ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লিটনের পক্ষে খালেক, বুলবুলের সঙ্গে গয়েশ্বর

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১৯ জুলাই ২০১৮

লিটনের পক্ষে খালেক, বুলবুলের সঙ্গে গয়েশ্বর

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন (রাসিক) নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই জমজমাট হয়ে উঠছে ভোটের প্রচার। সমর্থিত প্রার্থীদের হয়ে ভোটের মাঠে ছুটে আসছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। রাজধানী ছাড়াও উত্তরের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকেও নিজ দলের প্রার্থীদের জন্য ছুটে আসছেন নেতারা। নামছেন ভোটের মাঠে। অংশ নিচ্ছেন সভা-সমাবেশে। ভোট চাইছেন নিজ দলের প্রার্থীদের হয়ে। বেশ কয়েকদিন ধরেই রাজশাহীতে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের হয়ে নগরীতে অবস্থান করছেন কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেন। ভোটের মাঠে নিরলস কাজ করছেন তিনি। সর্বশেষ বুধবার রাজশাহীতে নৌকা প্রতীকের জন্য ছুটে এসেছেন সদ্যনির্বাচিত খুলনা সিটির মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক। তিনি স্থানীয় নেতাকর্র্মীদের সঙ্গে নিয়ে রাজশাহী নগরীর সাহেব বাজার, জিরো পয়েন্ট, রেলওয়ে স্টেশন ছাড়াও বিভিন্ন দফতরে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি রাজশাহীর উন্নয়নে নৌকার পক্ষে ভোট দেয়ার আহ্বান জানান। এছাড়া বুধবার রাজশাহী নগরীর ইমামদের সঙ্গে মতবিনিময় করে নির্বাহী সদস্য এসএম কামাল হোসেন। এদিকে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষেও মাঠে নেমেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। বুধবার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় নগরীর বিনোদপুর এলাকায় ধানের শীষের পক্ষে গণসংযোগ করেন। এর আগে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার বুলবুলের পক্ষে রাজশাহীতে ভোট কামনা করেন। পাশাপাশি জেলা ও উপজেলার নেতারাও নেমেছেন দলীয় প্রার্থীদের হয়ে। এক্ষেত্রে লিটনের পক্ষে নেমেছেন উত্তরের সব নেতারা। সমানে ভোটের মাঠে থেকে তারা নৌকার জন্য ভোট চাইছেন। সাবেক মন্ত্রী অধ্যাপিকা জিন্নাতুননেসা তালুকদারও মাঠে রয়েছেন লিটনের নৌকার পক্ষে। নিজেদের প্রার্থীদের জয়ের জন্য সর্বশক্তি দিয়ে মাঠে নেমেছেন তারা। পাশাপাশি জনগণের সামনে তুলে ধরছেন। ইসির সামনে বুলবুলের গোমর ফাঁস করলেন লিটন ॥ নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনরের সঙ্গে আসন্ন রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রার্থীদের মতবিনিময় সভা বুধবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন, নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) শাহাদত হোসেন চৌধুরী। রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার নুর-উর রহমানের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ। রাজশাহী জেলা প্রশাসক এসএম আব্দুল কাদেরের সঞ্চালনায় আরএমপির পুলিশ কমিশনার, জেলা পুলিশ সুপার, র‌্যাব-৫ এর প্রধান ও বিজিবি রাজশাহীর প্রধান উপস্থিত ছিলেন। এ সভায় বুলবুলের গোমর ফাঁস করলেন লিটন। সভায় প্রধান দুই দলের মেয়র প্রার্থী একে অপরের অভিযোগ এনে বক্তব্য দিয়েছেন। বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল প্রায় ১০ মিনিট বক্তব্য দেন। তার বক্তব্যে লিটনের প্রচার নিয়ে বিশোদাগার করেন। পরে আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন বক্তব্য দেন। এ সময় লিটন বলেন, বিএনপি জিতলেই ভোট আনন্দমুখর হয়, আর পরাজিত হলেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। রাজশাহীতে এবার নৌকার গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এর কারণ বুলবুল নগরবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা ও প্রত্যাশা পূরণে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। তিনি