ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সব নাগরিকের তথ্য নিয়ে স্থায়ী ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেজিস্ট্র্রি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ জুলাই ২০১৮

সব নাগরিকের তথ্য নিয়ে স্থায়ী ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেজিস্ট্র্রি হচ্ছে

নিখিল মানখিন ॥ দেশের সব নাগরিকের তথ্য সংবলিত একটি স্থায়ী ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেজিস্ট্রি তৈরির কাজ চালাচ্ছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। এজন্য বাংলাদেশের সব গ্রামে পরিচালিত একটি স্বাস্থ্য শুমারির মাধ্যমে সব পরিবারের নাগরিকের প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজ শেষ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিফতর। এই কর্মসূচী সম্পন্ন হলে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার গাইডলাইনের পুরো বাস্তবায়ন সম্পন্ন হবে। ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার কেন্দ্র। ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে চিকিৎসকদের পরামর্শসহ কোথায়, কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় তার পুরো গাইডলাইন তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এখন চলছে ডাটা এন্ট্রির কাজ। এজন্য ব্যবহার করা হচ্ছে ইনটেলিজেন্ট ক্যারেক্টার রিকগনিশন বা আইসিআর নামে একটি মেশিন। এই মেশিনটি হাতের লেখাও পড়তে পারে। ডাটা এন্ট্রির পর তৈরি করা হবে একটি কম্পিউটার তথ্য ভান্ডার। এই তথ্য ভান্ডারে প্রতিটি নাগরিকের পরিচিতি নম্বর থাকবে এবং প্রত্যেকের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও থাকবে। প্রতি মাসে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে ঘুরে মোবাইল ডিভাইসের মাধ্যমে বা কমিউনিটি ক্লিনিকে বসে সংশ্লিষ্ট স্টাফরা তথ্য হালনাগাদ করার বিষয়টি নিশ্চিত করবে। এই তথ্য ভান্ডার তৈরি হলে দেশের জনগণের হালনাগাদ জনমিতি, জন্ম-মৃত্যুর হার ও রোগ-ব্যাধিসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য তথ্য যে কোন সময় কম্পিউটারের বোতাম টিপেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। যে কোন সার্ভে বা হাসপাতালে রোগী চিকিৎসার সময় রোগীর নাম-ঠিকানা লিখতে হবে না। পরিচিতি নম্বর থেকেই সব তথ্য বের করা যাবে। এর মাধ্যমে প্রত্যেক নাগরিক পাবে একটি লাইফ টাইম হেলথ রেকর্ড। বাংলাদেশ ৮ কোটি ভোটারের বিশ্বের বৃহত্তর ইলেক্ট্রনিক ভোটার তালিকা করে যেমন গর্বের অধিকারী, ১৫ কোটি মানুষের ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেজিস্ট্রি হলে তার চেয়েও অনেক বেশি গর্বের অধিকারী। এই ইলেক্ট্রনিক তথ্য ভান্ডার স্থানীয়, আঞ্চলিক ও জাতীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও অন্যান্য পরিকল্পনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে। সরকার বর্তমানে জাতীয় পপুলেশন রেজিস্টার তৈরির কাজ হাতে নিয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য জনমিতি সেই রেজিস্টারের সঙ্গে সংযুক্ত থাকবে এবং একে অপরের পরিপূরক হিসেবে কাজ করবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাঃ আবুল কালাম আজাদ জানান, দেশের সব নাগরিকের তথ্যসংবলিত একটি স্থায়ী ‘ইলেক্ট্রনিক হেলথ রেজিস্ট্রি ’ তৈরির কাজ শুরু করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এভাবে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রমের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্যের সার্বিক চিত্র রেকর্ড করা হবে। আর সে অনুযায়ী দেয়া হবে স্বাস্থ্যসেবা। ধীরে ধীরে দেশের সব সরকারী হাসপাতালে অটোমেশন প্রযুক্তি প্রবর্তন করা হবে। