ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ঝিনাই নদী থেকে বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে সেতু

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ১৯ জুলাই ২০১৮

ঝিনাই নদী থেকে বালু উত্তোলন ॥ হুমকিতে সেতু

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল, ১৮ জুলাই ॥ ঘাটাইলের হাটকয়েড়া এলাকায় ঝিনাই নদী থেকে ৫টি অবৈধ বাংলা ড্রেজার দিয়ে প্রায় ছয় মাস ধরে চলছে বালু উত্তোলন। উপজেলা ভূমি অফিসের লিখিত কোন অনুমতি না নিয়ে স্থানীয় কতিপয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা এ বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন ক্ষতিগ্রস্তরা। অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বসতভিটা, ফসলি জমি ও একটি গাইড বাঁধ নদীগর্ভে চলে গেছে। উপজেলা প্রশাসনের নিকট আবেদন করেও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না এলাকাবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার আনেহলা ইউনিয়নের হাটকয়েড়া এলাকার ঝিনাই নদী থেকে ভূমি অফিসের মৌখিক অনুমতি নিয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান শাজাহান তালুকদার ও ইউপি সদস্য আব্দুল মান্নান ৫টি অবৈধ বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলন করে যাচ্ছেন। সপ্তাহখানেক ধরে ৩টি ড্রেজার বন্ধ থাকলেও রাতদিন চলছে ২টি বাংলা ড্রেজার। বাকি ৩টি অন্য স্থানে স্থাপন করার কাজ চলছে। যেখানে বাংলা ড্রেজার বসানো হয়েছে তার ঠিক ৫০ মিটার দূরেই নতুন একটি ব্রিজের কাজ চলছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে ওই ব্রিজটি। এছাড়াও অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি বসতভিটা, ফসলি জমি ও একটি গাইড বাঁধ নদীগর্ভে চলে গেছে। হুমকির মুখে পড়েছে শতশত একর ফসলি জমি ও বসতভিটা। এ বিষয়ে স্থানীয় মহির উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলেও এর কোন প্রতিকার হয়নি। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া খাতুন পরিদর্শনে এসে অবৈধ বাংলা ড্রেজার উচ্ছেদ না করে উল্টো বালু উত্তোলনের জন্য বাংলা ড্রেজারের স্থান নির্র্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। এদিকে স্থানীয় বায়েজিদ ও সোমেলা বেগম সংবাদ কর্মীদের কাছে তথ্য দেয়ায় তাদের মাদক মামলা দিয়ে ফাঁসানো ও গ্রামছাড়া করার ক্রমাগত হুমকি দিয়ে যাচ্ছে বালু উত্তোলনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ওই প্রভাবশালী মহল। স্থানীয় বায়েজিদ তালুকদার জানান, অবৈধ বাংলা ড্রেজার বসানোর পর উপজেলা প্রশাসন বরাবর লিখিত অভিযোগ দিলে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া খাতুন এসে পরিদর্শন করে কোন পদক্ষেপ নেননি। তারপর আরও বেশি ড্রেজার বসানো হয়। আবারও লিখিত অভিযোগ করি আমরা। তিনি আবারও এসে প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন করার অনুমতি দিয়ে যান। যেখানে সারাদেশে বাংলা ড্রেজার নিষিদ্ধ, সেখানে উনি কিভাবে ড্রেজার চালানোর অনুমতি দেন। আমি এ সত্য বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরায় বিভিন্নভাবে আমাকে হুমকি দেয়া হচ্ছে। মহির উদ্দিন জানান, কর্মকর্তা টাকা খেয়েই এই অনুমতি দিয়েছেন। না হলে আমাদের কথা শুনেন না কেন? কেনই বা বালু তোলার অনুমতি দেবেন? সোমেলা বেগম বলেন, আমার বসতভিটা অর্ধেক নদীতে চলে গেছে। চেয়ারম্যান মেম্বারদের জানাইছি, তারা কোন বিহিত করে নাই। বাড়ির সামনের রাস্তাটাও নদীতে চলে গেছে। চেয়ারম্যান কইছে এইডা কোন রাস্তা না। এহন আমি পোলাপান নিয়া যামু কই? অভিযোগের বিষয়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া খাতুন বলেন, এর আগে অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমার অফিসের লোক পাঠিয়ে ড্রেজার মেশিন বন্ধ করা হয়েছিল। এখন কোন বাংলা ড্রেজার চলছে কিনা আমার জানা নেই। এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্য নয়। আমি ওই এলাকায় যাইনি। এ বিষয়ে ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার দিলরুবা আহমেদ বলেন, ঝিনাই নদীতে বাংলা ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের বিষয়টি আমার জানা নেই। সহকারী কমিশনার (ভূমি) আম্বিয়া খাতুনের ওই এলাকা পরিদর্শন ও মৌখিক অনুমতির বিষয়টি তিনি অস্বীকার করেন।
×