ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দেশী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বেশি দরে বিদ্যুত কেনা হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১৯ জুলাই ২০১৮

দেশী উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বেশি দরে বিদ্যুত কেনা হচ্ছে

রশিদ মামুন ॥ দেশী বেসরকারী উদ্যোক্তাদের তুলনায় কম দামে বিদ্যুত আমদানি করা সম্ভব। গত দুই অর্থবছরের আমদানি এবং দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে বিদ্যুত ক্রয়ের তথ্য বলছে দেশীয় উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি দরে বিদ্যুত কেনা হচ্ছে। বাংলাদেশ বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ডের বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ভারত থেকে আমদানি করা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দর পড়েছে ৫ দশমিক ০৪ টাকা। পরবর্তী বছর এই দরের পরিমাণ কিছুটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ৫২ টাকা। সরকার গত অর্থবছরে ভারতের এনভিভিএন লিমিটেডের কাছ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কিনেছে প্রতি ইউনিট ৩ দশমিক ৭৯ টাকায়। পিটিসি ইন্ডিয়ার কাছ থেকে ২৫০ মেগাওয়াট কিনেছে ৬ টাকা ৮১ পয়সা এবং ৪০ মেগাওয়াট কিনেছে ৫ দশমিক ১২ টাকায়। ভেড়ামারা দিয়ে এই বিদ্যুত আমদানি করা হয়। মোট ৫০০ মেগাওয়াটের মধ্যে সঞ্চালন ক্ষতি পোষাতে ৪০ মেগাওয়াট অতিরিক্ত কেনা হয়। এছাড়া ত্রিপুরা থেকে এনভিভিএন-এর কাছ থেকে বিদ্যুত কেনা হয় ৬ দশমিক ৮০ টাকায়। এই বিদ্যুতের গড় দাম পড়ছে ৫ দশমিক ৫২ টাকা। অন্যদিকে দেশীয় ফার্নেস অয়েল ভিত্তিক আইপিপি বিদ্যুত কেন্দ্রের কাছ থেকে গত দুই অর্থবছরে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৬৭ টাকা এবং ১১ দশমিক ২৩ টাকায় বিদ্যুত কিনেছে। একই জ্বালানিতে দেশের ভাড়ায় চালিত এবং দ্রুত ভাড়া ভিত্তিক বিদ্যুতের দাম পড়ছে প্রতি ইউনিট যথাক্রমে ১০ টাকা এবং ৯ দশমিক ৬৪ টাকা। তবে ডিজেল চালিত বিদ্যুতের দামের থেকে অনেক বেশি। ডিজেল চালিত একই ধরনের বিদ্যুত কেন্দ্রে দর পড়ছে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২৬ দশমিক ৫৭ টাকা এবং ২০১৬-১৭ সালে দাম আরও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ২৭ টাকা। যদিও দেশীয় গ্যাসের সহজলভ্যতার কারণে গ্যাস চালিত ভাড়া বিদ্যুত কেন্দ্রের বিদ্যুতের দাম পড়ছে ২০১৫-১৬ সালে ৩ দশমিক ৩৮ টাকা এবং ২০১৬-১৭ সালে ৩ দশমকি ৭৫ টাকা। গড় বিদ্যুতের দামও আমদানি করা বিদ্যুতের দামের তুলনায় বেশি। সরকার বেসরকারী ভাড়া ও দ্রুত ভাড়ায় চালিত বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৬ দশমিক ৯২ টাকায় এবং ২০১৬-১৭ সালে ৭ দশমিক ৩৬ টাকায় প্রতি ইউনিট বিদ্যুত কিনেছে। সরকারের মহাপরিকল্পনা বলছে পাওয়ার সিস্টেম মাস্টার প্ল্যান অনুযায়ী ২০৪০ সাল পর্যন্ত সময়ে প্রতিবেশী দেশ থেকে পাঁচ থেকে ছয় হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করা হবে। জোর প্রচেষ্টা চলছে ভারতের পাশাপাশি নেপাল এবং ভুটান থেকে জল বিদ্যুত আমদানির। জল বিদ্যুত আমদানি করা সম্ভব হলে এই বিদ্যুতের মূল্য প্রতি ইউনিট এক টাকারও কম পড়ার কথা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে প্রতিবেশী দেশে জল বিদ্যুত উৎপাদনে বিদ্যুত বিভাগের এক বিলিয়ন ডলার বা আট হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব অনুমোদন করেছেন। কিন্তু গোল বেঁধেছে ভারতীয় শর্তের কারণে দুই দেশ থেকে বিদ্যুত আমদানি করতে হলে ভারতের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। দেশটির নতুন এক নীতিমালায় বলা হয়েছে তাদের দেশের ভূখ- ব্যবহার করে বিদ্যুত আমাদানির ক্ষেত্রে অবশ্যই ভারতের কোন সরকারী বা বেসরকারী কোম্পানির ওই কেন্দ্রে অংশীদারিত্ব থাকতে হবে। এক্ষেত্রে নেপাল এবং ভুটানে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগ সম্ভব নয়। ভারতকে সঙ্গে নিয়েই প্রতিবেশী দেশে বিনিয়োগ করতে হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আমদানি করা বিদ্যুতের দাম কম হওয়ার মূল কারণ হচ্ছে জ্বালানির ধরন। বাংলাদেশ যে জ্বালানিতে বিদ্যুত উৎপাদন করে তার দর বেশি। অন্যদিকে ভারত জ্বালানি হিসেবে কয়লাকে বেশি প্রাধান্য দেয়। এছাড়া দেশটি জল বিদ্যুত উৎপাদন করে থাকে। ভারতের তেল এবং গ্যাস চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের সংখ্যা খুবই কম। জানতে চাইলে বিদ্যুতের দাম নির্ধারণকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সদস্য মিজানুর রহমান বলেন, তাদের দেশে ওখানে বিদ্যুতের দাম কম হওয়ার কারণেই আমরা আমদানি করছি। তাদের ওখানে দাম বেশি হলে তো আমরা নিজেদের দেশেও উৎপাদন করতে পারতাম। তিনি বলেন, আমাদের জ্বালানির দর বেশি পড়ার কারণে বিদ্যুতের দাম বেশি পড়ছে। পিডিবির বার্ষিক প্রবিবেদন বলছে, দেশে ফার্নেস অয়েল চালিত আইপিপি এবং এসআইপিপি-এর সংখ্যা ১০টি। সরকার ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র দেয়া বন্ধ করে এই ১০টি কোম্পানিকে বিদ্যুত কেন্দ্র করার অনুমোদন দিয়েছে। যদিও ভাড়ায় চালিত বিদ্যুত কেন্দ্রের তুলনায় এখন দেখা যাচ্ছে আইপিপি ভিত্তিক ফার্নেস অয়েল বিদ্যুত কেন্দ্রের উৎপাদন ব্যয় বেশি। যেখানে ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ সালে যথাক্রমে ১০ টাকা এবং ৯ দশমিক ৬৪ টাকায় বিদ্যুত কিনেছে সেখানে আইপিপির দাম পড়েছে যথাক্রমে ১১ দশমিক ৬৭ টাকা এবং ১১ দশমিক ২৩ টাকা। জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, আমাদের উৎপাদিত বিদ্যুতের দাম আমাদের আমদানি করা বিদ্যুতের তুলনায় বেশি। আমাদের এখানে জ্বালানি মিশ্রণ ঠিক না হওয়ার কারণে এই দাম বাড়ছে। ভবিষ্যতে এলএনজি চালিত বিদ্যুত আসলে এই দাম আরও বৃদ্ধি পাবে।
×