নির্বাচন উপলক্ষে নগরীতে অতিরিক্ত পোস্টার-ব্যানার প্রসঙ্গে বলেন, আমার নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যানার-পোস্টারের বাইরে দলের স্থানীয় নেতাকর্মীরা উৎসাহিত হয়ে স্ব উদ্যোগে ব্যানার-পোস্টার লাগাতে পারে। আমি তাদের মানা করতে পারি না। ‘রাজশাহী সিটি নির্বাচনে কালো টাকার আশ্রয়ে পোস্টারিং করে নগরী ছেয়ে ফেলা হয়েছে’ বুলবুলের করা এমন অভিযোগে প্রেক্ষিতে লিটন বলেন, কালো টাকা কাদের কাছে আছে, কারা কালো টাকা দিয়ে জ্বালাও পোড়াও করেছিল, মানুষ পুড়িয়েছিল এবং কারা হাজার হাজার কোটি কালো টাকার ব্যবহার করে দেশের রাজনীতিকে ভিন্ন দিকে প্রবাহিত করতে চেয়েছিল, অবৈধপন্থায় সরকারের পতন ঘটাতে চেয়েছিল তা নগরবাসী জানে। রাজশাহীর মানুষ এত বোকা নয়। আবারও ওই কালো টাকা গত দুইদিন আগে বিনিময় হয়েছে বলে রাজশাহীতে একটি জোর প্রচার রয়েছে। লিটন রাজশাহীকে শান্তির নগরী উল্লেখ করে বলেন, রাজশাহীতে নির্বাচনকে ঘিরে কখনই অস্থিতিশীল কিছু ঘটেনি। তবে গত দিন বিএনপির নির্বাচনী প্রচারে যে বোমাবাজি হয়েছে তা দুশ্চিন্তার বিষয়। এ বিষয়ে জড়িতদের শাস্তির আওতায় আনা উচিত। এ সময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, সংখ্যালঘু ভোটারদের যেন ভয়-ভীতি দেখানো না হয়। গেল নির্বাচনে সংখ্যালঘু ভোটরদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে ভোট কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া হয়েছে। এটি যেন এবার না হয় সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশন ও স্থানীয় প্রশাসনকে লক্ষ্য রাখার আহ্বান জানান তিনি। লিটনের বিরুদ্ধে জামায়াতের অপপ্রচার, ৫ নারীকর্মী আটক ॥ রাসিক নির্বাচন নিয়ে এবার আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে নেমেছে জামায়াত। কৌশলে তারা নারীকর্মীদের মাঠে নামিয়েছে। অপপ্রচারের অভিযোগে রাজশাহীতে জামায়াতের ৫ নারীকর্মীকে আটক করে পুলিশে দিয়েছে ভোটাররা। নগরীর হড়গ্রাম কোর্ট স্টেশন এলাকায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে আওয়ামী লীগ ও মেয়রপ্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছিল তারা বলে জানিয়েছেন কাশিয়াডাঙ্গা থানার ওসি রবিউল ইসলাম। আটককৃতরা হলো, হড়গ্রাম পূর্বপাড়ার ওয়াশেফ আলীর স্ত্রী আসমা আজিজ (৫২), হড়গ্রাম কলেজপাড়ার শহিদুল ইসলাম পিন্টুর স্ত্রী সেলিনা বেগম (৪০), হড়গ্রাম রানীদিঘী এলাকার এশারুল হকের স্ত্রী মনোয়ারা বেগম (৪৫) ও পূর্ব মোল্লাপাড়ার মশিউর রহমান মিঠুর স্ত্রী ময়না বেগম (২৫)। বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা ॥ রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের গণসংযোগে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে। মহানগরীর বোয়ালিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শামীম হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত পরিচয় ৮ জনের নামে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলাটি দায়ের করেছেন। বুধবার দুপুরে রাজশাহী মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানার ওসি আমান উল্লাহ এই মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তবে বোমা বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত করা যায়নি। অপপ্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান লিটনের ॥ নগরবাসীকে বিএনপি-জামায়াতের অপপ্রচারে কান না দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বুধবার তিনি সকাল থেকে নগরীর নওদাপাড়া, আমচত্বর, কালুর মোড় এলাকায় গণসংযোগকালে এ আহ্বান জানান। বুলবুলের সঙ্গে গয়েশ্বরের গণসংযোগ ॥ বুধবার সকাল থেকে নগরীর ২৯ নম্বর ওয়ার্ড বিনোদপুর এলাকায় গণসংযোগ করেন বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বিএনপি স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। গণসংযোগকালে তিনি ধানের শীষে ভোট প্রার্থনার পাশাপাশি জাতীয় রাজনীতির কথা তুলে ধরেন। গয়েশ্বর বলেন, বোমা মেরে ভয় দেখিয়ে বিএনপির বিজয় কোনভাবেই ছিনিয়ে নিতে পারবে না। আওয়ামী লীগ যদি মনে করে গাজীপুর ও খুলনার মতো রাজশাহীতেও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করাবে তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বসবাস করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। বুলবুলকে ফের বুকে জড়িয়ে ধরলেন লিটন ॥ রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও মহানুভবতা ও সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও মহাজোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী, এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। বুধবার দুপুরে রাজশাহী কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড মিলনায়তনে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সব মেয়র ও সাধারণ ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর প্রার্থীদের অবাক করে দিয়ে প্রতিপক্ষ বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলকে বুকে জড়িয়ে নেন ও কোলাকুলি করেন খায়রুজ্জামান লিটন। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাজশাহী কর্মচারী কল্যাণ বোর্ড মিলনায়তনে আয়োজিত রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন উপলক্ষে প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় নির্বাচন কমিশনার শাহাদত হোসেন চৌধুরী, নির্বাচন কমিশন সচিব, জেলা প্রশাসক ও মহানগর পুলিশ কমিশনারসহ নির্বাচনের সব মেয়র, কাউন্সিলর ও নারী কাউন্সিলর প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সভার শেষের দিকে বিএনপির প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বক্তব্য দেন। বুলবুল তার বক্তব্যে নানান অভিযোগ ও নির্বাচন কমিশানের কাছে তার প্রত্যাশাও তুলে ধরেন। বুলবুলের বক্তব্য দেয়ার পর বক্তব্য দিতে মঞ্চে ওঠেন আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভোটাদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সৃষ্টি হয়েছে। নির্বাচনের শেষ দিন পর্যন্ত এমন পরিবেশ আমরা রাখতে চাই। সাত মিনিটের বক্তব্য শেষ করে মঞ্চের সামনে প্রার্থীদের বসে থাকার নির্ধারিত স্থানে এসে সেখানে বসে থাকা বিএনপির প্রার্থী বুলবুলের সঙ্গে হাত মেলান, বুকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেন খায়রুজ্জামান লিটন। এরপর বুলবুল ও নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলনের মাঝে শোফায় বসে যান খায়রুজ্জামান লিটন। এ সময় বুলবুলের পাশে বসে ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র মিজানুর হমান মিনু। লিটনের এই মহানুভবতা ও সম্প্রীতির দৃশ্য দেখে হাততালি দেন উপস্থিত অন্যান্য মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। পরে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিতে গিয়ে সভার প্রধান অতিথি নির্বাচন কমিশনার শাহাদত হোসেন চৌধুরী, বিশেষ অতিথি নির্বাচন কমিশনারের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ ও রাজশাহী পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটনের প্রশংসা করেন। এ সময় তাঁরা সব প্রার্থীদের নির্বাচন চলাকালীন ও নির্বাচন পরবর্তীও এমন সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সম্প্রীতির সম্পর্ক রাখার আহ্বান জানান। প্রসঙ্গত, এর আগে গত ৬ জুলাই রাজশাহী কলেজ মাঠে এক বেসরকারি টেলিভিশনের নির্বাচনী টকশোতে অংশ নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খায়রুজ্জামান লিটন ও বিএনপির মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল। টকশো শেষে কোন কথা না বলে ঘটনাস্থল ত্যাগ করে বুলবুল চলে যেতে কিছুদূর এগিয়ে গেলে খায়রুজ্জামান লিটন বুলবুলের দিকে এগিয়ে গিয়ে তার সঙ্গে কোলাকুলি করেছিলেন। এ ঘটনায়ও সর্বমহলে প্রসংশিত হয়েছিলেন খায়রুজ্জামান লিটন।
×