ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফারজানা নওরিন

তীব্র হর্নে বধির, গতিতে ধরাশায়ী

প্রকাশিত: ০৪:৪১, ১৯ জুলাই ২০১৮

তীব্র হর্নে বধির, গতিতে ধরাশায়ী

সড়ক পথে চলাচলের অন্যতম প্রাইভেট মাধ্যম হচ্ছে মোটরসাইকেল। দ্রুতগতির এই যানকে বাহন করলে দ্রুতই পৌঁছানো যায় নির্দিষ্ট গন্তব্যে। সুবিধাজনক এই বাহনের সুবিধার জন্য এর ব্যবহার বেড়েছে আগের চেয়ে কয়েক গুণ। কিন্তু এর অসুবিধাও কম নয়। যদিও অধিকাংশ অসুবিধাই ওই বাহনের বাহকেরই তৈরি। প্রথমেই আসে অতি দ্রুতগতিতে মোটরসাইকেল চালানো বাহকের কাছে এটা যেন ময়ূরপঙ্খী। এতে চেপে বসলে তারা যেন রূপকথার রাজপুত্র বনে যায়। এত দ্রুতগতিতে আর এমন এঁকেবেঁকে চলে যে, রাস্তা পার হতে চাওয়া লোকটা বুঝতেই পারে না সে কোন্দিকে যাবে আর রাস্তায় থাকা লোকটা বুঝতেই পারে না কোন্দিকে সরে দাঁড়াবে। তার সঙ্গে নতুন মাত্রা যোগ করে হর্নের তীব্র শব্দ। তাদের (কতিপয় চালক) ধারণা আমরা সবাই বধির। তাই তারা এত জোরে হর্ন বাজায় যাতে আমরা বধির না হলেও খুব দ্রুতই যেন তা হয়ে যাই। অবশ্য এটা শুধু মোটরসাইকেল আরোহীরাই নয়, সব বাস চালক সেটা পাবলিক বা প্রাইভেট প্রতিযোগিতায় নামে কে কত জোরে হর্ন বাজাতে পারে। এ ছাড়াও মোটরসাইকেলগুলো পার্ক করা হয় যেখানে সেখানে। ফুটপাথে হাঁটা-চলা করা দুষ্কর হয়ে পড়ে। এমনও দেখা যায়, পার্কিং এরিয়াতে এমন এলোমেলোভাবে এগুলো রাখা হয় তাতে ওখানেই জ্যাম লেগে যায়। অধিকাংশ চালকরাই হেলমেট ব্যবহার করেন না। এক মোটরসাইকেলে ২-৩ জন আরোহীও থাকে। তারা চলাচল করে হাইওয়েতে যেখানে সব সময় থাকে ট্রাফিক পুলিশ, সেই সঙ্গে হাইওয়ে পুলিশ। কিন্তু কোন নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে তারা ছুটে চলে মহাসড়কে, প্রতিনিয়ত ভাঙ্গে ট্রাফিক আইন। আবার আমাদের অধিকাংশ পুলিশ ভাইয়েরাও এক ধাপ এগিয়ে। তারা নিয়ম ভঙ্গকারী চালকদের আটকায় ঠিকই, কিন্তু তৎক্ষণাৎ ১০০-২০০ এমনকি ৫০ টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয়। এদের বেপরোয়া গতির কারণে বাড়ছে সড়ক দুর্ঘটনা। শিকার হতে হচ্ছে প্রাণহানির বা নিদারুণ পঙ্গুত্বের। কিন্তু অনেক হয়েছে। এখন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণের প্রয়োজন। বন্ধ করতে হবে যত্রতত্র পার্কিং, অতিরিক্ত যাত্রী ওঠানো, অতিরিক্ত হর্ন বাজানো এবং এসব ক্ষেত্রে জরিমানার বিধান করতে হবে, শাস্তি দিতে হবে নিয়মভঙ্গকারীকে। হেলমেট ছাড়া গাড়ি চালানো যাবে না। প্রতিযোগিতা করা যাবে না অন্য গাড়ির সঙ্গে। সেই সঙ্গে চালকদের নিজেদের স্বার্থেই হতে হবে সচেতন এবং সঙ্গে সঙ্গে অন্যকেও সচেতন করতে হবে। দুই বছরের ছোট বাচ্চাকে মোটরসাইকেলে নেয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। কারণ একটি দুর্ঘটনা যতটুকু জাতীয় ক্ষতি করবে তার চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতি করে ব্যক্তি বিশেষের। ব্যক্তির সামান্য একটু ভুলের কারণে পুরো পরিবার নিমজ্জিত হতে পারে গভীর অন্ধকারে। আচ্ছা আমরা কি চেষ্টা করতে পারি না যে, মোটরসাইকেল থেকে মোটর শব্দটিকে বাদ দিয়ে শুধু সাইকেল শব্দটাকে নিত্যসঙ্গী করতে? যা কমাবে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ, দুর্ঘটনার তীব্রতা, যানজট এবং সুস্থ রাখবে ব্যক্তিকে তথা পুরো জাতিকে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে
×