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রণালয়ের সব কর্মকর্তা ও অধস্তন অফিসমূহের উর্ধতন কর্মকর্তাদের দৈনন্দিন অফিসের বিভিন্ন সভা, সমাবেশ ও অন্য কর্মসূচীতে ব্যস্ত থাকতে হয়। এমআইএস এ জন্য একটি অনলাইন সফটওয়্যার তৈরি করেছে। এই সফটওয়্যারটির সুবিধা হলো কর্মকর্তা নিজে বা তার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও অন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্টারনেটের মাধ্যমে এই কর্মসূচী সংযোজন, বিযোজন বা সম্পাদনা করতে পারেন। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকলে এই কর্মসূচী দেখতে পারেন এবং প্রিন্ট করে দৈনিক কর্মসূচীর ফ্রেমে লাগিয়ে দিতে পারেন। মাঝে মাঝে পূর্ববর্তী সময়ের কর্মসূচীগুলো বিশ্লেষণ করে পরিসংখ্যান রিপোর্ট প্রস্তুত করতে পারেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় জানায়, ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার গাইডলাইনের পুরো বাস্তবায়ন সম্পন্ন করে চলেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সম্প্রতি শেষ করা হয়েছে ডিজিটাল স্বাস্থ্যসেবার নেটওয়ার্ক কেন্দ্রীয়ভাবে দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ করার কেন্দ্র। ঘরে বসেই স্বাস্থ্যসেবা সম্পর্কে চিকিৎসকদের পরামর্শসহ কোথায়, কী ধরনের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যায় তার পুরো গাইডলাইন তৈরি সম্পন্ন হয়েছে। দেয়া হয়েছে সেবাদানকারীদের নাম ও মোবাইল নম্বরসমূহ। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ওয়েবসাইটে () প্রবেশ করে ‘ই-হেলথ’ এ ক্লিক করলেই বেরিয়ে আসবে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ক্ষেত্র। তাৎক্ষণিক ডাক্তারি পরামর্শ গ্রহণ করে উপকৃত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। এতে সময় ও আর্থিক খরচ বাঁচানোর পাশাপাশি দুর্ভোগ থেকেও রেহাই পাচ্ছে সেবাগ্রহীতারা। সূত্রটি আরও জানায়, ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলে ‘ই-হেলথ’ অপশনে ক্লিক করলে চলে আসবে স্বাস্থ্যসেবার বিভিন্ন ক্ষেত্র। সেগুলো হলো- মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য সেবা, মোবাইল ফোনে স্বাস্থ্য সেবার নম্বরসমূহ, টেলিমেডিসিন সেবা, কমিউনিটি ক্লিনিকসমূহে টেলিমেডিসিন সেবা এসএমএসের মাধ্যমে অভিযোগ-পরামর্শ জানানোর ব্যবস্থা, এসএমএসের মাধ্যমে প্রসূতি পরামর্শ, এসএমএসের মাধ্যমে স্বাস্থ্য পরিসংখ্যান, হাসপাতাল অটোমেশন, তথ্যপ্রযুক্তির সাহায্যে অফিস উপস্থিতি তদারকি, অনলাইন পপুলেশন হেলথ রেজিস্ট্রি, মানবসম্পদ ডাটাবেইজ, অনলাইনে মেডিকেল-ডেন্টাল ভর্তি পরীক্ষা প্রক্রিয়াকরণ, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী তদারকি সফটওয়্যার, সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে বিশাল কমপিউটার নেটওয়ার্ক, স্বাস্থ্য সেবা জিওগ্রাফিক্যাল ইনফরমেশন সিসটেম, অফিসিয়াল কর্মসূচী ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যার, বাংলাদেশের ই-স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত মানদ-সমূহ ও তথ্য-ব্যবস্থাসমূহের মধ্যে আন্তঃযোগাযোগ কাঠামোর খসড়া, সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে আমাদের অবস্থান ইত্যাদি তথ্য কেন্দ্রীয় অফিসসহ দেশের সব সাধারণ মানুষ তথ্য সংগ্রহ ও সেবাসমূহ গ্রহণ করতে পারবেন।
×