরী বিভাগে রোগী দেখেন সুইপার ও বাবুর্চি। আর টাকা হলেই মেলে সার্টিফিকেট। ডাক্তারদের অবহেলায় রোগী মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে বিভিন্ন সময়ে। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের বিনামূল্যের ওষুধ কিনতে হয় টাকার বিনিময়ে। রোগীদের খাবার দেয়া হয় নির্দিষ্ট সময়ের পরে। বিড়াল আর তেলাপোকার উৎপাত সর্বত্র। সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সকাল ১০টায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোন ডাক্তারের দেখা মিলেনি। ওই সময় হাসপাতালের বহির্বিভাগে রোগীদের লম্বা লাইন দেখা যায়। সরকারী নিয়মানুসারে ডাক্তারদের অফিস সময় সকাল ৯টা থেকে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত থাকলেও কার্যত তারা আসেন সকাল ১০টায়, চলে যান ১২টায়। ফলে প্রতিনিয়ত রোগীদের ভোগান্তি বেড়েই চলছে। ডাক্তারদের কক্ষে প্রবেশ করে দেখা যায়, কক্ষের চেয়ার-টেবিল ফ্যানের বাতাস খাচ্ছে। সরেজমিনে দেখা যায়, বেলা ১১টার দিকে মেডিসিন কনসালটেন্ট ডাঃ একেএম সোহেবকে কক্ষে প্রবেশ করতে দেখা যায়। হাসপাতালে দেরি করে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি বাধ্য নই। আমার যখন ইচ্ছা আমি অফিসে আসব। শুধু সোহেবই নয়, হাসপাতালে কর্মরত অন্যান্য ডাক্তারদের একই অবস্থা। সূত্র জানায়, গত ৩ বছর ধরে ডাক্তার সোহেব রূপগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রয়েছেন। তিনি বেসরকারী হাসপাতালে রোগী দেখেন বলেই বেশিরভাগ সময় অনুপস্থিত থাকেন। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে তার কাছে যেসব রোগী আসেন কমিশনের বিনিময়ে তাদের তিনি বেসরকারী হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন। এ সব কর্মকা- করে তিনি অল্প সময়ে কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রাশেদুল হাসান মাহমুদকেও বেলা ১১টার সময় তার কক্ষে পাওয়া যায়নি। খোঁজ নিতে গেলে এক কর্মকর্তা বলেন, স্যার নারায়ণগঞ্জ মিটিংয়ে আছেন। খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, আইএমসি ও পুষ্টি কর্নার কনসালটেন্ট শিশু বিশেষজ্ঞ মাহমুদুর রহমান বেলা পৌনে ১১টায় কক্ষে প্রবেশ করেন। দেরিতে আসার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আমি দোকানে বসে চা খাচ্ছিলাম। অথচ তার কক্ষের সামনে রোগীদের উপচে পড়া ভিড়। গাইনি বিশেষজ্ঞ নাছরিন সুলতানা ও সাদিয়া জেনিফ সকাল সাড়ে ৯টায় কক্ষে প্রবেশ করেন। দেরি হওয়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে তারা এ ব্যাপারে কোন সদুত্তর দেননি। আরেক গাইনি কনসালটেন্ট সালমা আক্তার ওয়ালিদা সিংহভাগ সময়ই অনুপস্থিত থাকেন। হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালে দায়িত্বরত গাইনি চিকিৎসক সালমা আক্তার ওয়ালিদা দীর্ঘ ৭ বছর যাবত একই হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়ে আসছেন। স্বাস্থ্য সহাকারী শিরিনা আক্তার সকাল সাড়ে ১০টায় তার কক্ষে প্রবেশ করেন। কিন্তু রোগী তার কক্ষের পাশে রোগীদের বিশাল ভিড় রয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সকল দফতরে প্রতিদিনই দেখা যায় এমন চিত্র। জানা যায়, বর্তমানে হাসপাতালে কোন মহিলা রোগী দেখার জন্য মহিলা কনসালটেন্ট নেই। এ ছাড়া হাসপাতালে কোন চক্ষু ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স যেন এখন নিজেই অসুস্থ। কথা হয় তারাবো পৌরসভার নোয়াপাড়া এলাকা থেকে আসা রেহানউদ্দিন মিয়ার সঙ্গে। তিনি জানান, সকাল থেকে তিনি যক্ষ্মা রোগের ওষুধের জন্য অপেক্ষা করছেন। কিন্তু কর্মকর্তা কর্মচারীর কোন দেখা নেই। রেহানউদ্দিনসহ আরো ১০/১৫ +রোগী হাসপাতালে অপেক্ষমাণ ছিল। রোগী তানিয়া আক্তার জানান, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে রোগীদের প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। বিনামূল্যে সেবা পাওয়ার আশায় হতদরিদ্র রোগীরা সরকারী হাসপাতালে আসে। রূপসী এলাকা থেকে আসা বাদশা জানান, কয়েকঘণ্টা অপেক্ষা করেও মেডিক্যাল কনসালটেন্ট তিনি ডাঃ একেএম সোহেবের দেখা পায়নি। তার কাছে গেলে মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে রোগীদের বেসরকারী হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন।
×