ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

দৌলতপুরে পল্লী বিদ্যুতের বিলে নয়ছয়

প্রকাশিত: ০৬:২৩, ১৯ জুলাই ২০১৮

দৌলতপুরে পল্লী বিদ্যুতের বিলে নয়ছয়

নিজস্ব সংবাদদাতা, দৌলতপুর, কুষ্টিয়া, ১৮ জুলাই ॥ দৌলতপুর উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের বিলে ব্যাপক নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। গেল জুন মাসে বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ ঝোপ বুঝে কোপ মারার মতো গ্রাহকদের বিল দ্বিগুণ এবং ক্ষেত্র বিশেষে দ্বিগুণেরও বেশি বাড়িয়ে দিয়েছেন। ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বিদ্যুত কর্তৃপক্ষের এমন স্বেচ্ছাচারী কর্মকা-ে ক্ষুব্ধ হয়ে পড়েছেন। উপজেলা সদরের বাসিন্দা সেলিম রেজা অভিযোগ করেন, গত মে মাসে তার বাড়ির বিদ্যুত বিল ছিল ৮১০ টাকা। কিন্তু জুন মাসে বেড়ে হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ, বিল এসে ঠেকেছে ১ হাজার ৩৩৭ টাকায়। অন্য মাসগুলোতে তার বিদ্যুত বিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যেই থাকে। দৌলতপুর কলেজপাড়ার নুরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি অভিযোগ করেন, তার বাড়ির মে মাসে বিল ছিল ১ হাজার ২৪৩ টাকা। পরের জুন মাসে সেই বিল দ্বিগুণেরও বেশি হয়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৮৮৭ টাকায়। দৌলতপুর মাস্টারপাড়ার মাসুদ রানার অভিযোগ, শুধু বিল বেশিই নয় তার একটি মিটারের বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয় গত ১ মে। কিন্তু সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরেও জুন মাসে দুটি বিল আসে। তিনি বলেন, সবচেয়ে অবাক ব্যাপার হলো বিচ্ছিন্ন করা ওই মিটারটিতে বিদ্যুত সংযোগ না থাকা সত্ত্বেও প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ইউনিট করে বিল ওঠে। মানিকদিয়াড় গ্রামের বিপ্লব হোসেন জানান, গত মে মাসে তার বাড়ির বিল ছিল সাড়ে ৩০০ টাকা, জুন মাসে বিল এসেছে সাড়ে ৭০০ টাকা। সাদিপুর গ্রামের মামুন আহমেদ অভিযোগ করেন, মে মাসে তার বিল ছিল ৪০০ টাকার নিচে, জুন মাসে বিল এসেছে ৮০০ টাকার ওপরে। মহিষকুন্ডি সীমান্ত এলাকার গিয়াস উদ্দিনের অভিযোগ, তার বাড়ির বিদ্যুত বিল প্রতিমাসে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকার মধ্যে থাকে। কিন্তু জুন মাসে এসেছে ১ হাজার ৭০০ টাকার বিল। এদিকে জুন মাসে হঠাৎ বিলের পরিমাণ এভাবে লাফিয়ে ওঠার কারণ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে পল্লী বিদ্যুতের বড় ধরনের দুই নম্বরির চিত্র। নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, আগের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে জুন ক্লোজিংয়ের এই মাসে প্রত্যেক গ্রাহকের বিলই কমবেশি বাড়ানো হয়েছে। পরের মাস থেকে আবার স্বাভাবিক হয়ে যাবে। বাণিজ্যিকে জুনের বিল অপেক্ষাকৃত কম বাড়িয়ে অনেকটা সহণীয় পর্যায়ে রাখা হলেও আবাসিকের বেলায় কৌশল অবলম্বন করা হয়েছে। যার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে অস্বাভাবিক হারে। ক্ষুব্ধ গ্রাহকদের অভিযোগ, পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন অজুহাতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে আসছেন। নতুন সংযোগ নেয়ার সময় মিটারের মূল্য ধরে নেয়া হলেও প্রতিমাসে সেই মিটার ভাড়াও আদায় করা হয়। যা এখন সবারই গা সওয়া হয়ে গেছে। এর বাইরে মাঝে মধ্যেই ভৌতিক বিলের (মনগড়া) কবলে পড়তে হয়। কিন্তু তথাকথিত ঘাটতি মেটাতে পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ এত বড় দুর্নীতির আশ্রয় নেয়ায় মাশুল গুনতে হচ্ছে পাবলিককে। যা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। কী অদ্ভুত সিস্টেম পল্লী বিদ্যুতের। তারা গ্রাহকদের জিম্মি করে অতিরিক্ত বিল আদায় করলেও কারোরই কিছু বলার সুযোগ নেই। তাদের এসব স্বেচ্ছাচারিতা মুখ বুজে সহ্য করতে হচ্ছে। এদিকে জুনে বেশি বিলের স্বপক্ষে পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ খোঁড়া যুক্তি সামনে এনেছেন। পল্লী বিদ্যুতের দৌলতপুর জোনাল অফিসের ডিজিএম আশরাফ উদ্দিন বলেন, ‘আগের ক্ষতি বা ঘাটতি পূরণের জন্য জুন ক্লোজিংয়ের এই মাসে গ্রাহকদের বিল বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে যে অভিযোগ আনা হচ্ছে তা সঠিক নয়।’ তিনি দাবি করেন, বিল বেশির কারণ হচ্ছে জুন মাসটি ছিল রোজার মাস। এই মাসে গ্রাহকরা বেশি বিদ্যুত ব্যবহার করায় তাদের বিলও বেশি এসেছে। বিচ্ছিন্নভাবে কয়েকটি বিল বেশি হতে পারে সেটি স্বাভাবিক। তবে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা জানান, রোজার মাস হলেও তাদের বিদ্যুত ব্যবহারে তেমন কোন হেরফের হয়নি। আগের মাসগুলোর মতোই এই মাসেও তারা স্বাভাবিক বিদ্যুত ব্যবহার করেছেন। পবিত্র রমজান মাসকে পুঁজি করে পল্লী বিদ্যুত কর্তৃপক্ষ মনগড়াভাবে তাদের বিল বাড়িয়েছেন।
×