ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাধারণ নির্বাচনের হুমকি

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ১৯ জুলাই ২০১৮

সাধারণ নির্বাচনের হুমকি

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে হুমকি দিয়েছেন তার প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট পরিকল্পনা মেনে নেয়া না হলে চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমেই সাধারণ নির্বাচন দিতে পারেন। ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ( টোরি) দলের একটি অংশ মে’র কাস্টম ব্রেক্সিট পরিকল্পনার সঙ্গে একমত নন বলে জানা গেছে। দ্য টাইমস। চেকার্স পরিকল্পনা নামে পরিচিত পরিকল্পনাটি মে ৬ জুলাই প্রকাশ করেন। এর পর থেকেই একের পর এক মে’র মন্ত্রিসভার সদস্যরা পদত্যাগ করেন। পরিকল্পনাটি প্রকাশের পর থেকেই মূলত রাজনৈতিক সঙ্কট শুরু হয়। পদত্যাগকারীদের মধ্যে ব্রেক্সিটমন্ত্রী ডেভিড ডেভিস এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন রয়েছেন। এসব পদত্যাগ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মে’র নেতৃত্ব চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে। ইউরোপীয় কমিশনের প্রধান জ্যঁ ক্লদ জাঙ্কার এক পর্যায় বলেন, ‘ব্রিটিশ মন্ত্রিসভার ঐক্য এখন খুবই প্রয়োজন।’ টোরি দলের একজন সদস্য বুধবার বলেন, মে’র সাধারণ নির্বাচনের হুমকি কেবল দলের বিভক্তি বাড়াবে। এদিকে দলে শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত মঙ্গলবার কাস্টম পরিকল্পনার ওপর ভোটগ্রহণের আগে সরকারকে আস্থা ভোটের মুখোমুখি দাঁড় করানোর হুমকি দিয়েছেন। বিদ্রোহী সদস্য অ্যানা সব্্ির বিবিসি রেডিওকে বলেন, ‘সব মিলিয়ে মনে হচ্ছে সাধারণ নির্বাচনের সম্ভবনা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, ‘একদিকে প্রধানমন্ত্রী সাধারণ নির্বাচনের হুঁমকি দিচ্ছেন অন্যদিকে দলের ভেতরেই আস্থা ভোটের দাবি জানান হচ্ছে। এগুলো নির্বোধের মতো কাজ। আস্থা ভোট নেয়া হলে আমি প্রধানমন্ত্রীর পক্ষেই ভোট দেব। সমস্য হচ্ছে, আমার মনে হয় না তিনি বেশিদিন এ দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ’ কনজারভেটিভ দলের সদস্যরা আশঙ্কা করছেন সাধারণ নির্বাচন হলে বিরোধী লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন প্রধানমন্ত্রী হবেন। চলতি বছর স্থানীয় সরকার পর্যায়ে নির্বাচনে লেবার পার্টি ভাল ফল করেছে। করবিন বলেছেন, ২০১৬ সালে ব্রিটেনের জনগন ব্রেক্সিটের পক্ষে যে রায় দিয়েছে তার প্রতি সম্মান দেখান হবে। তিনি নিজ দলের ভেতর বিভক্তি তৈরির জন্য মে’র সমালোচনা করেন। ব্রিটেনের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক টালমাটাল সময় এখন পার হচ্ছে। গত চার বছরে দেশটিতে তিন নির্বাচন হয়েছে। ২০১৪ সালে স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা প্রশ্নে গণভোট, ১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ অথবা থাকা প্রশ্নে গণভোট এবং গত বছর আগাম সাধারণ নির্বাচন। ব্রেক্সিট ইস্যুতে সর্বশেষ রাজনৈতিক সঙ্কট শেষ পর্যন্ত আরেকটি সাধারণ নির্বাচনের পথ সুগম করতে পারে। তার মন্ত্রিসভার সদস্যরা একটি পরিচ্ছন্ন ব্রেক্সিট চাইছেন। এ বিষয়ে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে মে পার্লামেন্টে বক্তৃতা দিয়েছেনও। কিন্তু ব্রেক্সিট পরিকল্পনা নিয়ে মন্ত্রীরা তার সঙ্গে একমত হতে পারছেন না। মে’র নতুন পরিকল্পনাটি কাজে আসবে না বলে নিজ দলের এমপি ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তারা তাকে সতর্ক করে দিয়ে দিয়েছেন। মে মনে করেন ইউরোপীয় একক বাজার ও কাস্টোম ইউনিয়ন ছাড়ার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছেন তার ভিত্তিতে পরিকল্পনাটি করা হয়েছে। এর ফলে ক্ষমতা ব্রাসেলস থেকে যুক্তরাজ্যে ফেরত আসবে। পার্লামেন্টে মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ইইউপন্থীদের বিপক্ষে মে অল্পের জন্য নিজের অবস্থান ধরে রাখতে সক্ষম হন। মে’র পরিকল্পনাটি ৩০৭-৩০১ ভোটে পাস হয়। ২০১৬ সালের গণভোটে যুক্তরাজ্যের জনগণ ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পক্ষে ভোট দেয়। এই বিচ্ছেদকেই বলা হচ্ছে ব্রেক্সিট, যা ২০১৯ সালের মার্চের মধ্যে শেষ করতে দুই পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি চলছে।
×